১৯৭১
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৫৬ পিএম
হে প্রাণশক্তিতে ভরপুর তেজি তরুণ
হে সুন্দরী লাস্যময়ী তরুণী,
যে লাল সবুজ পোশাকে আজ সেজেছো তোমরা
যে উচ্ছ¡সিত হাসিতে ফেটে পড়ছো বারংবার,
রিকশায় খোলা হাওয়ায় আজ যে খুশির বন্যা তোমাদের
এই যে ফুটিয়েছো খই কত কথার,
তোমাদের মানিব্যাগ আর ভ্যানিটি ব্যাগে যে নিজস্ব মুদ্রা,
তোমাকে উদ্বাস্তু হতে রক্ষা করেছে যে জাতীয় পরিচয়পত্র
তোমাকে দেশ, ভ‚খণ্ডহীন হওয়া থেকে রক্ষা করা যে সবুজ পাসপোর্ট,
তার জন্য রক্ত ঝরিয়েছে যারা, হয়েছে সম্ভ্রমহারা
তাঁদের কথা কি জানো?
জানো কি আজ তোমাদের এই যে এতো সব, শুধুই তাঁদের জন্য পাওয়া?
যেদিন এ স্বদেশ আমার, ছিল পরাধীন, ছিল শৃঙ্খলিত
হায়েনা লুটেরার থাবায় ছিল ক্ষত-বিক্ষত
যেদিন আমার ভাষা, আমার সংস্কৃতি, আমার সত্তা ছিল শকুনের কবলে
শাসনে শোষণে জর্জরিত ছিল আমার কৃষক, শ্রমিক, জনতা
যেদিন হিংস্র পিশাচেরা কামান, রাইফেল, মেশিনগান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল
ঘুমন্ত রিকশাওয়ালা, দুধের শিশু, বিশ্ববিদ্যালয়ের তেজি তরুণ
আর নিরীহ নিরপরাধ সাধারণ মানুষের উপর
রক্তের বন্যায় ভাসিয়েছিল এ মাটি,
সেদিন সেই কাল সময়ে,
যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে, শত্রæ মোকাবেলায়
ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যে অকুতোভয় সূর্য সন্তানেরা,
যারা হাসতে হাসতে শত্রæর বুলেটের সামনে পেতে দিয়েছিল বুক,
যারা জীবনকে উড়িয়ে দিয়েছিল ডিনামাইটে বেঁধে,
যারা কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে সয়েছিল
পৈশাচিক অত্যাচার, কদর্য পাশবিক নির্যাতন,
যে মা তাঁর যক্ষের ধন সন্তানকে দিয়েছিল বলি,
যে বাবা দেখেছিল, হায়েনার বুলেটে উড়ে যাওয়া নিজপুত্রের খুলি
যে গর্ভবতী বধূর পেটে বেয়নেট চালিয়ে
টুকরো টুকরো করা হয়েছিল আসন্ন শিশুর তুলোর শরীর।
তাঁদের রক্তে, তাঁদের অশ্রæতে, সীমাহীন আত্মত্যাগে
এই পতাকা, এই আনন্দ, এই পোশাক, এই ভ‚খণ্ড, এই গৌরব
তাঁদের জন্যই আজ আমাদের শরীরে মাখা নিজস্ব মাটির সৌরভ।
হয়তো এখনও যে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছো তুমি,
ঠিক তার নিচেই হাসিমুখে শুয়ে আছে কোনো এক অজানা শহীদ।
ভুলে যেও না তিরিশ লক্ষ শহীদ শুয়ে আছে এই মানচিত্রে,
ভুলে যেও না এই মাটির প্রতিটি ধূলিকণায়
আজো মিশে আছে সাগরে সাগর রক্ত,
তাই, তোমাদের বুকের ভেতর, তাঁদের জন্য জায়গা রেখো শক্ত।
মনে রেখো, এদেশে চিরকাল, ১৯৭১ দীপ্ত।