×

সারাদেশ

জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে চায় প্রতিবন্ধী অসিম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৪১ পিএম

জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে চায় প্রতিবন্ধী অসিম

অসিম কুমার মজুমদার

ছোটবেলায় পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে দৌঁড়াদৌঁড়ি, খেলাধুলা করে সময় কেটেছে। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ৮ম শ্রেণি পাশের পর ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। অন্য ছেলেদের মতো লেখাপড়া শিখে বড় মানুষ হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বাবা মায়ের অভাবের সংসারে ঠিক মতো চিকিৎসা সেবা পাইনি। অসুস্থতার এক পর্যায়ে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও নিজে অন্যের বোঝা হতে চাই না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে কাজ শিখছি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র মেরামতের। কিন্ত এখন রোদে গেলে মাথায় অসহ্য যন্ত্রনায় প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ি। থেমে যেতে বসেছে আমার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জীবনযুদ্ধ। কথাগুলো বলেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের জয়নগর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবক অসিম কুমার মজুমদার। সে ওই গ্রামের রমানাথ মজুমদারের ছেলে।

অসিম জানায়, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। বড় ভাই অমিত মাঠে কাজ করে। বোন নির্মলার বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটবেলা থেকে আশা ছিল লেখাপড়া শিখে কর্মজীবনে যাব। কিন্ত সেটা আর হয়ে উঠছে না। রোদে গেলেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। অভাব অনাটনের সংসারে পয়সার অভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারছি না। বাবা নিজেও একজন হাঁপানী রোগী। তাই তেমন একটা কাজ করতে পারেন না। এখন বড় ভাই অমিতের রোজগারেই ৬ সদস্যের পরিবারের ভরণ পোষণ চলে।

অসিমের বাবা রমানাথ মজুমদার জানান, তার ছেলে অসিম জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধি। এখন তার বয়স ২৭ বছর। কিন্ত সে অন্য শিশুদের মতো শারীরিক ভাবে বেড়ে উঠেনি। তারপরও ছিল অন্য শিশুদের মত স্বাভাবিক ও দুরন্ত। ৮ম শ্রেণি পাস করার পর সে ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। রোদে গেলেই শুরু হতো মাথা ব্যথা।

তিনি আরও জানান, মাঠে অল্প একটু চাষযোগ্য জমি আছে। এখান থেকে যে ফসল ঘরে আসে তা দিয়ে সংসার চলে না। এমন অনটনের সংসারেও ছেলের চিকিৎসার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করছি। অসিমের অন্যদের মতো শারীরিক যোগ্যতা না থাকলেও সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য চেষ্টা করে। এখন স্থানীয় কোলা বাজারের বিধান শর্মা নামের এক মিস্ত্রির দোকানে কাজ শিখছে। যেদিন একটু বেশি কাজ থাকে সেদিন কিছু পয়সা পায়।

ইলেকট্রনিক্স মিস্ত্রি বিধান শর্মা জানান, অসিম তার দোকানে কাজ শিখছে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রতিদিন আসতে পারে না। তারপরও কাজ শেখার প্রতি তার প্রচন্ড আগ্রহ রয়েছে। মূলকথা টাকার প্রতি তার কোন লোভ নেই। টাকা দিতে গেলেও নিতে চায় না। সে শুধু কাজ শিখতে চায়। অভাব আছে কিন্ত টাকার প্রতি তার লোভ নেই। তারপরও দোকানের কাজ অনুপাতে এখন কিছু টাকা দেয়া হয়।

অসিমের গ্রামের বাসিন্দা স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, অসিম একটা ভদ্র ও অভাবী পরিবারের শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তান। শারীরিক অক্ষমতা থাকলেও সে কখনও বসে থাকে না। নিজের মত করে চলার জন্য সব সময় চেষ্টা করে। কিন্ত এখন শারীরিক অসুস্থতার কারনে জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে পড়ছে ছেলেটি। তবে সে গরীব হলেও এলাকার মধ্যে সততার এক বিরাট দুষ্টান্ত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App