×

মুক্তচিন্তা

কোর্ট ম্যারেজ ও আইনি ভিত্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৩৪ পিএম

কোর্ট ম্যারেজ ও আইনি ভিত্তি

প্রচলিত মতানুসারে, পরিবারের অমতে এবং ভবিষ্যতে উদ্বুদ্ধ বিয়ে সংক্রান্ত সব রকম জটিলতা থেকে নিরসন পেতে গোপনে কোর্টে গিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করার প্রক্রিয়াকে কোর্ট ম্যারেজ বলে। যা মূলত ভিত্তিহীন ভ্রান্ত একটি ধারণা। আর এমন ভ্রান্ত ধারণার ফলেই দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কোর্ট ম্যারেজের সংখ্যা। আর এ কাজে সহায়তা করছেন আমাদের একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী আইনজীবী মহল। যারা কোর্ট ম্যারেজ বিষয়টির প্রকৃত ব্যাখা প্রদান না করেই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে থাকেন। ফলে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে অবৈধ সম্পর্কের হার। আদালত পাড়াতে এ সংক্রান্ত মামলার ভুক্তভোগীর সংখ্যাও কম নয়। কোর্ট ম্যারেজ! যা কেবল লোকমুখে প্রচলিত একটি শব্দ বা জনশ্রæতি। প্রকৃতপক্ষে এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। এমনকি আইনে কোর্ট ম্যারেজ বলে কোনো বিধানও নেই। আইনের পাশাপাশি ধর্মীয় বিধানেও উল্লেখ নেই এ ধরনের বিয়ের কথা। মুসলিম পারিবারিক আইন, হিন্দু আইন, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান আইন অনুসারেও এ বিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ কোর্ট ম্যারেজ প্রকৃত অর্থে কোনো বিয়ে নয়। হলফনামার মাধ্যমে পাত্র-পাত্রির মধ্যে আইন অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে এ মর্মে ঘোষণা দেয়াই হলো কোর্ট ম্যারেজ। তাই একে কেবল একটি বিয়ের ঘোষণামাত্র বলা চলে; যা কখনোই পরিপূর্ণ বিয়ে নয়। আর এ হলফনামাটি ২০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। তবে বৈধ বিয়ের শর্তে হলফনামা কখনো বাধ্যতামূলক শর্ত নয়। পারিবারিক আইন অনুযায়ী প্রাপ্ত বয়স্ক পাত্র-পাত্রীর মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পরই কেবল হলফনামা তৈরি করা উচিত। অন্যথায় এ হলফনামা বা ঘোষণাপত্র কোনো অর্থই বহন করবে না। আইনসিদ্ধ নিবন্ধিত বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী চাইলে হলফনামা করিয়ে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই সাক্ষীর উপস্থিতিতে এবং বিয়ের জন্য আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য শর্তগুলো মেনে হলফনামা প্রণয়ন করতে হবে। আইন অনুযায়ী বিয়ে নিবন্ধিত না হয়ে শুধু কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন শুরু করলে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে। এমনকি স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে কখনো কলহ সৃষ্টি হলে দুজনের কেউই আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রাখবে না। বিবাহ বিচ্ছেদ হলে স্ত্রীর তার ভরণপোষণ ও দেনমোহর আদায়ের অধিকার পাবে না। একই সঙ্গে তাদের থেকে জন্ম নেয়া সন্তানও অবৈধ হবে এবং পিতার সম্পত্তির অধিকার হারাবে। তাছাড়া অনিবন্ধিত বিয়ের বৈধতা প্রমাণ করাও যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। আর নিবন্ধিত বিয়ের ক্ষেত্রে তালাকে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। তাই সন্তানের বৈধতা এবং দাম্পত্য অধিকার রক্ষায় বিয়ে নিবন্ধন অপরিহার্য। তবে কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে হিন্দু বিয়ের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে হিন্দু আইন এবং ধর্মীয় প্রথা মেনে প্রাপ্তবয়স্ক পাত্র-পাত্রীর মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হলেও হিন্দু বিয়ে নিবন্ধন বিষয়টি ঐচ্ছিক করা হয়েছে। তবে মুসলিম বিয়ে ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন অনুযায়ী, প্রতিটি মুসলিম বিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে অবশ্যই সাক্ষীদের উপস্থিতিতে কাজী কাবিননামা সম্পন্ন করবেন। যদিও আইন এবং ধর্মীয় বিধানে কোর্ট ম্যারেজ বলে কোনো শব্দ নেই। কিন্তু কেউ যদি বিয়ে ভেবে নিবন্ধন ছাড়া কেবল হলফনামা করে থাকেন তবে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। সেক্ষেত্রে কাজীর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে হলফনামার সঙ্গে সব তথ্য ও তারিখ মিল রেখে বিয়ে নিবন্ধন করে নিতে পারেন।

হ শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App