×

সম্পাদকীয়

উগ্রবাদ দমনে রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৫৯ পিএম

বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল কার্যক্রমে অনেকটাই সফলতা মিলেছে, সহিংস হামলার ঘটনা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু জঙ্গি বা উগ্রবাদী কার্যক্রম থেমে আছে, এ কথা বলার অবকাশ নেই। ইদানীং তারা গোপনে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীক ভাস্কর্য ভাঙার মিশনে নেমেছে। গত ৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার পর দুর্বৃত্তদের নজর পড়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা শহীদ বীর বিপ্লবী বাঘা যতীনের আবক্ষ ভাস্কর্যের ওপর। বৃহস্পতিবার রাতের অন্ধকারে তারা ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। ভাস্কর্যটি কুষ্টিয়া কয়া গ্রামে বাঘা যতীনের জন্মভিটা এবং কয়া মহাবিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে কুষ্টিয়া-শিলাইদহ সড়কের পাশে স্থাপিত। পরদিন বিষয়টি স্থানীয়দের দৃষ্টিগোচরে এলে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। ন্যক্কারজনক এ ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা পুলিশ এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। তবে একটি সংগঠিত চক্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়। কিছুদিন ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আস্ফালন দেখতে পাচ্ছি। ভাস্কর্যের সঙ্গে ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। পৃথিবীর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোতে ভাস্কর্য রয়েছে। ইরানের ধর্মীয় নেতা খুমেনির ভাস্কর্য রয়েছে। পাকিস্তানে জিন্নাহর অসংখ্য ভাস্কর্য রয়েছে। কাজেই যারা বাংলাদেশে ভাস্কর্যের সঙ্গে ধর্মের সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি করছে, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এদের ছাড় দিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে। যে কোনো মূল্যে এদের দমন করতে হবে। নির্মূল করতে হবে মৌলবাদের উৎস। মুক্তিযুদ্ধের শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সম্প্রতি রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে সে কাজ অবিলম্বে বন্ধের দাবি তোলেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক। আর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা টেনেহিঁচড়ে ফেলে দেয়া হবে। জামায়াত সমর্থিত হেফাজত-খেলাফতের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক নেতারা যেসব কথা বলছেন, সেগুলো সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চরম অবমাননা ছাড়া কিছুই নয়। এই উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একাট্টা দেশের মানুষ। সমস্বরে দাবি উঠেছে উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার। সংগঠন হিসেবে হেফাজত ইসলামকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি। মৌলবাদী গোষ্ঠী আশকারা পেয়ে মাথায় উঠেছে। এর আগে পাঠ্যপুস্তক কেলেঙ্কারি ও পাঠ্যপুস্তককে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িকতার অপরাজনীতির সঙ্গে সরকারের আপসরফার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চিহ্নিত মৌলবাদী গোষ্ঠী নীরবে সংগঠিত হচ্ছে। সামনে হয়তো আরো বড় কোনো হুমকি আসবে। আমরা মনে করি, আজ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ যখন হুমকির মুখে তখন সপক্ষের সব সংগঠন রাজনৈতিক ছাত্র যুব মুক্তিযোদ্ধা নারী পেশাজীবীসহ সব দলকে এক প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি অনিন্দ্যসুন্দর শিল্পকর্ম ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App