×

মুক্তচিন্তা

মুক্তবুদ্ধির চর্চা ছড়িয়ে পড়ুক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:০০ পিএম

মুক্তবুদ্ধির চর্চা ছড়িয়ে পড়ুক

প্রতীকী ছবি

বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখতে শিখেছে, শিখিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। পদ্মা সেতু তৈরি করতে পেরেছি আমরা। দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পা রেখেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে কিন্তু সমাজের কী হবে? বর্তমান সরকার অর্থনীতি ও অবকাঠামোর ওপর যথেষ্ট নজর দিলেও দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনটা একটু বেখেয়ালেই কি ফেলে রাখল? গত অর্থবছরে সাংস্কৃতি খাতের বাজেট ছিল ৫৭৬ কোটি টাকা, সংশোধিত ৫১০ কোটি টাকা, যা এবার হয়েছে মাত্র ৫৭৯ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরগুলোর বাজেটের পরিমাণ দেখলে দেশের সংস্কৃতির অঙ্গনের মানুষরা আসলেই সন্তুষ্ট হতে পারছে না। তাদের বরাবরই দাবি এ খাতে বাজেটের পরিমাণ সন্তোষজনক নয়। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগেও গ্রামের স্কুল-কলেজে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হতো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। গভীর রাত পর্যন্ত চলত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ক্রমেই যেন কমে আসছে আমাদের এ ধরনের আনুষ্ঠানিক তৎপরতা। মানুষকে কে জানি বুঝানো হচ্ছে সংস্কৃতি চর্চা এক ধরনের নোংরামি যা পারতপক্ষে না করাই ভালো, করলেও সন্ধ্যার পরপর শেষ করে দিতে হবে, তা না হলে নোংরামি বেড়ে যাবে।

আজকে তরুণ সমাজের একাংশ মাদকাসক্ত আরেকাংশ মৌলবাদী শক্তির অস্ত্র হয়ে উঠেছে। কারণ তারা এখন সংস্কৃতি থেকে অনেক দূরে। অবকাশে যে কিশোরটার সংস্কৃতি বা কোনো খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকার কথা এ সময় সে নামাজের পর মসজিদে দিচ্ছে অথবা অন্য কোনো আড্ডায় দিচ্ছে বা কোনো মাদকের আখড়ার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আসরের নামাজ শেষ করে যার খেলতে যাওয়ার কথা বা কোনো সাংস্কৃতিক ক্লাবে যাওয়ার কথা সে কিন্তু টার্গেটে পরিণত হচ্ছে কোনো মৌলবাদীর বা জঙ্গির। দেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাত ২টা পর্যন্ত না হলেও ওয়াজ মাহফিলের নামে কিছু কিছু স্থানে কিন্তু মৌলবাদী ও অপসংস্কৃতির চর্চা বহাল রয়েছেই। নারীর পোশাক ও নারীকে নিয়ে আলোচনা করে এক ধরনের বিকৃত আনন্দ উৎসব চলছে। একশ্রেণি এই সংস্কৃতির মাধ্যমে যুবকদের বিপথগামী করছে, যার ফলে কোনো নারী ধর্ষিতা হলে তারা প্রশ্ন করে সে কি রাতে বের হয়েছিল- তার কেমন পোশাক ছিল!

বাংলাদেশ তার স্বাধীন হওয়ার কারণ থেকে দিনে দিনে অনেক সরে এসেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শহীদ মিনারে ফুল দেয়া, জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়া নিয়ে সমালোচনা হতো কিনা জানা নেই। আজকের এই স্বাধীন দেশে কিন্তু এ ধরনের সমালোচনা আমাদের কানে বাতাসের মাধ্যমে ভেসে আসে। এ থেকে নতুন প্রজন্ম কেন প্রভাবিত হবে না? দেশে আজ থেকে দুই বছর আগেও কোনো ভাস্কর্যের জন্য এত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজন পড়েনি, কিন্তু আজ প্রয়োজন হচ্ছে। দিন দিন আমাদের স্বাধীন হওয়ার উদ্দেশ্য মনে হচ্ছে ভ‚লুণ্ঠিত হচ্ছে। দেশটাকে কিছু পাকিস্তান শকুন মনে হচ্ছে যেন গ্রাস করে ফেলছে। এমতাবস্থায় সরকারি মহৎ পদক্ষেপের দিকে চেয়ে রয়েছে হাজারো স্বপ্নবাজ মানুষ, স্বাধীনতাকে বুকের ভেতর লালন করা একশ্রেণি। স্বাধীনতার প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করতে হলে তরুণ সমাজকে সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। আপন সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে বাঙালি একদিন।

শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App