×

জাতীয়

সৈয়দপুরে অবাঙালি প্রাধান্য ও পাকিস্তানপ্রীতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:১৯ এএম

সৈয়দপুরে অবাঙালি প্রাধান্য ও পাকিস্তানপ্রীতি

১৮ ডিসেম্বর সৈয়দপুর বিজয় দিবস পর্ব-১

আজ ১৮ ডিসেম্বর সৈয়দপুর বিজয় দিবস, শত্রুমুক্ত হওয়ার দিন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশের বিজয় দিবস হলেও গোটা দেশের সর্বত্র স্বাধীনতার শত্রুপক্ষ ওই দিন আত্মসমর্পণ করেনি। অবাঙালি প্রাধান্যের সৈয়দপুরে তাদের প্রতিরোধের কারণে মুক্তি বাহিনীর প্রবেশ করতে সময় লাগে আরো দুদিন- শহরটি মুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। সৈয়দপুর সেনানিবাসের তৎকালীন বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ কর্মকর্তা মির্জা আকতারুল ইসলাম যুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে সেখানে ছিলেন, প্রত্যক্ষ করেছেন বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতা এবং শোচনীয় পরাজয় শেষে আত্মসমর্পণের ঘটনা। তিনি জানিয়েছেন- ‘আত্মসমর্পণের সময় পাকিস্তানি সেনাদের পরনে ছিল র‌্যাঙ্ক বা ব্যাজবিহীন খাকি পোশাক, পায়ে বুটও ছিল না, এমনকি তাদের কোমরে বেল্টও ছিল না এবং সেদিন তাদের চেহারা ছিল বিমর্ষ। অথচ দুদিন আগেও তারা বদমেজাজি হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে কারণে-অকারণে বাঙালিদের বুকে গুলি চালিয়েছে।’

লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ এ জহীর বীরপ্রতীক সেদিনের স্মৃতিচারণে জানান দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে ব্যবহৃত সৈয়দপুরের যে রানওয়েটিতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও বড় আকারের বিমান ওঠা-নামা করার প্রয়োজনে সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য পাকিস্তানিরা বন্দি বাঙালিদের ক্রীতদাসের মতো ব্যবহার করেছিল- সেই বিমানবন্দরে তারা অস্ত্র সমর্পণ করেছিল। মিত্র বাহিনীর লে. কর্নেল দলজিৎ সিং তার এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আত্মসমর্পণকারী প্রায় ৫ হাজার পাকিস্তানি সেনার মধ্যে ছিল ৯৮ জন অফিসার আর ১১৪ জন জেসিও; তবে দিল্লির নির্দেশে সেদিন আত্মসমর্পণের কোনো ছবি ধারণ করা হয়নি।

১৯৪৭ পরবর্তী সৈয়দপুরে অবাঙালি প্রাধান্য ও পাকিস্তানপ্রীতি : ১৯৪৭-এর দেশ ভাগের পর সৈয়দপুর শহরে প্রবল প্রতিপত্তি বিস্তার করে ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত অবাঙালি অভিবাসীরা যারা স্থানীয় বাঙালিদের কাছে বিহারি নামে পরিচিত। পাকিস্তানের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামসের মতো অধিকাংশ বিহারিই ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। যদিও এদের ছোট একটি অংশ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। বিহারিদের ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থানজুড়ে রয়েছে উত্তরবঙ্গের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পৌরসভা। এ শহরে গণহত্যা, লুটপাট, নারী-নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসস্তূপের তালিকা বেশ দীর্ঘ। পাকিস্তানি মদতে বাঙালির ওপর অবাঙালির প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাস্বরূপ নাম পরিবর্তনের রাজনীতির নমুনা ছিল এখানে বেশ প্রকট। উদাহরণস্বরূপ- সৈয়দপুরের পরিবর্তিত নাম দেয়া হয়েছিল ‘গাজীপুর’, গোলাহাট উপশহরের নাম ‘নিউ বিহারপুর’, বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয়েছিল ‘জমজম বিমানবন্দর’। সৈয়দপুরের বাঙালিদের ওপর এত দুর্ভোগ নেমে আসার কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায় সৈয়দপুর থানা শহর হলেও এখানে ছিল দেশের সর্ববৃহৎ রেল কারখানা, বিমানবন্দর, সেনানিবাস, নীলফামারী মহকুমার পুলিশ কর্মকর্তার অফিস ও বাসভবন। মুক্তিযুদ্ধকালীন রংপুর ও দিনাজপুরের বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ন্ত্রিত হতো সৈয়দপুর থেকে। এছাড়া পাকিস্তানি সেনারা আকাশ, সড়ক, রেলপথে সহজে সারাদেশে যোগাযোগের সুবিধাসহ কৌশলগত নানা কারণে উত্তরবঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষার অন্যতম জোন হিসেবে নির্বাচন করেন সৈয়দপুরকে। এখানে ব্যাপক বাঙালি নির্যাতনের আরেকটি কারণ ছিল তৎকালীন সৈয়দপুরে বসবাসরত উর্দুভাষি অবাঙালিদের পাকিস্তানপ্রীতি ও বাঙালি বিদ্বেষী মনোভাব। ১৯৪৭-এর দেশ ভাগ থেকে ১৯৭০ এর নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত একদিকে বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শোষণ, বঞ্চনার কারণে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ অন্যদিকে বিহারিদের অন্ধ পাকিস্তানপ্রীতি বাঙালি-অবাঙালি বিদ্বেষের অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করেছিল।

১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে পাকিস্তানি শাসকদের মতো মনোক্ষুণ্ন হন সৈয়দপুরের বিহারিরাও। অবাঙালিরা জামায়াতে ইসলামী ও নেজামে ইসলামকে সমর্থন করলেও আওয়ামী লীগের নিকট তারা পরাজিত হয় এবং কেন্দ্রের সঙ্গে একত্রিত হয়ে বিহারিরাও নির্বাচন বাতিলের চক্রান্তে মেতে উঠে। বিহারিদের বিভিন্ন আহ্বান ও দাবির মধ্যে ছিল- মাওলানা সাব্বির ও মাওলানা ইসরাইল কর্তৃক বাঙালিদের উর্দুতে কথা বলার আহ্বান, সৈয়দপুর টেকনিক্যাল স্কুল ও সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে উর্দু মিডিয়াম চালু, প্রেক্ষাগৃহে বাংলা সিনেমা প্রদর্শনে বাধাদান ইত্যাদি। তাছাড়া বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে অবমাননা করার উদ্দেশ্যে অবাঙালি তরুণরা কালি লেপন করে শহরের বিভিন্ন মোড়ের বাংলা পোস্টার ও সাইনবোর্ডগুলোতে। এমনকি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক শহীদ মিনারে বিষ্ঠা পর্যন্ত লেপন করে তারা। ত্রাস সৃষ্টির জন্য শহরের যেখানে-সেখানে বোমা নিক্ষেপ করে। গভীর রাতে মহল্লায় মহল্লায় অগ্নিসংযোগ করে তার দোষ চাপিয়ে দেয় বাঙালিদের ওপর। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর স্থানীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) ডা. জিকরুল হকের নেতৃত্বে সৈয়দপুর থানা ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি’ গড়ে ওঠায় বিক্ষুব্ধ বিহারিরা সংঘর্ষের পথ খুঁজতে থাকে। মানচিত্র খঁচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা জড়ানো জিপে এমএনএ আবদুর রউফ সৈয়দপুরে আসলে ক্ষুব্ধ অবাঙালি তরুণরা পতাকা ছিঁড়ে ফেলে এবং তাকে দৈহিকভাবে লাঞ্ছিত করে। সৈয়দপুর থানা প্রাঙ্গণে ২২ মার্চ শান্তিসভায় বিহারি নেতা মতিন হাশমী, কাইয়ুম মুন্সি, রংপুর জেলা প্রশাসক শামীম আহসানের উদ্দেশ্যপূর্ণ বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে এবং সৈয়দপুর সেনানিবাসের পাকিস্তানি সৈন্যদের সার্বিক সহায়তায় একদল বিহারি বাঙালিদের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এসবের মধ্যেও ২২ মার্চ সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ শহরের কয়েকটি স্থানে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ানো হয়।

২৩ মার্চ ১৯৭১ : স্বাধীনতা যুদ্ধে সৈয়দপুরের প্রথম শহীদ ২৩ মার্চ পাকিস্তানের ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে বিহারিরা অফিস-আদালত, দোকানপাট, বসতবাড়িতে পাকিস্তানি পতাকা উড়ান। অন্যদিকে এদিনটিকে ‘স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ পালন করে ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে। সারাদেশের মতো সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়, কাজি পাড়া, কুন্দল, নতুন বাবুপাড়ায় ওই দিন পাকিস্তানি পতাকার বদলে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করায় ২৩ মার্চ শহরজুড়ে শুরু হয় বাঙালি-অবাঙালি দাঙ্গা। সাবেক ছাত্রনেতা নূরু ও কুদরতকে ২৩ মার্চ বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের অপরাধে জীবন দিতে হয় বিহারিদের হাতে। শহরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হওয়ায় সংখ্যালঘু বাঙালিদের অনেকে দিশাহারা হয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে পালাতে থাকে। যারা পালাতে ব্যর্থ হয় তাদের কাউকে কাউকে বন্দি করে নির্যাতন করা হয়- এতে অনেকে শহীদ হন। ২৩ মার্চ রাতে হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে অবাঙালিরা এমপিএ ডা. জিকরুল হককে হত্যা করেছে- এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ডা. জিকরুল হকের খবর নিতে এবং বিহারিদের আক্রমণ থেকে বাঙালিদের রক্ষা করতে আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ দেশীয় অস্ত্র হাতে শহরে জড়ো হতে শুরু করেন। অন্যদিকে সশস্ত্র অবাঙালিরাও শহরের বিভিন্ন স্থানে একত্রিত হয় এই বলে- ‘বাঙালি লোগ হাম লোগকো মারণে আয়া’। গুজবের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। বাঙালির অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অপরাধে আবুল হোসেন এবং সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার আবদুল হাফিজ (চার্জম্যান), রফিক ও জামান (ফোরম্যান)-কে বাঁশবাড়ী এলাকায় ২৩ মার্চ রাতে বিহারিরা গুলি করে হত্যা করে। ছাত্রনেতা নূরু ও কুদরতসহ তারাই স্বাধীনতা যুদ্ধে সৈয়দপুরের প্রথম শহীদ হিসেবে বিবেচিত। বস্তুত, ওইদিন সৈয়দপুরের বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সৈয়দপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জিকরুল হক জানিয়েছেন- সৈয়দপুরে গণহত্যার সূচনা হয় ২৫ মার্চের দুই দিন পূর্বে অর্থাৎ ২৩ মার্চ থেকে। এদিন সন্ধ্যায় বিহারিদের দ্বারা আরো শহীদ হন- রেল কর্মচারী মনিরুজ্জামান (ফোরম্যান), আবদুস ছামাদ (কার্পেন্টার), নূর রহমান (খালাসি), ফয়েজ উদ্দীন (মোল্ডার) প্রমুখ স্বাধীনতাকামী বাঙালি। বাঙালি হত্যার খবর দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় অবরুদ্ধ আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-স্বজনদের উদ্ধারের জন্য আশপাশের গ্রামের হাজারো মানুষ চারদিক থেকে শহরকে ঘিরে ফেলে। প্রায় ২ হাজার মানুষের এমনি এক উদ্ধারকারী দল সাতনালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহতাব বেগের নেতৃত্বে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বাঁশবাড়ী এলাকায় তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এরকম অবস্থায় অবাঙালিদের প্রতিনিধি হিসেবে বিহারি নেতা মতিন হাশমী পাকিস্তানি সেনা সহায়তা চাওয়ায় এক কোম্পানি সৈন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করেন মেজর কামরুজ্জামান। মাহাতাব বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে অবাঙালি ও পাকিস্তানি সেনারা জড়ো হতে থাকে শহরের শের-এ-বাংলা স্কুলের কাছে। সেখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরে মাহাতাব বাহিনী তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এটি ছিল সৈয়দপুরের প্রথম সশস্ত্র লড়াই। লড়াইয়ে উত্তেজিত জনতার উদ্দেশ্যে নির্বিচারে গুলি ছোড়ে পাকিস্তানি সেনারা। ফলে শহীদ হন একই ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলীসহ বেশ কিছু লোক, গুলি লাগে মাহাতাব বেগের তলপেটে এবং একই যুদ্ধে মাহাতাবপুত্র সালাউদ্দীন বেগও গুলিতে আহত হন। পরবর্তীতে জানা যায়, বিহারিরা গুলিবিদ্ধ মাহাতাব বেগকে ছুরি দিয়ে জবাই করে দেহ থেকে মাথাটা বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর খোলা জিপে চেপে গোটা শহরে বিজয় উল্লাসসহ সেøাগান দিতে থাকে এই বলে যেÑ আর কেউ প্রতিরোধ করতে আসলে তার অবস্থাও এমনি ভয়ংকর হবে।

২৫ মার্চ নতুন বাবুপাড়ার পুলিশ ব্যারাকে অবস্থানরত বাঙালি পুলিশদের ওপর অকস্মাৎ আক্রমণ করে সশস্ত্র বিহারি বাহিনী। কিন্তু পারস্পরিক গোলাগুলিতে বিহারিরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। বাঙালি পুলিশ বাহিনী যেন জনতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়তে না পারে সে জন্য অবাঙালি পুলিশ বাহিনী দিয়ে বাঙালি পুলিশদের নিরস্ত্র করে থানায় আটক রেখে চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ফলে সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা প্রকাশ্যে ব্যারাক ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।

পাইপগান, বন্দুক, রাইফেল প্রভৃতি অস্ত্রে সজ্জিত অবাঙালিরা ২৫ মার্চ সৈয়দপুর শহরে বাঙালিদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়, দোকানপাট লুট করে এবং দেখামাত্র হত্যায় উদ্যত হয়। দারুল উলুম মাদ্রাসা ও সৈয়দপুর হাইস্কুলে গড়ে তোলা হয় পাকিস্তানি সেনাদের অন্যতম দুটি ক্যাম্প যেখানে প্রায় ৭০০ অসহায় বাঙালিকে আটক রেখে নির্যাতন করা হয়; ২৪ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিলের মধ্যে সেখানে প্রায় ১০০ বন্দি শহীদ হন। এছাড়া সৈয়দপুর টেকনিক্যাল স্কুল ছিল পাকিস্তানি সেনা ও অবাঙালি পরিচালিত হত্যা ও নারী নির্যাতন কেন্দ্র। অন্যদিকে, ৩০ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে রাত ৩টার দিকে বাঙালি সেনাদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালালে প্রায় ২০০-৩০০ বাঙালি সৈনিক শহীদ হন।

(পরবর্তী সংখ্যায় সমাপ্য)।

সহায়ক গ্রন্থাবলি আহম্মেদ শরীফ, নীলফামারী ১৯৭১ গণহত্যা ও নির্যাতন, সুবর্ণ, ঢাকা, ২০১৫। মোতাহার হোসেন সুফী (সম্পাদিত), মুক্তিযুদ্ধে রঙ্গপুর, রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ, রংপুর, ২০১৩। মুকুল মোস্তাফিজ, মুক্তিযুদ্ধে রংপুর, গতিধারা, ঢাকা, ২০১১। হাসান হাফিজুর রহমান (সম্পাদিত), বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার: তথ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা, ১৯৮৪। ———————————————————————————— ড. মেসবাহ কামাল, অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়। শাহানাজ পারভীন, মুখ্য-সম্পাদক, জন-ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র, ঢাকা।

১৮ ডিসেম্বর : সৈয়দপুর বিজয় দিবস (২য় পর্ব) ড. মেসবাহ কামাল ও শাহানাজ পারভীন

(পূর্ব প্রকাশিতের পর) রেল কারখানার গণহত্যা : বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে কর্মস্থলে যোগদানে বিরত থাকা সৈয়দপুরের রেল কারখানার বাঙালি কর্মচারী ও শ্রমিকদের পাকিস্তানি সেনা সহায়তায় সংগঠিত অবাঙালি রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগদানের জন্য ভীতি প্রদর্শন করেন। ২৬ মার্চ সৈয়দপুরের আতঙ্কিত বাঙালি শ্রমিক-কর্মচারীদের উদ্দেশে রেল কলোনিতে মাইকিং করে সর্বশেষ হুমকিসূচক ঘোষণায় বলা হয়Ñ ২৭ মার্চ তারা কাজে যোগদান না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ কারণে ২৭ মার্চ অনেকটা বাধ্য হয়ে কিছু কর্মচারী কাজে যোগদানের উদ্দেশ্যে কারখানায় যান। তাদের মধ্যে স্টোর ও অ্যাকাউন্টস অফিসার হোমিও ডা. এম এ আজিজ সেদিন কারখানা গেটের সামনেই শহীদ হন বিহারিদের অস্ত্রের আঘাতে। একই দিন তাদের হাতে শহীদ হন নাম না জানা আরো ৫ জন নিরীহ বাঙালি।

সৈয়দপুর রেল কারখানার সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭১Ñএর ১৪, ১৫, ১৬ এপ্রিল। এই ৩ দিনে প্রায় ৪০০-৪৫০ বাঙালি রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্য করে কাজে যোগদানের উদ্দেশ্যে এনে ১২০০-২৫০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার বিশাল আকারের বয়লার ও ফার্নেস চুলায় নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারে। বয়লার/ফার্নেসগুলো লোহা গলানোর কাজে ব্যবহৃত হতো। এই নির্মম গণহত্যার নেতৃত্বে ছিলেন বিহারি মতিন হাশমী, মো. হব্বু, মো. জাহিদসহ আরো অনেক রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী। এই গণহত্যার শিকার ১৭৭ জন শহীদের নাম জানা গেলেও অজানাই রয়ে গেছে বাকি শহীদদের ইতিহাস।

বালারখাইল গণহত্যা : তৎকালীন সৈয়দপুর পৌর চেয়ারম্যান, কমিশনারসহ বিভিন্ন মৌজার অবাঙালি নেতৃস্থানীয়রা ও পাকিস্তানি সেনা সমন্বয়ে ২১ সদস্যবিশিষ্ট যৌথ শান্তি কমিটি গঠন করে মধ্য এপ্রিলে। বিহারি কাইয়ুম ছিলেন কমিটির চেয়ারম্যান ও কর্ণধার এবং প্রভাবশালী সদস্যরা হলেন- মাওলানা সালেহ অহমেদ, ইউসুফ বাট, ইসমাইল মাছুয়া, মতিন হাশমী, ইজহার আহমেদ, অধ্যাপক তসলিম প্রমুখ। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের নির্দেশে পাকিস্তানি সেনা সহযোগে রাজাকার ইজহার ও তার অনুসারীরা ৮ জন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাসহ শহরের বহু বাঙালি হত্যা করেন। ২৫ মার্চ রাতে বিহারি নেতারা পাকিস্তানি সেনা সহায়তায় তৎকালীন এমপিএ ডা. জিকরুল হক, ডা. শামসুল হক, ডা. বদিউজ্জামান, ডা. আমিনুল হক, তুলসীরাম আগরওয়ালা, যমুনা প্রসাদ কেডিয়াসহ প্রায় ১০০ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসহ প্রায় ৬০ জন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সদস্যকে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে বন্দি রেখে তিন সপ্তাহ ধরে নির্যাতন চালায়। ২৫ মার্চ থেকে নির্যাতনের পর ১২ এপ্রিল সেনাবাহিনীর ৩টি ট্রাকে করে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের নিকটস্থ নিসবেতগঞ্জের ‘বালারখাইল’ এলাকায় নিয়ে পাকিস্তানি অফিসারদের করা প্রতিজ্ঞা (ÔWe will make this country a land of prostitute, a land of slaves, a land of beggers’)। পুরনো বন্দিদের চোখ-হাত বাঁধা অবস্থায় ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। সেদিনের হত্যাকাণ্ডে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া কমলা প্রসাদের বিবরণ থেকে জানা যায়, সেদিন বালারখাইলে নেতাসহ প্রায় ১৫০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়।

গোলাহাট গণহত্যা : ট্রেন অপারেশন ‘খরচা খাতা’

১৯৭১-এর ১৩ জুন সৈয়দপুরে সংঘটিত আর এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের নাম ‘অপারেশন খরচা খাতা’। ১৯৭১-এর ৫ জুন থেকে সৈয়দপুর শহরে অবাঙালি নেতারা, পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাপ্টেন গুল ও তার সৈন্য বাহিনীর তত্ত্বাবধানে মাইকে ঘোষণা দেয় আটকে পড়া হিন্দু, মাড়োয়ারিদের নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেয়া হবে। এ জন্য চার বগির একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনটি সৈয়দপুর থেকে চিলাহাটি সীমান্ত হয়ে ভারতের জলপাইগুড়ি হয়ে শিলিগুড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। মাইকিংয়ের ঘোষণা শুনে অবরুদ্ধদশা থেকে মুক্তির আশায় শ্যামলাল আগরওয়ালার মতো অনেকে ১৩ জুন একত্রিত হয়ে গাদাগাদি করে ওঠে বসলেন ট্রেনে। তবে ট্রেনে ওঠার আগে সব যাত্রীকে একত্রিত করে ৩ ভাগে ভাগ করে আলাদা করা হয় বৃদ্ধ ও যুবকদের। তারপর ট্রেনে ওঠার অনুমতি দিলেও অবাঙালিরা ২০-২২ জন তরুণী/নববধূকে আলাদা করে পাকিস্তানি অফিসারদের নজরানাস্বরূপ গোলাহাটের ‘আস্তানা-ই-হক’ ও ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে ছিলেন রজনী সিংহানিয়া, কাঞ্চন দেবী সিংহানিয়াসহ অনেকে। ওই ট্রেনের অন্য এক যাত্রী তপন কুমার দাস কাল্টু জানান, সকাল ১০টার দিকে ট্রেনটি ছাড়ার পর ধপাধপ ট্রেনের সব জানালা-দরজা বন্ধ করা হচ্ছিল। বিনোদ আগরওয়ালা জানান শহর থেকে প্রায় ২ কি.মি. দূরে গোলাহাটের নিকট আসতেই ট্রেনটি থেমে যায়। এরপর কম্পার্টমেন্টের দরজা খুলে হাতে রামদাসহ ঢুকল কয়েকজন বিহারি। তিনি কম্পার্টমেন্টের বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলেন পাকিস্তানি সেনারা গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে। এ সময় বিহারিদের চিৎকার করে বলেÑ ‘মালাউন কা বাচ্চা, তুম লোগকো মারণে কি লিয়ে সারকার কা কিমতি গোলি কিউ খারচ কারু?’ আর রামদা দিয়ে এক এক করে যাত্রীদের কোপাতে কোপাতে ট্রেন থেকে বের করে। এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ অবাঙালির কাছে পরিচিত ‘অপারেশন খরচা খাতা’ নামে, আর বাঙালিদের নিকট গোলাহাট গণহত্যা নামে। এ হত্যাকাণ্ডে শহীদ হন প্রায় ৪৪৮ জন হিন্দু মাড়োয়ারি। এই নিষ্ঠুরতা থেকে সেদিন কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যান শ্যামলাল আগরওয়ালা, বিনোদ আগরওয়ালা, তপন কুমার দাস কাল্টু, শ্যাম সুন্দর দাস প্রমুখ। অবাঙালি ও পাকিস্তানি সেনার আক্রোশের স্বীকার সৈয়দপুরের শহীদের সংখ্যা প্রায় ১০,০০০।

মিত্র বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণে সৈয়দপুরের পতন চূড়ান্ত আক্রমণের জন্য সৈয়দপুরে চালানো হয় দুই দিক থেকে অভিযান। মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার সামসুল হক সরকার জানান, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও পার্বতীপুরে পরাজিত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর অবাঙালিরা জড়ো হয়ে আশ্রয় নেয় সৈয়দপুর সেনানিবাসে। ডোমার থানার সীমান্তবর্তী হিমকুমারী ক্যাম্প থেকে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে নীলফামারীর নটখানায় ক্যাম্প স্থাপন করে এবং সেখান থেকে ট্যাংক বহর নিয়ে সৈয়দপুর আসে ১৮ ডিসেম্বর সকালে, অবস্থান নেয় শহরের ওয়াপদা এলাকায়। নেতৃত্বে ছিলেন মিত্র বাহিনীর কমান্ডার কর্নেল জোগল ও মেজর কান্ত পাল এবং মুক্তি বাহিনীর ৬নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইকবাল ও মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার সামসুল হক সরকার। এদিন মিত্র বাহিনী সৈয়দপুরে প্রবেশ করে তার বার্তায় পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে তাদের নিরস্ত্র করলে সৈয়দপুর শত্রুমুক্ত হয়।

অন্যদিকে সৈয়দপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার জিকরুল হক সৈয়দপুরের বিজয় দিবসের স্মৃতিচারণে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হলেও সৈয়দপুরকে মুক্ত করতে ১৮ ডিসেম্বর সকালে মুক্তি বাহিনীর একটি কনভয় দিনাজপুর রোড হয়ে শহরের কুন্দলে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা শহরে ঢোকার মুহূর্তে সশস্ত্র অবাঙালি ও পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে শহীদ হন কামারপুকুর ইউনিয়নের ব্রহ্মোত্তর গ্রামের তরুণ মো. মমতাজ ও মুক্তি বাহিনীর সদস্য জয়নাল আবেদীন। গোটা শহর সশস্ত্র অবাঙালিদের দখলে থাকলেও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত মিত্র বাহিনীর নিকট তাদের পতন ঘটে।

সৈয়দপুর সেনানিবাসের তৎকালীন বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ কর্মকর্তা মির্জা আকতারুল ইসলাম আরো জানান, ‘১৬ ডিসেম্বর রাতে চিলাহাটি সীমান্ত দিয়ে মিত্র বাহিনীর ও মুক্তি বাহিনীর যৌথ কমান্ড ব্রিগেডিয়ার জোশির নেতৃত্বে জিপ, ট্রাক, ট্যাংকসহ শ’খানেক যানবাহনের বিশাল কনভয় নিয়ে প্রবেশ করে সৈয়দপুরে। ‘হাতিয়ার ডাল দো’, অর্থাৎ ‘অস্ত্র ফেলে দাও’ বলে সেনানিবাস জুড়ে সারারাত মাইকিং চলে।’ সেনানিবাসের পশ্চিমে নির্মাণাধীন বিমানবন্দরে ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ আত্মসমর্পণ করে সৈয়দপুরে অবস্থানরত সৈন্যদের পাশাপাশি পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট ও দিনাজপুর থেকে আগত প্রায় ৫ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য।

শেষ কথা : দেশজুড়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দুদিন আগেই সৈয়দপুরে মুক্তির লড়াই শুরু হয় অবাঙালিদের হঠকারিতায়, আর তাদের প্রতিরোধের কারণে শত্রুমুক্ত হয় বিজয়ের দুদিন পর। সৈয়দপুরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করতে আগ্রহীদের মধ্যে এখনো ‘ঝুঁকিপূর্ণ কাজ’ হিসেবে এক ধরনের ভীতি সঞ্চারিত হয়- যা স্বাধীন দেশে কাম্য নয়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ছাড়া জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। অথচ ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় ৫০ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচিত হয়নি। আরেক দিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-আদর্শ-চেতনা ও সুফলকে কাস্টমাইজড করে ব্যক্তি, পরিবার, সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগতভাবে বিপণন করছে এক ধরনের মানুষ। বিজয়ের ৫০তম বছরে আপনজন হারানো পরিবারগুলোর ত্যাগের ইতিহাস প্রণীত হবে- এটাই প্রত্যাশা যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহমান রাখবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। সৈয়দপুরের স্থানীয় জনমানুষ, বিশেষত বর্তমান প্রজন্মের নিকট মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মত্যাগ গৌরব ও অনুপ্রেরণার হলেও সরকারিভাবে সৈয়দপুরের সব বধ্যভূমির স্বীকৃতি এখনো নেই। সেগুলো সংরক্ষণে অবহেলা সর্বদা দৃশ্যমান, এখনো দেয়া হয়নি শহীদ ও শহীদ পরিবারগুলোর স্বীকৃতি।

সহায়ক গ্রন্থাবলি ডা. অশোক কুমার ভদ্র (সম্পাদিত), মুক্তিযুদ্ধে রংপুর গণহত্যার ভয়াল স্মৃতি, মুকুল মোস্তাফিজ প্রকাশিত, রংপুর, ২০০৯। নুরুল ইসলাম (সংকলন ও সম্পাদনা), ৭১ এর ঘাতক দালালঃ যা বলেছে যা করেছে, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, ঢাকা, ১৯৯১। মুনতাসীর মামুন (সম্পাদিত), মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড), সময়, ঢাকা, ২০১৩। সুকুমার বিশ্বাস, একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর, অনুপম প্রকাশনী, ঢাকা, ২০০০। হামিদুল হোসেন তারেক বীরবিক্রম, রোড টু বগুড়া ১৯৭১, রোদেলা প্রকাশন, ঢাকা, ২০০৯। —————————————————————————————- ড. মেসবাহ কামাল, অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শাহানাজ পারভীন, মুখ্য-সম্পাদক, জন-ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র, ঢাকা।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ফার্নেসের আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদদের স্মৃতিসৌধ

১৯৭১ সৈয়দপুর গণহত্যার ট্রেন

গোলাহাট বধ্যভূমি

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App