×

মুক্তচিন্তা

করোনা ভাইরাসের রূপ পরিবর্তন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৩৯ পিএম

করোনা ভাইরাসের রূপ পরিবর্তন
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ স্ট্রেনটি রূপ বদল করে এর নতুন ধরনের ১টি স্ট্রেন ভিইউয়াই-২০২১১২/০১ পাওয়া গেছে যা কোভিড-১৯ এর চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম। কাজেই ভ্যাকসিনের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনপূর্বক কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন। ভাইরাসের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিবর্তন বা মিউটেশন খুবই স্বাভাবিক। করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে বিশ্বব্যাপী শতাধিক উদ্যোগ চালু রয়েছে, যার মধ্যে ৫৬টি ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ের ট্রায়ালে আছে এবং ফাইজারের (ফাইজার-বায়োএনটেক) বিএনটি১৬২সহ কয়েকটি ভ্যাকসিনের সফল ট্রায়াল শেষে মানবদেহে প্রয়োগ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তবে বেশ কিছু বিষয়ে এসব ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। আদৌ কি ভ্যাকসিনগুলো আমাদের দীর্ঘমেয়াদি বা কোভিড-১৯ এর রূপ বদলের ফলে সৃষ্ট নতুন নতুন স্ট্রেন তথা মিউটেন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারবে? বেশিরভাগ আরএনএ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না এবং করোনা ভাইরাসও একটি আরএনএ ভাইরাস। ভাইরাস নিউক্লিক এসিড সাধারণত আরএনএ অথবা ডিএনএ দ্বারা গঠিত। আরএনএর গাঠনিক স্থায়িত্ব ডিএনএর তুলনায় অনেক কম হওয়ায় সহজেই এর কোনো জিন সিক্যুয়েন্সে হঠাৎ পরিবর্তন আসতে পারে এবং এর ফলে নতুন সিরোটাপের ভাইরাস রূপে আবিভর্‚ত হতে পারে, যাকে বলা হয় এর মিউটেন্ট স্ট্রেন; আর এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় মিউটেশন। আরএনএ ভাইরাস ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে মিউটেশন। জীবন্ত জীব কোষের ভেতর বংশবৃদ্ধির সময় আরএনএ ভাইরাসে মিউটেশন ঘটতে পারে ৩টি পদ্ধতিতে, যার মধ্যে ১টি হচ্ছে ভাইরাস রেপ্লিকেশনের সময় আরএনএ কপি প্রক্রিয়ায় জিনোম সিক্যুয়েন্সের কোনো কোনো জায়গায় মাঝেমধ্যে ভুল হয়ে যায় এবং আরএনএ পলিমারেজ এনজাইমের প্রæফরিডিং কার্যকারিতার অভাবে ভাইরাসটি এ ভুলগুলো সংশোধনে অসমর্থ। অন্যদিকে ডিএনএ ভাইরাসে এ ধরনের প্রæফরিডিং পদ্ধতির মাধ্যমে ভুলগুলো সংশোধন বা ভুল কপিগুলোকে নষ্ট করার ফলে মিউটেন্ট বা নতুন সিরোটাইপ সৃষ্টি হতে পারে না, ফলে কার্যকর ভ্যাকসিনের মাধ্যমে এ ধরনের ভাইরাস রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে, যেমনÑ স্মলপক্স ও প্যাপিলমাভাইরাস। আরএনএ ভাইরাসের মিউটেশন হার ডিএনএ ভাইরাসের চেয়ে বেশি হওয়ায় আরএনএ ভাইরাসের ভ্যাকসিন সাধারণত কার্যকর হয় না। তবে করোনা ভাইরাস আরএনএ ভাইরাস হওয়া সত্তে¡ও এর আরডি-আরপি নামক স্বাধীন একটি প্রæফরিডিং ব্যবস্থা থাকায় অন্যান্য আরএনএ ভাইরাসের মতো মিউটেশনে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সহজে আসার কথা নয় এবং সে কারণেই হয়তো কোভিড-১৯ এর কার্যকরী ভ্যাকসিন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। কাজেই করোনার নতুন মিউটেন্টের এন্টিজেনিক গঠনে তেমন পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন অবশ্যই কাজ করবে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, যদি এ ভাইরাসের মূল (অরিজিন্যাল) স্ট্রেনকে টার্গেট করে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয় এবং এটি শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি করবে তা ওই ভাইরাসের মিউটেন্টকেও নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হবে। কাজেই সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন ধরনের করোনা মিউটেন্ট ভিইউআই-২০২০১২/০১ স্ট্রেনটিও এসব ভ্যাকসিনের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্থাৎ এন্টিবডি সৃষ্টি করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তবে এসব ভ্যাকসিনের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্থাৎ এন্টিবডি কত মাস বা কত বছর পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে তা এখন পর্যন্ত আমাদের অজানা। করোনা ভাইরাস সারসের ক্ষেত্রে শরীরে এন্টিবডি ২-৩ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও একই হতে পারে বা অন্যান্য আরএনএ ভাইরাস ভ্যাকসিনের মতো মাত্র ১ বছর বা আরো কম সময় পর্যন্ত ভ্যাকসিনটি কার্যকর সুরক্ষা দিতে পারে। এজন্য ফাইজারসহ অন্যান্য ভ্যাকসিনের সম্পূর্ণ কার্যকারিতা, সুরক্ষা ও কতদিন সুরক্ষা দেবে তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। উল্লেখ্য, অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনে সৃষ্ট এন্টিবডি (রোগ প্রতিরোধ) হয়তো দীর্ঘ স্থায়ী হবে এবং ভাইরাসটির মিউটেশন ঘটলেও ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার তেমন পরিবর্তন হবে না। কারণ এ ধরনের ভ্যাকসিনের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে মূলত ভাইরাসের সারফেস এন্টিজেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের সারফেস এন্টিজেনে পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটে ততক্ষণ পর্যন্ত ভ্যাকসিন কাজ করবে। কাজেই করোনা ভাইরাসের রূপ পরিবর্তন করলেও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আমাদের কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেবে এবং পৃথিবীর মানুষ এ মহামারি থেকে রেহাই পাবে। হ অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App