×

মুক্তচিন্তা

আগে সামাজিক প্রতিরোধ দরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৪৬ পিএম

দেশব্যাপী যে হারে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, এ কোন বর্বরতার মধ্যে আমরা বসবাস করছি? ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ২০২০ সালের প্রথম ৮ মাসে মহানগরীর ৫০টি থানায় ৩১৪ নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে মামলা করেছেন। একই সময় ২০১৯ সালে ঢাকা মহানগরীতে ৩৫৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। ঢাকার পাশে শিল্পনগরী সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে এমন ঘটনা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পুলিশের তথ্যের বাইরে যে অসংখ্য ঘটনা রয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৯০ শতাংশের উপরে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশিত হয় না। লোকলজ্জা, পারিবারিক ও সামাজিক লজ্জার কারণে এসব ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। শুধু ধর্ষণ নয়, একই সঙ্গে ধর্ষণ ও হত্যার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে এরই মধ্যে। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না ধর্ষকদের থাবা থেকে। জাতীয়ভাবে বড় প্রতিবাদ না হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন জোরালো ভ‚মিকা দেখা যায় না। সাধারণত দরিদ্র ও দুর্বল ঘরের মেয়েরাই ধর্ষণের শিকার হয়। দীর্ঘমেয়াদে মামলা চালানোর মতো অর্থ ও সময় তাদের পরিবার দিতে পারে না। সামাজিকভাবেও তাদের অবস্থান শক্তিশালী নয়। বিপরীত দিকে অর্থবিত্ত বা সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা বা তাদের মদদপুষ্টরাই ধর্ষণের মতো অপরাধ করে। ফলে এসব ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে, মামলা নিলেও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা করে, অপরাধীদের বাঁচিয়ে প্রতিবেদন দেয় কিংবা অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের দেখতে পায় না। এ রকম অভিযোগ অজস্র। স্বীকার করতেই হবে যে, ধর্ষকরাও আমাদের সমাজেরই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। তাদের বখে যাওয়ার দায় রয়েছে পরিবার-সমাজেরও। তরুণদের সুস্থ-সুন্দর মন ও মূল্যবোধ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ ভ‚মিকা রাখতে পারছে না, এটাও স্পষ্ট। মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গেও এ রকম অপরাধের হার বৃদ্ধির যোগসূত্র আছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ যে মাত্রায় বেড়েছে, লাগাম টেনে না ধরা গেলে তা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নেবে। ধর্ষণ প্রতিরোধে জরুরি অপরাধীর যথার্থ শাস্তি নিশ্চিত করা। দুর্বল ভিকটিমদের পক্ষে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। অপরাধ তদন্তে ও অপরাধীদের বিচারাধীন করায় পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে এগিয়ে আসতে হবে ব্যক্তি-সংগঠনকে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারীদের নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা চাই সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনার অপরাধীদের দ্রæত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App