×

মুক্তচিন্তা

ভাইরাল হওয়ার সংস্কৃতি সামাজিকমাধ্যম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৩৬ পিএম

ভাইরাল হওয়ার সংস্কৃতি সামাজিকমাধ্যম

গত ৭-৮ বছর আগেও ‘ভাইরাল’ (ঠরৎধষ) শব্দটির সঙ্গে আমরা খুব একটা পরিচিত ছিলাম না। হঠাৎ কয়েক বছরের ব্যবধানে এই শব্দটি মানুষের কাছে যেন খুব সহজ ও জনপ্রিয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত এটি কোনো মৌলিক শব্দ নয়। যার উৎপত্তি হয়েছে ‘ভাইরাস’ নামক শব্দটি থেকে। ‘ভাইরাস’-এর বিশেষণ হিসেবে শব্দটি ‘ভাইরাল’ এ রূপান্তরিত হয়েছে। এর অর্থ হলো জীবাণুযুক্ত, বিষাক্ত, বিষপূর্ণ, দূষিত ইত্যাদি। তবে এটি শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে ভাবার্থগত দিক থেকে জীবাণুর মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়া হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। ‘ভাইরাল’ শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার টিকটক, লাইকি, ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেই বেশি দেখা যায়। কারো কোনো তথ্য, লেখা, ছবি, ভিডিও অথবা যে কোনো কিছুই সামাজিক মাধ্যমে বা যে কোনোভাবে সমাজে ছড়িয়ে পড়লে, সেটিকে আমরা ভাইরাল হিসেবে অভিহিত করে থাকি। আমাদের সমাজের অনেক মানুষই, বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের বড় একটা অংশই এই ভাইরাল হওয়ার সংগ্রামে নিমজ্জিত। এদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছেন যারা তাদের চুলের কাটিং, পোশাকের ভিন্নতা, কথা বলার ধরনসহ বিভিন্ন রকম অনন্য সব অঙ্গভঙ্গিতে লেখা, ছবি, অডিও ও বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে ভাইরাল হতে চায়। কেউ কেউ অশ্লীলতাকেও বেছে নেয় এ কাজে। এই ভাইরাল হওয়ার জন্য অনেকেই নিজের জীবন, পরিবার, সমাজ এমনকি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আশঙ্কাও যেন করছে না। ভালো হোক, মন্দ হোক তারা যেন তাদের পথেই অবিচল। আবার বিনোদন কিংবা মজার ছলে এবং কৌত‚হল বা বিভিন্ন কারণবশত ইদানীং আমাদের মতো সাধারণ মানুষও অনেক বেশি পরিমাণে তাদের করা ওইসব কন্টেন্ট দেখছে বা গ্রহণ করছে। এজন্য তারা এদিকে আরো বেশি উৎসুক হয়ে পড়ছে। কারণ তাদের কোনো ভিডিওর যখন ভিউয়ার, লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলোয়ারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তখন তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ ও রাতারাতি সেলিব্রিটি বনে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে থাকে। একেই তারা জীবনের পরিপূর্ণ সফলতা হিসেবে দেখতে থাকে এবং পেশা হিসেবে অনেকেই এ ভাইরাল হওয়ার সংগ্রামকেই বেছে নেয়। কে কি বলে সেটি দেখার মতো সময় বা মনোভাব তাদের আর থাকে না। এভাবে একজনের দেখাদেখি অনেকেই এ পথে পা বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। এটি যেন একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হচ্ছে। যদি গভীরভাবে চিন্তা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে যে, যাচ্ছেতাই করে ভাইরাল হওয়ার এই সংস্কৃতি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধীরে ধীরে একগুঁয়ে করে তুলছে, ভিন্ন এক সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে ও অশ্লীলতার পথে পা বাড়াতে সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে, ক্রমেই পড়াশোনা, পরিবার ও সভ্য সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভাইরাল হওয়ার অপ্রীতিকর, অশ্লীল, অকল্যাণকর ও অসামাজিক সব ধরনের লেখা, ছবি, অডিও এবং ভিডিওর কুপ্রভাব থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে এ ধরনের সব কিছুই সরাসরি বর্জন করা উচিত। আগেই বলেছি, এ সমস্যাগুলো সৃষ্টির পেছনে আমরা সাধারণ মানুষও কখনো দায় এড়াতে পারব না। কারণ আমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রশ্রয়ের জন্যই এগুলোর প্রভাব বৃদ্ধি পায়। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে কোনোরকম অপরাধে না জড়িয়ে বা কাউকে অপরাধে সাহায্য না করে বরং তা ব্যবহারে সর্বাত্মক সচেতন হয়ে চলার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা উচিত। পাশাপাশি প্রশাসনকেও এদিকে তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে এবং আইনানুযায়ী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

 শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App