×

মুক্তচিন্তা

মাঠ প্রশাসন দলীয় চাপমুক্ত ও সুরক্ষিত রাখতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০৭ পিএম

আগামী ৫ থেকে ৭ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডিসি সম্মেলন। এটি সারাদেশের ডিসিদের বার্ষিক মিলনমেলা। প্রতি বছরই এমন সম্মেলনে জেলা প্রশাসকরা তাদের সমস্যা-সংকট, দাবি-চাহিদার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী, সরকারের নীতিনির্ধারকরা এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা তাদের কথা শোনেন এবং পরামর্শ ও নির্দেশনা দেন। এবারের সম্মেলন একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকদের বাড়তি দায়িত্ব পড়ছে। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। প্রতি বছর এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেশের ৬৪ জেলার ডিসিদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন তিনি। এবারের সম্মেলনে ডিসিরা প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বাঁধা ছকের বাইরে কাজ করতে গিয়ে যেসব অসুবিধা ও সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন সেসব তুলে ধরবেন বলে গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন আভাস পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে সার্বক্ষণিক যাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পান সে বিষয়েও কথা বলবেন তারা। জেলা সদর ও উপজেলা সদরে অবস্থান করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও) সমগ্র জেলাবাসীর সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন; কারণ এটিই তাদের দায়িত্ব। গত ৩ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে তার ওপর যে মারাত্মক সহিংস আক্রমণ চালানো হয়, তা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। দুর্বৃত্তরা ওয়াহিদা খানমের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপরও চালায় বর্বরোচিত হামলা। মাঠ প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ হলো ইউএনও। এটি এমনই দপ্তর, যেখানে সব সমস্যার সমাধানই মানুষের প্রত্যাশা। কি দুর্যোগ, কি উৎসব, সাধারণ মানুষ তাকিয়ে থাকে প্রশাসন কী করে তার অপেক্ষায়। সেই মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদধারী যদি অরক্ষিত থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? স্বাভাবিক কারণেই প্রশাসনের স্বাধীন ভ‚মিকার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়টি এবার আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে। সাধারণভাবে সব সরকারের সময়ই ডিসিদের যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়, তাহলো ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপ। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ডিসি, এডিসি, ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভ‚মি), উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা এবং উপজেলা প্রকৌশলীরা প্রায়ই মামলা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা না করে আইনি সুরক্ষা দেয়ার দাবি তুলতে পারেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। প্রশাসনের কার্যকর ভ‚মিকা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অবশ্যই রাজনৈতিক চাপ বা প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। আবার অন্যদিকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দলীয় আনুগত্যের আতিশয্যও কিন্তু লক্ষণীয়। এটারও রাশ টানা দরকার। ডিসি সম্মেলনে আমরা বরাবর দেখে আসছি ডিসিরা এখানে এসে নিজেদের দাবি-দাওয়া চাহিদা নিয়েই বেশি সরব থাকেন। আমরা আশা করব এবারের সম্মেলনে দেশের মাঠ প্রশাসনের সার্বিক কর্মকাণ্ডের একটি মূল্যায়ন হবে। দুর্বলতা সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত এবং তা নিরসনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশেষ করে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্নীতি দূর করতে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। সরকার ডিসিদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি পূরণে উদ্যোগী হবে, অনাকাক্সিক্ষত চাপমুক্তভাবে প্রশাসনের কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করবে, অপরদিকে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও সরকারের কর্মসূচি যথাযথ বাস্তবায়নে ও নাগরিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় তৎপর থাকবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App