×

জাতীয়

আবেদ খানের প্রতি সাংবাদিক নেতাদের আহ্বান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:২৮ পিএম

আবেদ খানের প্রতি সাংবাদিক নেতাদের আহ্বান

সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খানের প্রতি তার অবশিষ্ট ভাবমূর্তি রক্ষার আহবান জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। বছরব্যাপী তার মালিকানাধীন এবং তারই সম্পাদিত দৈনিক জাগরণের সাংবাদিকদের বেতন বকেয়া রাখার পরিপ্রেক্ষিতে এই আহবান জানান তারা।

রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচীতে সামিল হয়ে নেতারা এই আহবান জানান। দৈনিক জাগরণে বেতন আটকে থাকা ভূক্তভোগী সাংবাদিকরা এই কর্মসূচি পালন করেন। রবিবার (২০ ডিসেম্বর) এই কর্মসূচী পালন করেন তারা।

মানববন্ধন কর্মসূচীতে সামিল হয়ে একাত্বতা ঘোষণা করে নেতারা বলেন, অনতিবিলম্বে দৈনিক জাগরণের ভূক্তভোগী সাংবাদিক– কর্মকর্তা– কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হোক। অন্যথায় আরও কঠিন কর্মসূচী দেয়া হবে। এমনকি রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পত্রিকাটির স্থানান্তর হতে যাওয়া নতুন দপ্তরের সামনে বা আবেদ খানের বাসভবনের সামনেও কর্মসূচী পালন হতে পারে বলে মানববন্ধন থেকে হুশিঁয়ারি দেয়া হয়। মানববন্ধনে আবেদ খানের আর্থিক অস্বচ্ছতার বিষয় তুলে ধরে নেতারা বলেন, এটা সবাই জানেন যে বছরের পর বছর ধরে তিনি সরকারের কাছ থেকে নানানভাবে আর্থিক নানান সুবিধা নিচ্ছেন। অথচ তার সম্পাদিত ও মালিকানাধীন দৈনিক জাগরণের সাংবাদিকদের বেতন তিনি এক বছর ধরে বকেয়া আটকে রেখেছেন।

মানববন্ধনে সামিল হয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, আবেদ খান এক বছর ধরে তার প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের অভুক্ত রেখেছেন। তার মতো একজন বিজ্ঞ মানুষের কাছ থেকে এটা আশা করিনি। তার মতো সজ্জন মানুষের এটি একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এ সময় তিনি অনতিবিলম্বে সাংবাদিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের আহবান জানান। দৈনিক জাগরণে বেতন বকেয়া পড়ে থাকা ভূক্তভোগী সাংবাদিকদের দূর্দশা লাঘবে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকনেতারা আবেদ খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তিনি ফোন ধরছেন না বলে মানববন্ধনে দেয়া বক্তব্যে উঠে আসে। এই প্রসঙ্গ টেনে ডিআরইউ সভাপতি বলেন, আবেদ খান ভিন গ্রহের মানুষ নন, তিনি মঙ্গল গ্রহের মানুষ নন। আবেদ খানকে ফোন ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।

ভূক্তভোগী সাংবাদিকরা এই বকেয়া বেতন আদায়ে সহযোগীতা চেয়ে ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, প্রেসকাউন্সিল চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গ টেনে ডিআরইউ সভাপতি বলেন, এর ফলাফল আমরা এখনো জানতে পারিনি। ভূক্তভোগী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সভাপতি বলেন, বকেয়া বেতন আদায়ে আপনাদের আন্দোলনের সঙ্গে ডিআরইউ আছে এবং থাকবে।

ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান মানববন্ধনে সামিল হয়ে ভূক্তভোগীদের দাবির সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বেতন বকেয়া থাকা অবস্থায় কোন পত্রিকা সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল পেতে পারে না। অনতিবিলম্বে সাংবাদিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে তিনি আবেদের উদ্দেশ্যে বলেন, অন্যথায় ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। মানববন্ধনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা যে কতটা নিপীড়িত তার উদাহরণ দৈনিক জাগরণের বঞ্চিত সাংবাদিকরা। দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধ না করলে তিনি আরও কঠোর কর্মসূচী প্রত্যাশা করেন।

ডিআরইউর সহসভাপতি ওসমান গণি বাবুল কর্মসূচীতে একাত্বতা ঘোষণা করে আবেদের উদ্দেশে বলেন, আপনি সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা আটকে দিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করবেন, এটা ভালো নয়। বঞ্চিত সাংবাদিকদের সাথে ডিআরইউ আছে এবং থাকবে। বক্তব্যে তিনিও ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচীর আশা প্রকাশ করেন। সাংবাদিকনেতা কুদরত-ই-খোদা বঞ্চিত সাংবাদিকদের সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করে আবেদ খানের উদ্দেশে বলেন, আপনিও রিপোর্টার ছিলেন। আপনার ইমেজের যেন ক্ষতি না হয়, সেটি বিবেচনা করে বকেয়া বেতন– ভাতা পরিশোধ করে দিন। সৎ বুদ্ধির উদয় হোক, এই কামনা করি। ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) নেতা মোরসালিন বাবলা বলেন, সবাই জানেন আবেদ খান সরকার থেকে নানা রকম সুযোগ সুবিধা নেন। সরকারের প্রতি অনুরোধ, সরকারও যেন সাংবাদিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধে আবেদ খানকে চাপ দেয়।

দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র সাংবাদিক মিজান মালিক বলেন, বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে সাংবাদিকরা আপনার বাড়ি ঘেরাও করুক তা চাই না। আপনি আমার শ্রদ্ধার মানুষ। আপনি মানবিক হবেন-আমরা আশাবাদী। সাংবাদিকনেতা মনিরুল আলম বলেন, এমন অনেক মুখোশধারী আছেন, যারা সাংবাদিকদের মেধা, শ্রম-ঘামের মূল্য দিচ্ছেন না। তাদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া উচিৎ। আবেদকে উদ্দেশ করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, ভাবমূর্তি রক্ষা করতে চাইলে সাংবাদিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে। না হয় যেখানে অফিস নেবেন, সেখানে ঘেরাও কর্মসূচী পালন করা হবে। বলেন, আবেদ খান যেখানে অফিস নেবেন সেখানে, এমনকি তার বাসভবন ঘেরাওয়ের মতো কঠিন কর্মসূচী দিলে সমর্থন দেবো।

সাংবাদিকনেতা হরলাল রায় বলেন, অত্যন্ত দু:খের বিষয় আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হয়। আমরা মেধা দেই, শ্রম-ঘাম দেই, পারিশ্রমিক পাই না। দু:খের বিষয়, আবেদ খান নিজেও একজন রিপোর্টার ছিলেন, এখন তিনিই রিপোর্টারদের বেতন ভাতা আটকে রেখেছেন, ধিক্কার জানাই। আবেদ খানের মতো লোকদের বয়কট করা উচিৎ আমাদের। ভূক্তভোগী সাংবাদিক তারেক সালমানের সঞ্চালনায় পালিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ শওকত, বিশ্বজিত দত্ত, ডিআরইউর সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, ডিআরইউ নেতা হালিম মোহাম্মদ, এমএম জসীম, রফিক রাফি, মেহ্দী আজাদ মাসুম, বেনু সুত্রধর, কাশেম হারুন, সোহেলী চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, মাহমুদুল হাসান ও মাহমুদুল আলম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App