×

মুক্তচিন্তা

অস্থির বাজারে স্বস্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৩০ পিএম

অস্থির বাজারে স্বস্তি

গত কয়েক মাসে চালের দামের দিকে লক্ষ করলে গত জানুয়ারি ২০২০-এ মোটা চালের কেজি ছিল ৩২-৩৫ টাকা, মাঝারি চাল ৪০-৪৩ টাকা ও মিনিকেট চাল ছিল ৫৬-৫৮ টাকা। সে চালই গত সেপ্টেম্বরে এসে মোটা চাল হয় ৪০-৪২ টাকা কেজি, মাঝারি চাল ৫২-৫৪ টাকা কেজি ও মিনিকেট চালের দাম তুলনামূলক কম বেড়ে হয় ৫৭-৫৮ টাকা কেজি। ডিসেম্বর মাসের দিকে এসে দেখা যায় সেই মোটা চালের দাম আরো বৃদ্ধি পেয়ে হয় কেজিপ্রতি ৫০-৫২ টাকা, মাঝারি চালের দাম ৫৬-৫৮ টাকা ও মিনিকেটের দাম আগের দামকে হার মানিয়ে হয় ৬৫ টাকা কেজি। চালের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে তেলের দামও। যেখানে জানুয়ারিতে তেল ছিল লিটারপ্রতি ১০০-১০৫ টাকা, মার্চে এসে হয় লিটারপ্রতি ১১০-১১৫ টাকা, জুন থেকে সেপ্টেম্বরে দাম কিছুটা কমলেও নভেম্বরে এসে আবার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যা ডিসেম্বরে এসে হয় লিটারপ্রতি ১২০ টাকা। তা সত্তে¡ও মিলমালিকরা তেলের দাম নাকি আরো বৃদ্ধি করতে চান বলে শোনা যায়। আরো একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি লক্ষ করা যায় আলুর বাজারে। বাংলাদেশের মতো একটি দেশ যেখানে আলুর উৎপাদন এত বেশি সেদেশের মানুষকেই যদি পকেট কাটা মূল্যে আলু কিনে খেতে হয় তবে এ শোক আর প্রকাশের অপেক্ষা রাখে না। ডিএইর একটি হিসাব অনুযায়ী গত ২০১৮-১৯ এ আলুর উৎপাদন ছিল ৯৬.৫৫ লাখ টন এবং ২০১৯-এর জুলাই মাসের একটি হিসাব অনুযায়ী আলুর দাম ছিল ২০-২৫ টাকা কেজি। কিন্তু ২০১৯-২০ এ যেখানে আলুর উৎপাদন বেড়ে ছিল ১০৯ লাখ টন সেখানে ২০২০-এর জুলাই মাসের একটি হিসাব অনুযায়ী আলুর দাম হয় কেজিপ্রতি ৩৫-৪০ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, হিমাগারে রাখা আলুর মৌসুমের কেনা দাম, হিমাগার ভাড়া ও অন্যান্য খরচ মিলে প্রতি কেজি আলুর হিমাগার গেটে দাম পড়ে ১৮ টাকা ৯৯ পয়সা। সে হিসাবে হিমাগার থেকে ২০ টাকা বিক্রিতেই লাভবান করতে পারেন হিমাগার মালিকরা। ফলে হিমাগার পর্যায়ে মুনাফা যোগ করে আলুর দাম ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে মুনাফাসহ ২৫ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে মুনাফাসহ সর্বোচ্চ ৩০ টাকা বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এই দাম বাড়িয়ে হিমাগারে প্রতি কেজি আলু ২৭ টাকা দরে, পাইকারি ৩০ টাকা ও খুচরা কেজিপ্রতি ৩৫ টাকায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অথচ দাম নির্ধারণ করে দেয়া সত্তে¡ও গত নভেম্বরে আলুর দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৪০ টাকা যা ডিসেম্বরে এসে কিছুটা কমলেও ৬০ টাকা কেজি পর্যন্তও ঠেকেছে যা নির্ধারিত দামের চাইতে অনেক বেশি। তাই আলুর বাজারে এরূপ উত্থান-পতনের সুনির্দিষ্ট কারণ কী! আর শুধু চাল-তেল-আলুই না বরং অন্যান্য দ্রব্যাদির দামেও এরূপ উত্থান-পতন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই দেশের মানুষ যদি তাদের আয়সীমার মধ্যে খেয়ে বাঁচতেই না পারে তবে বাহ্যিক উন্নয়ন দিয়ে তারা কতটা লাভবান হবে এটা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। খাদ্য মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি চাহিদা। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারি মানুষের আয়-রোজগারের ওপর যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ফলে শুধু স্বল্প বা মধ্যবিত্ত নয় বরং অনেক উচ্চবিত্তরাও তাদের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এর ওপর যদি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম এরূপ লাগামহীনভাবে ধাবমান হতে থাকে তবে তো দেশের সাধারণ জনগণ খাদ্য মজুদ থাকা সত্তে¡ও দুর্ভিক্ষে ভুগবে পক্ষান্তরে লাভবান হবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী যারা সর্বদা অনৈতিক কাজের সুযোগ সন্ধানী। তাই খাদ্যদ্রব্যের দামের এমন ধাবমান গতির পথে বাধা দেয়ার জন্য সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বাজার তদারকি করা ও আইনের কঠোর প্রয়োগে অসাধু ব্যবসায়ী ও কুচক্রীদের নির্মূল করতে হবে। খাদ্য উৎপাদনে আরো অধিক বিনিয়োগ, উৎপাদন ও মজুদ বাড়াতে হবে। জনগণের আয়সীমার মধ্যে খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

হ শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App