×

জাতীয়

নতুন চ্যালেঞ্জে শ্রমবাজার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৪৪ এএম

নতুন চ্যালেঞ্জে শ্রমবাজার
 

বৈশ্বিক মহামারি করোনো ভাইরাসের কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছে। নতুন শ্রমবাজার তৈরি দূরের কথা পুরানো শ্রমবাজারেও শ্রমিক পাঠানো যাচ্ছে না। ৯ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দুবাইয়ের শ্রমবাজার। ২০১৮ সাল থেকে বন্ধ মালয়েশিয়ার বাজার। সৌদির শ্রমবাজার খোলা থাকলেও করোনার নতুন থাবার কারণে ২১ ডিসেম্বর সোমবার থেকে তারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করেছে। এর ফলে প্রতিটি এজেন্সির সপ্তাহে নতুন পুরানো মিলিয়ে ২০ জন শ্রমিক পাঠানোর যে সুযোগ তৈরি হয়েছিল তা আটকে গেল। তবে কাতারে বছরে দুই হাজার শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ রয়েছে।

করোনার প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কর্মহীন হাজার হাজার শ্রমিক। অনেক শ্রমিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, এমনকি মেয়াদ শেষ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে আরো ৮০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। সরকারি হিসাব মতে, গত ৮ মাসে বেকার হয়ে দেশে ফিরেছে ৩ লাখ ২৬ হাজার শ্রমিক। অথচ ৭ লাখ শ্রমিক বিদেশে পাঠানোর টার্গেট থাকলেও দুই লাখ শ্রমিক পাঠানো গেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ‘নিউ নরমাল’ পরিস্থিতিতে জনশক্তি রপ্তানির বাজার নিয়ে আশার আলো দেখা দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ বিমান চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করায় সে আলো নিভে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, করোনাপরবর্তী আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের পরিবর্তিত চাহিদা অনুযায়ী পুনঃপ্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে ফেরত আসা কর্মীদের পুনরায় বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, বিরূপ পরিস্থিতিতে ঝুঁকি কমানোর জন্য ভবিষ্যতে দক্ষ কর্মী পাঠানোর ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। তিনি মনে করেন, বিদেশফেরত কর্মীরা অভিজ্ঞতার বিবেচনায় দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য।

জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শামসুল আলম ভোরের কাগজকে বলেছেন, আগে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ হাজার লোক বিদেশে যেত। এখন তা কমে ১৬/১৭শ দাঁড়িয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে তা দিন দিন কমছে। অনেক দেশ বিমান চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহামারির এ সময়ে কারো কিছু করার নেই। সবাই অসহায়। তিনি বলেন, গত ৮ মাসে ৩ লাখ ২৬ হাজার লোক দেশে ফিরছে বলা হলেও তারা সবাই এমনিতেই আর যেতে পারবে না। এর মধ্যে ৮/৯ হাজার লোক আবার ওইসব দেশে ফিরে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,

ফিরে আসাদের মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ, অনেকে প্রতারিত হয়ে ফিরেছেন, আবার অনেকে বিদেশে গিয়ে অপরাধ করে সাধারণ ক্ষমায় ফিরেছেন। যারা আর যাওয়ার সুযোগ পাবেন না। নতুন শ্রমবাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া, উজবেকিস্তান ও জর্ডানের ব্যাপারে সরকার আশাবাদী। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এর কাজের অগ্রগতি বুঝা যাবে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী যায় সৌদি আরবে। মোট অভিবাসনের প্রায় ৭৫ ভাগই এই দেশটিতে। ফেরত এলে এই দেশ থেকেই আসার আশঙ্কা বেশি বলে মনে করছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা। তবে যারা নির্দিষ্ট কোম্পানির কাজ করেন তাদের ফেরত পাঠানোর আশঙ্কা কমই দেখছেন তারা। সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ঢাকায় পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ৩ ক্যাটাগরির কর্মী ফেরত পাঠানোর আশঙ্কা রয়েছে। যাদের আকামার মেয়াদ শেষ, যারা তথাকথিত ফ্রি ভিসায় বিভিন্ন পেশায় জড়িত এবং যাদের আকামার মেয়াদ আছে। তবে আকামার মেয়াদ যাদের আছে তাদের সংখ্যা খুব অল্প বলে মনে করছে দূতাবাস।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সূত্রে জানা গেছে, এককভাবে শুধু সৌদি আরবেই আছেন ২০ লাখ বাংলাদেশি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন অন্তত ১৫ লাখ। এছাড়া কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইনে গড়ে তিন থেকে চার লাখ বাংলাদেশি আছেন। করোনা সমস্যার পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম একেবারেই কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে নানা সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়া করোনার কারণে সংকটে আছেন মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে থাকা কর্মীরাও।

জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সূত্রে মতে, করোনা মহামারির শুরুর সময় ইস্যুকৃত ভিসা চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল ৮৫ হাজার ৪০৫টি। এসব ভিসাধারী শ্রমিকের অনেকেই সৌদি আরব, দুবাই, সিঙ্গাপুর, কাতার, কুয়েতসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন। প্রক্রিয়ায় থাকা যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তাদের অনেকেই বিমানের টিকেটও কিনে রেখে ছিলেন। আবার কারো কারো ভিসা হয়েছিল, কিন্তু টিকেট কাটা হয়নি; তাদের সবারই বিদেশে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমনকি দ্রুত করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রবাসী কর্মহীন শ্রমিকদের বাধ্য হয়ে দেশে চলে আসতে হবে এবং যারা বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন তারাও আর যেতে পারবেন না। ফলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার।

বায়রার তথ্য মতে, এরই মধ্যে ২ হাজার ১৮৬টি ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। আরো ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণের ঝুঁকিতে রয়েছে ৮২ হাজার ৫৮৯ জন শ্রমিক। ভিসা স্ট্যাম্পের জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন ৩০ হাজার ৪২২ জন। এছাড়া ভিসা স্ট্যাম্পিং সম্পন্ন হয়েছে ১৯ হাজার ১৯৮ জনের, জনশক্তি ছাড়পত্র পেয়েছে ২২ হাজার ৯৮৭টি। ফ্লাইট বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৭৪ ও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় আরো বাতিল হয়েছে ৬ হাজার ৯০৪টি।

এ বিষয়ে বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, এরই মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে আরো প্রায় ৮২ হাজার। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এসব কর্মীর ভিসা প্রক্রিয়ার যাবতীয় কাজ করতে এজেন্সিগুলোর ১৫ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে।

ইতালির শ্রমবাজার সম্পর্কে একটি সূত্র বলেছে, অনেকে ফ্রান্স ও স্পেনে টুরিস্ট ভিসায় গিয়ে তারা ইতালিতে ঢুকে সেখানে স্থায়ী হয়েছে। বৈধভাবে ইতালি বাংলাদেশ থেকে শ্রমশক্তি নেয় না। তবে ৮ বছর আগে কৃষি শ্রমিক নেয়ার একটি ঘোষণা দিয়েছিল ইতালি। ৮ বছর পর তারা তা কার্যকরের উদ্যোগ নিলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি।

এদিকে ফিরে আসা শ্রমিকদের ক্ষতিপূণ বা প্রণোদনার জন্য ৭শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হলেও বিদেশফেরতরা এ পর্যন্ত মাত্র ১৮ কোটি টাকা পেয়েছে বলে জানা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App