×

মুক্তচিন্তা

আঞ্চলিক সহযোগিতা আরো অগ্রসর হোক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৫১ পিএম

দুই সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল বৈঠককে ঘিরে কয়েকদিন আলোচনার বিষয় ছিল। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। চালু হয় ৫৫ বছর ধরে বন্ধ থাকা চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল লিংক। তবে তিস্তার পানিবণ্টনের অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা জাগিয়েছে। অন্য ইস্যুগুলোর মধ্যে সীমান্তে হত্যা বন্ধে ভারত সরকার জোরালো পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া বৈঠকটি অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিক থেকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা যায়। দুদেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা, দুদেশের মধ্যে হাতি সংরক্ষণ সহযোগিতা, বরিশালে একটি পয়ঃনিষ্কাশন প্ল্যান্ট তৈরি ও কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্প, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সিইও ফোরাম, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল জাদুঘর ও ভারতের জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে সহযোগিতা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের কথাও হয়েছে, তবে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কতখানি সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে, তা দেখার বিষয় হবে। বৈঠকে বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির সইয়ের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের আন্তরিক প্রতিশ্রুতি এবং সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ, কিন্তু সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের মতো নেতিবাচক কিছু ঘটনার জন্য এটি কলঙ্কিত হচ্ছে। বৈঠকে হত্যাকাণ্ড নিয়ে ভারতের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত বারবার বলেছে, তারা সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে না। কিন্তু পরিস্থিতি যা দেখা যাচ্ছে, তাতে তাদের এই বক্তব্য অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ছে। সীমান্ত হত্যা রোধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের হাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র দেয়া হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেসব প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হচ্ছে কোথায়? ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনে যুক্তি দেখানো হয় যে, বিএসএফ সদস্যরা সাধারণ নাগরিকের ওপর গুলি ছুড়ে না, অস্ত্রধারী চোরাকারবারিরা দল বেঁধে জোয়ানদের ওপর আক্রমণ করে, তখন তারা আত্মরক্ষার্থে গুলিবর্ষণে বাধ্য হয়। কিন্তু এ যুক্তি ধোপে টেকে না। যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তাদের অনেকে চোরাচালানি তা ঠিক কিন্তু তারা সশস্ত্র আক্রমণকারী, তার প্রমাণ কিন্তু নেই। আর সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবার নিয়ে সীমান্তের উভয় পাড়েই রয়েছে অসাধু বাণিজ্যের বিস্তার। কিন্তু প্রতিটি ঘটনাতেই নিরস্ত্র বাংলাদেশিরা শুধু নিহত হচ্ছেন। আশা করছি, ভারত সরকারপ্রধান বিষয়টি অনুধাবন করবেন। উভয় দেশেরই প্রধানমন্ত্রী দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরো শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করার মাধ্যমে দুদেশের অর্থনীতি আরো সংহত করার বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বাস্তবিক পক্ষে বাংলাদেশের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা হয়তো আরো অনেক দিন চলবে। এরপরও আমরা আশাবাদী হই, দুদেশের সরকারপ্রধানের বৈঠকের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা আরো অগ্রসর হোক, এমনই আমাদের কাম্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App