×

মুক্তচিন্তা

অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধে রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কেন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:২০ পিএম

বাংলাদেশের রেলপথগুলো কতটা অরক্ষিত এবং এর নিরাপত্তাব্যবস্থা যে কত ঠুনকো, তা?র এক মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত হলো শনিবার জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা। গণমাধ্যমে খবরে প্রকাশ, দায়িত্ব পালনকারী দুই গেটম্যানের কেউই কর্তব্যস্থলে ছিলেন না; রেলক্রসিংটি ছিল খোলা। একটি যাত্রীবাহী বাস খোলা রেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় অন্যদিক থেকে ছুটে আসা একটি এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে ভয়ানক সংঘর্ষে প্রাণ গেছে বাসটির ১২ আরোহীর। কী মর্মান্তিক। এসব প্রাণের দায়ভার কে নেবে? এমন ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই আমাদের দেখতে হচ্ছে লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার ঘটনা। জানা গেছে, জয়পুরহাট ছেড়ে আসা বাঁধন নামের একটি যাত্রীবাহী বাস ২৩ জন যাত্রী নিয়ে হিলি স্থলবন্দরের দিকে যাচ্ছিল। পথে পুরানাপৈল রেলগেট অতিক্রম করার সময় বাসটিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস সজোরে ধাক্কা দেয়। ট্রেনটি রেললাইন ধরে ছ্যাঁচরিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে বাসটিকে নিয়ে যায়। এ সময় ১০ যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন ৬ জন। হাসপাতালে নেয়ার পর আহতদের মধ্যে দুজন মারা যান। এ নিয়ে ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। জয়পুরহাটের মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হচ্ছে বৈধ ও অবৈধ রেলগেট। অবৈধ তো বটেই বৈধগুলোর অনেকটিতেই নেই গেটম্যান। ফলে অরক্ষিত ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে চলেছে। অথচ এগুলো সুরক্ষিত করার কোনো তাগিদ নেই। সারাদেশে মোট ২ হাজার ৮৭৮ কিলোমিটার রেলপথে অবৈধ রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০টি। এই অবৈধ ক্রসিংগুলো পুরোপুরিই অরক্ষিত। এগুলো দিয়ে পারাপার, রেললাইনের ওপর দিয়ে অবাধে চলাচলসহ নানা কারণে প্রতি বছর গড়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। এটাই যখন বাস্তবতা, তখন রেল কর্তৃপক্ষের করণীয় কী? দেশে রেলপথে রেলক্রসিং স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ, অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধ করার দায় আইনত কোন কর্তৃপক্ষের? বর্তমান বাস্তবতায় তাদের ভ‚মিকা কী। রেল সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বহু প্রকল্প গ্রহণের কথা আমরা শুনে আসছি। কিন্তু রেলের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা রেলক্রসিং সুরক্ষিত করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। বৈধ রেলক্রসিংগুলোতে গেটম্যান নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা কেন? আর অবৈধ রেলক্রসিংগুলোর ব্যাপারে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারা এগুলো স্থাপিত হয়। কিন্তু এগুলোতে অরক্ষিত মৃত্যুফাঁদ হয়ে তো থাকতে পারে না। অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধের ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতার কথাও শোনা যায়। অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের ব্যাপারে আইন কী বলছে তা আমরা জানি না। তবে না জেনেও আমরা বলতে পারি, এসব ক্রসিংকে ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। রেল দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে রেলক্রসিংগুলোকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। বৈধ রেলক্রসিংগুলোতে অবশ্যই গেটম্যান থাকা নিশ্চিত করতে, যেখানে নেই সেখানে দ্রুত নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করতে হবে। অবৈধ রেলক্রসিংগুলো আইনানুগভাবে বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে, নেহাত বন্ধ করা না গেলে যথাযথ অবকাঠামো ও গেটম্যান দিয়ে এগুলো সুরক্ষিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে রেলগেট মরণফাঁদ হয়েই থাকবে, যা আমাদের কারো কাম্য হতে পারে না। রেলে নিরাপত্তার দিকটি অবশ্যই যথাযথ গুরুত্বসহ দেখা দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App