×

মুক্তচিন্তা

করোনা বিস্তার রোধ চ্যালেঞ্জ বটে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৫৬ পিএম

কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের সঙ্গে মানুষের আপ্রাণ যুদ্ধের প্রায় ৯ মাস অতিবাহিত হলো। নভেম্বরের দিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও ডিসেম্বরে শীতের শুরুতে গোটা বিশ্বে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাড়তে শুরু করে আক্রান্তের সংখ্যা। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে প্রাণহানিও। করোনা সংক্রমণে বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুও সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখের ওপরে এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৭ হাজারের গণ্ডি। বিশ্বে সংক্রমণ ১৬ কোটির ঊর্ধ্বে এবং মৃত্যু ১৭ লাখের কাছাকাছি।

কোভিড-১৯ শ্বাসতন্ত্রের রোগ। স্বাভাবিক কারণেই শীত মৌসুমে এর বিস্তারের জন্য পরিবেশ অনুক‚লে থাকে। শীতে সাধারণত সর্দিকাশি, ঠাণ্ডাজনিত জ্বর, নিমোনিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। শীতপ্রধান দেশে জলীয়বাষ্প যেভাবে হ্রাস পায় আমাদের দেশে সেভাবে ঘটে না বলে করোনা সংক্রমণের সেভাবে বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা। শিশু ও বয়স্কদের শীতকালে এমনিতেই সর্দিকাশি, জ্বর হয়। করোনার সংক্রমণ এই সুযোগে মানবদেহে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। গেল শীতের শেষদিকে মার্চেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল এই ভাইরাস। বেশি তাপে করোনা বেঁচে থাকতে পারে না এমন ধারণা থেকে মনে হয়েছিল। জানা যায়, ৭০ ডিগ্রি সেলাসিয়াস তাপমাত্রার নিচে করোনা মারা যায় না। ওই তাপমাত্রায় কি মানুষসহ অন্যসব প্রাণীরও বেঁচে থাকা সম্ভব? করোনা নিয়ে বর্তমান গবেষণা বলছে, করোনা ভাইরাস বহনকারী মানুষের মধ্যে ৭৮ শতাংশেরই কোনো লক্ষণ থাকে না। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তিনি কোভিড ১৯-এর শিকার। অথচ এমন ব্যক্তি নিজের অজান্তেই একে অন্যকে ছড়িয়ে দেয় করোনার জীবাণু। ভয়াবহ এমন পরিস্থিতিকে করোনার বিস্তার রোধ সত্যি এক চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে এখনো শতকরা ১০ ভাগের মতো মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি রয়েছে বলে ধরা হয়। এই হার ৭০ বা তার ঊর্ধ্বে পৌঁছে হার্ড ইমিউনিটিতে পৌঁছতে বলাবাহুল্য অনেক সময়ের প্রয়োজন।

করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় ইতোপূর্বে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা কিছু কিছু হাসপাতাল বন্ধ রেখেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেসব হাসপাতালে আবার করোনা রোগীর সেবায় দ্রুত চালু করা অত্যাবশ্যক। সঙ্গে হাসপাতালে বাড়াতে হবে আইসিইউর সংখ্যা। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সহজলভ্য করতে হবে। প্রয়োজনে রোগীরা যাতে সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা পান সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসক এবং করোনা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে পিছ পা হলে চলবে না। করোনা প্রতিরোধে শুধু টিকা গ্রহণই শেষ কথা নয়। ইতোপূর্বে যে কোনো রোগের প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কারের পর মানবদেহে সফল প্রয়োগ করতে ৮ থেকে ১০ বছর লেগে গেছে। অথচ বছর না যেতেই তাড়াহুড়া করে করোনার টিকা বাজারজাত করা হয়েছে। জানা যায়, এসব টিকার প্রতিরোধ সক্ষমতা শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ হতে পারে। কাজেই টিকা নেয়ার পরও কিছুটা হলেও সংক্রমণের ঝুঁকি তো থেকেই যাচ্ছে। টিকা গ্রহণের পর রোগ প্রতিরোধের স্থায়িত্ব কতদিন থাকরে তাও নিশ্চিত করে জানা যায়নি আজো। টিকার দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারেও নিশ্চিত হওয়ার তো সময়ই দেয়া যায়নি।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে শ্রেষ্ঠতম উপায় স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলা। মানুষকে ঘরেও সাবধানে থাকতে হবে। ভিটামিন-ডি পেতে গায়ে রোদ লাগাতে হবে। খেতে হবে সহজলভ্য সুষম খাদ্য। সামাজিক দূরত্ব মেনে বাইরের জরুরি কাজগুলো দ্রুত সমাধা করে ঘরে ফিরতে হবে। মাস্ক, মাস্ক এবং সঠিক নিয়মে মাস্ক পরে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করাই কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ থেকে নিজেকে এবং অন্যকে মুক্ত রাখার উৎকৃষ্ট উপায়।

লেখক, মালিবাগ, ঢাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App