×

সারাদেশ

‘এইটা লেইখেন না ভাই, আমার সমস্যা হবে'

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৫১ পিএম

‘এইটা লেইখেন না ভাই, আমার সমস্যা হবে'

প্রতীকী ছবি

'সামনে স্ট্রিয়ারিং গাড়ির সাথে দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল, দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা করছিলাম, ঠিক সেই সুযোগে আসামিটা পালিয়ে গেছে। এইটা লেইখেন না ভাই, লিখলে আমার সমস্যা হবে।' হ্যান্ডকাফ ছাড়াই ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসার সময় নিজের হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি সম্পর্কে নাটকীয়ভাবে কথাগুলো বললেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার এসআই জিয়া।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে পালিয়ে যাওয়া ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আব্দুর রাজ্জাককে (৪০) গ্রেপ্তার করা হবে বলে এসআই জিয়া জানালেও রবিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে এ খবর লেখার সময় পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগেরদিন শনিবার বিকেলে দৌলতপুর থানার এসআই জিয়া সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর সামছেরতলা বাজারে অভিযান চালিয়ে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করেন। পরে তার হাতে হ্যান্ডকাফ না পরিয়েই মোটরসাইকেলে করে থানায় নিয়ে আসার পথে বৈরাগীরচর-তারাগুনিয়া সড়কের ফারাকপুর জুবেরিপাড়া এলাকায় তিনি পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যান।

পালিয়ে যাওয়া ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি আব্দুর রাজ্জাক বৈরাগীরচর সামছেরতলা এলাকার লিদিন মণ্ডলের ছেলে। তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীকে মারধর ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সূত্র বলছে, এসআই জিয়া ওয়ারেন্টের আসামি রাজ্জাকের পালানোর নামে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি এখন নিজের গা বাঁচাতে মিথ্যাচার করছেন। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তিনি নিজেই তাকে পালানোর সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। এ কারণে তার হাতে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়নি। পরিকল্পিতভাবেই আসামি রাজ্জাককে ভাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

দৌলতপুর থানার এসআই জিয়া নিজের হেফাজত থেকে আসামি পালানোর বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করলেও আর্থিক লেনদেনের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আসামি আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তারের পর মোটরসাইকেলে করে থানায় আনার পথে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত একটি স্টিয়ারিং গাড়ির মুখোমুখি দুর্ঘটনা ঘটতে গেলে প্রাণ বাঁচাতে আমরা মোটরসাইকেল থামাই। এই সুযোগে মোটরসাইকেলের মাঝে বসা রাজ্জাক লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে রাতভর অভিযান চালিয়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এসআই জিয়া এ ঘটনায় লেখালেখি না করার অনুরোধ জানিয়ে নাটকীয় কথাবার্তা বলেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনার সময় আসামি রাজ্জাককে ধরতে গেলে আমরা পুলিশ সদস্যরা নিশ্চিত স্টিয়ায়ারিং গাড়ির চাকার নিচে চাপা পড়তাম। তবে তার হাতে হ্যান্ডকাফ না পরানোটাই আমার ভুল ছিল।

এসআই জিয়া বলেন, এ নিয়ে লেখালেখি করলে আমার সমস্যা হবে, এসপি স্যার ঝামেলা করবে, লেখার দরকার নেই ভাই। আমি আপনার (প্রতিবেদক) সঙ্গে সরাসরি দেখা করে বিস্তারিত আলাপ করছি। পলাতক রাজ্জাককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হবে বলে এসআই জিয়া জানালেও রবিবার তার ঘোষিত আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে। এখনো তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

দৌলতপুর থানার ওসি (তদন্ত) শাহাদাৎ হোসেন জানান, কিছু ক্ষেত্রে কৌশলগত কারণে কিংবা আসামির পক্ষের পারিবারিক ঝামেলা এড়াতে আসামি ধরার সময় ঘটনাস্থলে হ্যান্ডকাফ পরানো হয় না। তড়িঘড়ি করে গ্রেপ্তার করে আনা হয়। তবে কিছুদূর এগিয়ে আসার পর আসামির হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও সে রকম কিছু হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এসআই জিয়ার গাফিলতি ও অনিয়মের প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App