×

মুক্তচিন্তা

অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র ফ্রিল্যান্সিং

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৫১ পিএম

অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র ফ্রিল্যান্সিং

ফাইল ছবি

বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সিং বাজারের বড় এক গন্তব্য বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান মতে, এ খাতের শতকরা ১৬ শতাংশ বাজার দখল করে আছে বাংলাদেশি কর্মীরা। দেখা যায় যে, ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজে জড়িত বেশিরভাগ কর্মী আসছে দেশের তরুণ ও যুবসমাজ হতে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের এমন অনেকে আছেন যারা এখন ধরাবাঁধা নিয়মের ও গতানুগতিক চাকরির থেকে স্বাধীনভাবে অনলাইনে কাজের প্রতি বেশি আগ্রহী। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) এক তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার কাজ করে চলেছেন। যাদের ৫ লাখ কাজ করেন মাসিক আয়ের ভিত্তিতে। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ তরুণ। আমাদের দেশ তারুণ্যনির্ভর দেশ। তাই তরুণদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে আরো এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবে বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। এর কাজের পরিধি বেশ ব্যাপক। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং থেকে শুরু করে ওয়েব ডেভেলপিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, কনটেন্ট রাইটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনসহ আরো অনেক কিছু এর পরিধির আওতাভুক্ত। তাছাড়া প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কাজের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটকে আরো বিস্তৃত করে তুলছে। এখানে কাজগুলো ক্লায়েন্ট ও ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি চুক্তির ভিত্তিতে হয়ে থাকে। আর সে ক্লায়েন্ট হতে পারে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। চুক্তির ওপর ভিত্তি করে ক্লায়েন্টরা ফ্রিল্যান্সারদের কাজ দিয়ে থাকেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্রিল্যান্সারকে তার কাজটি সম্পন্ন করে চুক্তিবদ্ধ ক্লায়েন্টকে জমা দিতে হয়। এর বিনিময়ে একজন ফ্রিল্যান্সার পেয়ে যান চুক্তি অনুসারে তার কাজের পারিশ্রমিক। প্রযুক্তির সুবাধে এ কাজগুলো ফ্রিল্যান্সার ও ক্লায়েন্টরা খুব সহজে করে নিতে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে অবস্থান করেও।

বেশ মজার ব্যাপার হলো ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজগুলো ইন্টারনেটভিত্তিক হওয়ায় এখানে কোনো ধরাবাঁধা অফিস টাইম নেই। যে কোনো সময়ে, যে কোনো স্থান থেকে একজন ফ্রিল্যান্সার তার সুবিধামতো কাজগুলো সহজে করে ফেলতে পারেন। নির্দিষ্ট সময়ে পরিপাটি হয়ে তাকে কর্মক্ষেত্রে ছোটার ভাবনা ভাবতে হয় না। এতে করে যাতায়াত খরচ ও সময়ের অপচয় হয় না। ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশের নারীরাও এখন আর পিছিয়ে নেই। বৈশ্বিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ রেখে চলছে একের পর এক। যেহেতু ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজগুলো বাসায় বসে নিজেদের পছন্দমতো সময়ে করা সম্ভব, সেক্ষেত্রে শিক্ষিত ও দক্ষ গৃহিণীরা তাদের কাজের ফাঁকেও এ ধরনের কাজে যুক্ত হতে পারে অনায়াসেই। এতে করে নারীরা স্বনির্ভর হতে পারছে। তাদের পরিবারকে দিতে পারছেন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। এতে করে সমাজে নারীদের সম্মান বৃদ্ধি পাচ্ছে অনেকাংশে।

বেকারত্ব লাঘবে ভূমিকা রেখে চলছে ফ্রিল্যান্সিং। দেশের কয়েক লাখ মানুষ এখন এর দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। ‘গিগ ইকোনমি’র নাম আমরা অনেকে কম-বেশি শুনেছি। গিগ ইকোনমি বা গিগ অর্থনীতি হচ্ছে এক ধরনের খণ্ডকালীন কাজের ক্ষেত্র। যেখানে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ীভাবে কর্মী নিয়োগ না করে বিশেষ কিছু শর্তসাপেক্ষে স্বল্প সময়ের জন্য কর্মী নিয়োগ দিয়ে দিয়ে থাকে। গিগ ইকোনমিতে বাংলাদেশ দ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশে অবস্থান। এই বিশাল অর্জনের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ভূমিকা অপরিসীম।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের বহুল সম্ভাবনা থাকলেও আমাদের দেশে এখনো সুপরিচিত হয়নি। এর প্রচারে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। আমাদের দেশে কর্মীর অভাব নেই, কিন্তু দক্ষ কর্মীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App