×

মুক্তচিন্তা

দুর্ভোগে আছেন পেনশন কর্মচারীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:২২ পিএম

দুর্ভোগে আছেন পেনশন কর্মচারীরা

প্রতীকী ছবি

আগে জানতাম একজন সরকারি কর্মচারী চাকরি জীবন শেষে অবসরকালীন জীবন পেনশন নিয়ে চলতেন। এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সরকার অবসর গ্রহণের পর স্বেচ্ছায় পেনশন সমর্পণের সুযোগ করে দেয়। এই সুযোগে অনেক চাকরিজীবী বুঝে হোক আর না বুঝে হোক অবসর গ্রহণের পর স্বেচ্ছায় পেনশন সমর্পণ করে এককালীন কিছু টাকা নিয়ে চলে আসেন। তখন মাথায় কাজ করছিল ছেলেটার পড়াশোনা এখনো শেষ হয়নি, মেয়েটার বিয়ে দিতে হবে। এদিকে সঞ্চয়ও বেশি কিছু নেই। এসব চিন্তার বেড়াজালে হঠাৎ একদিন নগদ নারায়ণের প্রতি ঝুঁকে পড়ে পেনশন সমর্পণ করে বসেন। এদিকে ওই টাকা ছেলেমেয়ের জন্য খরচ করে তাদের প্রতিষ্ঠিত করে দেন। সেই ছেলেমেয়েরা আজ অনেকে আর এই বৃদ্ধের খবর রাখে না। অবশ্য এ কথাটা যে সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তাও নয়। এদিকে বৃদ্ধ বয়সে নিজেদের চিকিৎসা ব্যয়, প্রাত্যহিক সাংসারিক ব্যয় বৃদ্ধির ফলে অনেকের চোখ চড়কগাছ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে জীবনযাপন করছেন। অনেকে এই এককালীন টাকা পেয়ে ধরে রাখতে পারেননি। অনেকের ছেলে চাকরি না পেয়ে বৃদ্ধ মা-বাবার কাঁধে ঝুলে আছে। আর তখন সবার বেতনও খুব কম ছিল। সেজন্য তারা খুব কম টাকা পেনশন সমর্পণের পর পেয়েছেন। ২০১৫ সালে সরকার বেতন দ্বিগুণ বৃদ্ধি করায় জীবনমান নির্বাহের ব্যয় বৃদ্ধি ঘটে। যা সাধারণের ওপর প্রভাব পড়ে। তদুপরি সামান্য গচ্ছিত সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও কমে গেছে। সমাজ কি এদের খবর রাখে। তারা শুধু মেডিকেলের ২ হাজার ৫০০ টাকা ও দুই ঈদে দুটি বোনাস ও বৈশাখী ভাতা পান মাত্র। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে লোক লজ্জায় অনেকে মুষড়ে গেছেন চারপাশের আলোঝলমল চকচকে লোকেদের ভিড়ে। অথচ সবাই জানে ইনি একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। এরা না নিতে পারেন বয়স্ক ভাতা, না নিতে পারেন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কোনো সাহায্য-সহযোগিতা। লোক লজ্জায় ডুকরে মরে এদের আর্থিক কষ্টের হাহুতাশ।

পরবর্তীতে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী সরকারি চাকরিজীবীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদান নিশ্চিতকরণের জন্য এই জনদরদি শেখ হাসিনা সরকার ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর মাসিক পেনশন পুনঃস্থাপনের নিয়ম করে দেন। তবে অবসরের ১৫ বছর পর এই পেনশন তারা ফেরত পাবেন। ৫৭ বছরে অবসর নেয়ার পর একজন লোকের তখন বয়স দাঁড়ায় ৭৩ বছর সার্টিফিকেট বয়স। অনেকের আসল বয়স তার চেয়েও ২-৩ বছর বেশি থাকে। সে অনুযায়ী বাস্তবে অনেকের বয়স দাঁড়ায় ৭৫-৭৬ বছর। এ বয়সে অনেকে মারা যান। যারা বেঁচে থাকেন তারা হয়তো বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলেন। যেহেতু এই সরকার সব কর্মজীবী লোককে পেনশনের আওতায় আনার মহৎ পরিকল্পনার কথা ভাবছে, তাই এই শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী বর্তমান ৭৮ হাজার ২৯১ জন কর্মকর্তা, কর্মচারীর চরম কষ্ট লাঘবে ১৫ বছরের পরিবর্তে ৮ বছরে পেনশন ফিরিয়ে দিলে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না বলে বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক জনহিতকর কাজ করে চলছেন। বৃদ্ধদের কষ্ট লাঘবে এই মানবিক কাজটি করলে তারা সারা জীবন মনে রাখবেন এবং সামাজিক সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর উজ্জ্বল অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল।

বিষয়টি অর্থমন্ত্রী সদাশয় সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সুরাহা করলে এই বৃদ্ধদের মুখে একটু হাসি ফুটত বলে মনে করি। কারণ এদের সংখ্যা তো দিনে দিনে কমছে।

লেখক : কবি ও সাবেক ব্যাংকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App