×

সাময়িকী

ব্লাকলিস্টেড লেখক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৪৩ পিএম

ব্লাকলিস্টেড লেখক

সকাল সকাল কী এক কুলক্ষণে প্যাঁচে পড়লেন- ভেবে পান না অরণ্য আবিদ। গত রাতেই গল্পটি লেখা শেষ করে ঘুমুতে গিয়েছিলেন। সকালে উঠে আরেকবার দেখে পত্রিকা অফিসে পাঠাবেন বলে আলাদা ফোল্ডার করে রেখেছিলেন। এরই মধ্যে হাওয়া! রুমের মধ্যে অন্য কেউও নেই যে ডিলিট করে দেবে। দুই হাজার দুইশ স্কয়ার ফিটের বিশাল এই ফ্ল্যাটে মনুষ্যপ্রাণ বলতে তিনি একাই। আর রয়েছে দুটি টিকটিকি, কয়েকটি তেলাপোকা, কিছু মশা। একটা ইঁদুর তার কক্ষে মাঝে-মধ্যে আসে; আবার চলেও যায়। ইঁদুরটি বেশ সভ্য। আজ অবধি কোনো জামা-কাপড়, কাগজপত্র বা স্ত‚পাকারে সাজিয়ে রাখা কোনো বইয়ে মুখ দেয়নি। দীর্ঘদিনের অব্যবহৃত ডাব সাবানটির পড়ে থাকা অংশ থেকে একটু একটু করে খেয়ে আবার চলে যায় ইঁদুরটি। শুধু ইঁদুরটি কেন? কোনো প্রাণীই আবিদ সাহেবকে বেশি জ¦ালাতন করে না। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। দক্ষিণ কোণের যে কক্ষে আবিদ সাহেব থাকেন ওখানেই প্রাণীগুলোর যাতায়াত। ওদের নিয়েই তো তার সংসার। বাকি সবই হারিয়েছেন। একমাত্র ছেলে লন্ডনে পড়ছে। মাঝে-মধ্যে আলাপ হয় ফোনে। ছেলের খুব বেশি আগ্রহ নেই। নিজেই থাকতে না পেরে মাসে দু’একবার ফোন করেন। বউয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই দীর্ঘদিন। আলাদা থাকেন। মিউচুয়াল সেপারেশন হয়েছে বছর দেড়েক হলো। দুজনই প্রতিষ্ঠিত। দুজনেরই সমাজে আলাদা পরিচিতি আছে। কেউ কারো খবরদারি মানতে নারাজ। বোঝাপড়াটা ঠিকঠাক হচ্ছিল না বলে কিছুদিন দূরে থেকে চেষ্টা করেছেন ফের এক হওয়ার। সম্ভব হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে বেড়েছে দূরত্ব। শেষে দুজনের সিদ্ধান্তে স্থায়ীভাবে আলাদা থাকা। ছেলে বড় হয়েছে। সবই বোঝে। প্রভাব পড়ার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া দেশের বাইরে পড়াশোনা করা ছেলে এসব নিয়ে নিশ্চয় ভাববে না। ওদেশের পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেবে। হয়তো দেশেও আর ফিরবে না। একা থাকা আবিদ সাহেবের অভ্যাস হয়ে গেছে। যখন খুব একাকী লাগে, বই পড়তেও ভালো লাগে না; তখন ওই জীবগুলোর সঙ্গে গল্প করেন। আড্ডা দেন। ওরাও বিভিন্নভাবে সঙ্গ দেয়। ওদের ভাষা বুঝে নেন আবিদ সাহেব। লেখক হতে হলে অনেক কিছুই বুঝতে হয়। ওদের দ্বারা যে তার কোনো ক্ষতি হবে না এও বোঝেন। তাছাড়া ওরা তো চাইলেও ল্যাপটপ ওপেন করে গল্পের ফোল্ডার ডিলিট করতে পারবে না। তাহলে ডিলিট করলো কে? রি-সাইকেল বিনেও নেই। বিভিন্নভাবে সার্চ দিয়েও উদ্ধার করা সম্ভব হলো না গল্পটি। তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকলেন এ ফোল্ডার থেকে ও ফোল্ডার। ডুবুরি যেভাবে গভীর সমুদ্রের তলদেশে মুক্তা খোঁজে। সেভাবেই যত্ন নিয়ে প্রতিটি ফোল্ডারে খুঁজলেন গভীর মনোযোগে। পরক্ষণেই আবার সেতার বাদকের ন্যায় দ্রæত হাত চালালেন ড্রাইভ-ফাইল-ফোল্ডারগুলোয়। ফল একই। কোথাও নেই গল্পটি। এরই মধ্যে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। ঘটনাও ঘটেছে অনেকগুলো। হৃদয়ের পীড়া কমাতে পুড়িয়েছেন রাতে বেঁচে যাওয়া অর্ধেক প্যাকেট বেনসন এন্ড হেজেস। বার কয়েক বিশ্রী সুরে চিৎকার করে চুপ হয়ে গেছে মোবাইল ফোনটি। কোন ফাঁকে অর্ধেক খাওয়া চায়ের কাপটি কাৎ হয়ে পড়ে আছে বিছানার ওপর। সাদা বেডসিডে রক্তের মতো ছোপ ছোপ দাগও পড়ে গেছে এরই মধ্যে। সবথেকে বড় ঘটনাটি ঘটেছে নিজের শরীরের ভেতর। শক্তি কমে ক্লান্তি চেপে ধরেছে। সকাল থেকে চা-সিগারেট ছাড়া তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। একবার মনে হয় কিছু খেয়ে ফের খুঁজবেন। কিন্তু অশান্ত মন সায় দেয় না। হয়তো আরেকটু খুঁজলেই পাওয়া যাবে। এই ভেবে আরো বার কয়েক অভিযান চালান খুঁজে রাখা ফ্লোডারগুলিতে। মনোযোগ আগের তুলনায় অনেক বেশি। জহুরির মতো ধীর-সাবধানে। খুঁজতে খুঁজতে দেখলেন- তার অন্যান্য লেখার ফোল্ডারও নেই। অথবা ফোল্ডার আছে, ফাইল আছে; লেখা নেই। পেইজ সাদা। এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না আবিদ সাহেব। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হয়। মাথার চুল ছিঁড়তে থাকেন। আবার থেমে যান একাই। স্থির হওয়ার চেষ্টা করেন। এত সহজে ভেঙে পড়ার মতো মানুষ তিনি নন। অরণ্য আবিদ এক অনন্য মানুষ। দেশ বিদেশে নাম ডাক আছে। তার লেখা শতাধিক বই প্রকাশ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্মাননাসহ পেয়েছেন অনেক পদক পুরস্কার। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো দৈনিকে তার লেখা প্রকাশ হয়। আজো শীর্ষস্থানীয় একটা দৈনিক পত্রিকায় ‘দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিতে সরকারের সফলতা’ শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশ হয়েছে। টকশোর আমন্ত্রণও থাকে বেশ। সরকারের গুণকীর্তনে তার তুলনা নেই। নতুন কিংবা সরকারের রোশানলে পড়তে যাওয়া অনেক টেলিভিশন চ্যানেল তার পিছু ছাড়ে না। আবিদ সাহেবকে নিয়ে একটা টকশো করাতে পারলেই সরকারের সুনজরে আসতে সুবিধে হয়। মন্ত্রী, আমলা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তার রয়েছে ভীষণ সখ্য। আর্থিক এবং পরিচিতির বিবেচনায় অরণ্য আবিদ এখন প্রভাবশালী লেখক। বেশ সমীহ পান লেখকপাড়ায়। তাকে কেন্দ্র করে আলাদা একটা লেখক বলয় তৈরি হয়েছে এরই মধ্যে। এই পর্যায়ে আসতে তার অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। এমনি এমনি কি আর এতকিছু হয়? একটি লেখা কোনো কাগজে প্রকাশ করতে কত কসরতই না করতে হয়েছে এক সময়। বেছে বেছে সেরা লেখাগুলো পত্রিকা অফিসে পাঠালেও ধরতো না। হয় তো পড়তোই না। অবশ্য এখন যে পড়ে তেমনও মনে হয় না। পত্রিকার সম্পাদকদের শুধু লেখকের নাম পড়লেই হয়। আগে অরণ্য আবিদের লেখা না পড়ে ফেলে দিত, এখন না পড়েই ছেপে দেয়। এখন লেখা চেয়ে লাইন ধরে থাকে পত্রিকাগুলো। এমন একজন লেখক এত সহজে অসহায়ত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারে না- ভাবতে ভাবতে বোতলের মুখ খুলে ঢক ঢক করে গলায় পানি ঢাললেন অরণ্য আবিদ। অগ্রহায়ণ মাসের শীতের মধ্যেও তিরতির করে ঘামছেন।

সাদা টাইলস্য়ের মেঝেতে বসে পড়লেন ধপ করে। বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করলেন দার্শনিক ভঙিতে। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর মনে হলো- সংগ্রহে থাকা পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলো থেকে কিছু উদ্ধার করা সম্ভব। সেদিকে গিয়ে আরো অবাক হলেন। পত্রিকাগুলোর সবই আছে ঠিকঠাক। শুধু তার লেখাগুলো নেই। ওই অংশটুকু পুরোই সাদা। এ দৃশ্যে আর স্থির থাকতে পারেন না। প্রতিটি পত্রিকা খুলে একই অবস্থা দেখেন। এরপর চোখ চলে যায় বইয়ের তাকের যে জায়গাগুলোতে নিজের বইগুলো সাজানো ছিল সেদিকে। সেখানে বইগুলো নেই। কোনো বই যে সেখান থেকে সরানো হয়েছে এমনও নয়। মোটা মোটা বইগুলো সারিবদ্ধভাবে শুয়ে আছে। গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাস, বুদ্ধদেব বসু থেকে শুরু করে সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো রয়েছে। জাফর ইকবাল, নির্মলেন্দু গুণ, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হকের বইগুলোও শোভা পাচ্ছে। শুধু নেই অরণ্য আবিদের বইগুলো। দেখে মনে হয় না এখান থেকে কোনো বই সরানো হয়েছে। তাকগুলোও পূর্ণ। তাহলে বইগুলো গেল কোথায়? অন্য কোনো মলাটে ঢুকে গেল কিনা সেই ভাবনা থেকে প্রত্যকটি বই খুলে খুলে দেখতে থাকেন। কোথাও মেলে না নিজের লেখা একটি বাক্যও। তাৎক্ষণিক অনলাইনে গিয়ে সার্চ দেন নিজের নাম। গুগলেও তার কোনো ডাটা নেই। অনলাইন বইয়ের সবচেয়ে বড় বাজার বইচাইডটকমে ঢুকেও নিজের কোনো বই মেলে না। সার্চ দিলেই লোডিং ইরোর দেখায়। প্রকাশক, পরিচিত বইয়ের দোকান, ঘনিষ্ঠজন সবাইকে ফোন করেন একে একে। নিজের এক কপি বইয়ের জন্য বাদ রাখেন না কাউকে ফোন করতে। কোথাও নেই। মনে পড়ে- গতকালই এক ভক্ত ফোন করে জানিয়েছিলেন- ‘ওষ্ঠের মায়া’ বইটি পড়ে বেশ মুগ্ধ হয়েছেন। খুঁজে খুঁজে তার ফোন নম্বরও বের করা হয়। ফোন করে নিজের পরিচয় দিতেই ওপাশ থেকে আনন্দে যেন নেচে ওঠে। প্রিয় লেখকের জন্য সবই করতে প্রস্তুত জানিয়ে দেন ওই পাঠক। বইটির কথা জিজ্ঞাসা করতে বললেন- খাটের ওপরই রাখা আছে। রাতে পড়া শেষ করে আর সেলফে তোলা হয়নি। লাইনে থাকুন; এখনই দেখছি বলে শয়নকক্ষে যান ওই নারী পাঠক। কিন্তু খাটের ওপর বইটি নেই। খুঁজতে থাকেন এদিক-ওদিক। লেখককে ফোনে রেখেই খুঁজতে থাকেন। কোথাও নেই। অবাক হন। কিছুটা লজ্জিতও হন। আবিদ সাহেবও বুঝতে পারেন। জিজ্ঞাসা করেন- আমার আর কোনো বই কি আছে আপনার সংরক্ষণে? -হ্যাঁ, নিশ্চয়। আমি আপনার প্রতিটি বই-ই যতে্ন সংরক্ষণ করি। এ বইটা যে কী হলো! -ওকে। কোনো সমস্যা নেই। আপনি দেখুন তো আর দু’একটা বই পাওয়া যায় কি না? -দেখছি। বলেই কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে যায় ওপ্রান্ত থেকে। এপাশ থেকে বোঝা যায়- ওপাশে খোঁজাখুঁজি চলছে। বেশ কিছুক্ষণ কেটে যায়। এরপর আর কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। এপাশ থেকে ডেকেও সাড়া পাওয়া যায় না। এক পর্যায়ে ফোন কলটি কেটে যায়। এপাশ থেকে ফের কল করলেও ধরে না। এরপর থেকে শুধুই ব্যস্ত দেখায়। অর্থাৎ বøাকলিস্টেড! খানিক আগেও যেই পাঠক প্রিয় লেখকের কণ্ঠে আপ্লুত হলেন, এখনই তিনি নম্বর ব্ল্যাকলিস্টে দিতে পারলেন! কেন দিবেন না? যে লেখকের কোনো বই কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না; তার আবার কিসের পাঠক? কিসের ভক্ত? ওই পাঠক তো অরণ্য আবিদের লেখার ভক্ত ছিলেন। যখন লেখাই নেই কোথাও; তখন আর ভক্ত থাকবেন কিভাবে? তাহলে খানিক বাদে যখন সবাই জানবে অরণ্য আবিদের কোনো সৃষ্টিকর্ম আর পৃথিবীতে নেই; তখন এভাবেই মুখ ফিরিয়ে নিবেন? বø্যাকলিস্টে ফেলে রাখবেন? সমাজ, রাষ্ট্র, সংগঠন; সবখানেই ব্ল্যাকলিস্টেড থাকবেন তিনি? এমন নানা ভাবনা তেড়ে আসে বুনো ষাড়ের মতো দল বেঁধে। এমন হওয়ার কারণও বুঝতে পারেন না। কোথাও একটি বাক্যও অবশিষ্ট নেই? যেন কোনোদিনই কিছু লেখেননি অরণ্য আবিদ। তার কোনো সৃষ্টি নেই। কোনো সম্বল নেই। সব শূন্য। চারদিকটা শূন্যে হাহাকার করে। হঠাৎ শোরগোলের শব্দ ভেসে আসে। ক্রমেই তীব্র হতে থাকে শব্দগুলো। স্পষ্টও হয় খানিকটা। কী সব দাবিতে ¯েøাগান দিচ্ছে কিছু নারী কণ্ঠ। আবিদ সাহেবের মনোযোগ চলে যায় সেদিকে। দেশে এমন উত্তাল আন্দোলন তো এখন হয় না! মাঝে-মধ্যে দু’চারটা সংগঠন বা গোষ্ঠীর কিছু দাবি দাওয়ার কথা পত্রিকার পাতায় এবং যাতায়াতের সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চোখে পড়ে। সেগুলোও হয় শান্তিপ্রিয় আন্দোলন। অধিকাংশের ব্যানারেই দাবির পাশে থাকে সরকারের প্রশংসা। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। এমন শান্তির দেশই তো সবার চাওয়া ছিল। এর মধ্যে আবার এই উত্তপ্ত আন্দোলন কারা ডাকলো? ভেবে পান না আবিদ সাহেব। তাও আবার সব নারী! মনোযোগ না যেয়ে উপায় কী? কৌত‚হল থেকেই বেলকনি দিয়ে নিচে তাকান তিনি। তাকিয়ে যা দেখেন তাতে আর স্থির থাকা যায় না। আজ হচ্ছেটা কী? একের পর এক উল্টা-পাল্টা ঘটনা ঘটেই চলছে। নিচে যা দেখেছেন তাতে কারোই স্থির থাকার কথা নয়। যে কেউ-ই মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন। তিনিও যেতেন; যদি বেলকনিটা গ্রিলে আটকা না থাকতো। কোনোমতে গ্রিল ধরে নিজেকে মানিয়ে নেন। নিজের সমস্ত লেখা গায়েব হওয়ার ঘটনার চেয়েও বেশি অবাক করে এটি। একদল বিবস্ত্র নারী প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে রাজপথে নেমে গেছে মিছিলে? সভ্য দেশে এও সম্ভব? অবিশ্বাস থেকে ফের তাকায়। না- ঠিকই আছে। সবাই বিবস্ত্র। এবার আরো স্পষ্ট দেখা যায়। আরো কাছে এসেছে। দেখতে দেখতে তারই ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকে। এ ভবনের কোথায় যাবে নারীগুলো? কিছুই মাথায় খেলে না। মুহূর্তেই আবিষ্কার করেন- নারীগুলো তার সামনে দাঁড়ানো। কারো যোনী বেয়ে পড়ছে রক্ত। ঠোঁট কেটে ঝুলে রয়েছে কারো। কারো নাকে-মুখে আঁচড়ের দাগ। ফ্ল্যাটের দরজা কিভাবে খুললো? নাকি খোলাই ছিল; এসব ভাবার সময় পান না। এ ঘটনায় ভীতু না হয়ে উপায় থাকে না। ভয়ে আঁতকে ওঠেন আবিদ সাহেব। তার সামনে দাঁড়ানো সবাইকে চিনতে পারেন একে একে। সবাই যে আলোচিত! কুমিল্লার তনু, সোনাগাজীর নুসরাত, টাঙ্গাইলের রূপা, সুবর্ণচরে ধর্ষণের শিকার হওয়া সেই গৃহবধূ; সবাই আছেন। পাবর্তীপুরের শিশু মেয়ে পূজাও আছে এর মধ্যে! এরা একত্রিত হলো কিভাবে? কোথায় পেল এত শক্তি? ভাবনার মধ্যেই ধপ করে আবিদ সাহেবের পলোশার্টের কলারটা টেনে ধরে রূপা। বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিশেষ সুবিধা নিয়ে দেশের জন্য কী করেছেন তার জবাব চায়। এতগুলো ধর্ষণ, খুন, গুমের প্রতিবাদে একটি বাক্যও কেন লেখেননি? কেন কথা বলেননি? জবাব চায় ওরা। তাহলে এত এত লেখার, টকশোর মূল্য কী? সমস্বরে এসব প্রশ্ন করে যায় রূপারা। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেয়, এসব অচ্ছ্যুত লেখা- যা দেশ ও মানুষের কাজে আসবে না; সেসব পৃথিবী থেকে তুলে নিতেই এসেছে তারা। করা হয়েছে লেখক, বুদ্ধিজীবীদের কালো তালিকা। এরই অংশ হিসেবে অরণ্য আবিদের লেখাগুলো তুলে নেয়া হয়েছে। কথাগুলো জানিয়ে রূপার হাত ধরে টেনে নেয় নুসরাত। কোনোমতে প্রাণে বেঁচে হাঁপিয়ে ওঠেন অরণ্য আবিদ। এরই মধ্যে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে বিদেশি মদের বোতলে রাখা পানি গলায় ঢেলে দেন পুরোটা। কিছুটা স্থির হয়ে ল্যাপটবটা ওপেন করে লিখতে থাকেন- আমার স্বাধীন দেশে আর একটিও ধর্ষণ নয়...

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App