×

জাতীয়

ঢাকার নজর পানি বণ্টনে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:২৩ এএম

ঢাকার নজর পানি বণ্টনে

বাংলাদেশ-ভারত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দুই দেশের আসন্ন শীর্ষ বৈঠকে বিভিন্ন নদীর ‘পানি’র বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে যেসব নদীর পানির বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ কথা বলবে সেসব নদীর তথ্য-উপাত্তসহ একটি রূপরেখা প্রস্তুত করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, করোনার কারণে পরিবর্তিত বাস্তবতায় আগামী পরশুদিন বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি ওই শীর্ষ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে পানি ইস্যু ছাড়াও করোনার ভ্যাকসিন, সীমান্তে হত্যা বন্ধ, রোহিঙ্গা ইস্যু, আঞ্চলিক শান্তির বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।

যৌথ নদী কমিশন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, দুই নেতার শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশের তরফ থেকে ভারতের কাছে তিস্তার পানি বণ্টনের চুক্তির বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হবে। গঙ্গার পানি বণ্টনের চুক্তি হওয়ার পর বাংলাদেশ পানি ঠিকই পেয়েছে, কিন্তু সেই পানি কাজে লাগাতে পারেনি। গঙ্গার পানি পদ্মায় ধরে রাখার জন্য ভারতকে সঙ্গে রেখে একটি প্রকল্প করতে চায় বাংলাদেশ। সিলেটের জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি নিয়ে একটি সেচপ্রকল্প করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য নদীর মাঝখান থেকে পানি তুলতে হবে। সেক্ষেত্রে কুশিয়ারা নদীর পানি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা করার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব করতে পারে। আসামের বরাক থেকে কুশিয়ারার জন্ম হয়েছে। এছাড়া অভিন্ন ৬ নদী- মনু, ধরলা, খোয়াই, গোমতী, মুহুরী ও দুধকুমারের পানি ভাগাভাগির বিষয়ে আগে থেকে যে রূপরেখা তৈরি হয়ে আছে সেটির অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে কথা হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যৌথ নদী কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বৈঠকে তিস্তার বিষয়ে বাংলাদেশ কথা তুলবে ঠিকই। তিস্তার চুক্তির বিষয়টি নির্ভর করছে ভারতের ওপর। পাশাপাশি কুশিয়ারা এবং গঙ্গা-পদ্মার পানির বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ। পানি সংক্রান্ত সব বিষয় প্রস্তুত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকেই ভারতের সঙ্গে কথা বলে পানি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আলোচ্যসূচি ঠিকঠাক করা হবে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার ভোরের কাগজকে বলেছেন, এটা একটা ভার্চুয়াল বৈঠক। এখানে পানি নিয়ে খুব যে একটা গুরুত্ব দেয়া হবে সেটা আমি মনে করি না। তবে এটা ঠিক, কুশিয়ারা নদীর পানি নিয়ে একটি সমঝোতা হতে পারে। পানির অন্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বড় ইস্যুগুলোই তুলবে বাংলাদেশ। অর্থাৎ বড় বড় যেসব ইস্যু আমরা সব সময় তুলে থাকি, সেগুলো আমরা তুলে ধরব। পানি সমস্যা, সীমান্তে নিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলো থাকবে। এছাড়া দ্রুত প্রভাব পড়ে এমন বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন হবে এদিন। ৫৫ বছর পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে রেল চালু হবে।

এদিকে গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে আগামী ১৭ ডিসেম্বর একটি ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন চলাকালে দুই নেতা কোভিড পরবর্তী যুগে সহযোগিতা আরো জোরদার করাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করবেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ভারত ও বাংলাদেশ সর্বোচ্চ স্তরে নিয়মিত মতবিনিময় অব্যাহত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের অক্টোবরে ভারতে একটি সরকারি সফরে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২০ সালের মার্চ মাসে মুজিববর্ষের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মোদি-হাসিনা বৈঠক নিয়ে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে এর আগেও প্রতিশ্রুতি এসেছে। আলোচনা হয়েছে। এ সংকটের সমাধান কোথায় আটকে আছে সেটাও সবারই জানা। অতএব এবারের আলোচনায় তিস্তা নিয়ে চ‚ড়ান্ত সমাধান না হলেও অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়টিতে আরো অগ্রগতি হবে, সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সঙ্গে যোগ হয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি নিয়ে সমঝোতা ও গঙ্গার পানি পদ্মায় ধরে রাখা।

যৌথ নদী কমিশনের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, আসন্ন বৈঠকে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ আলোচনা তুলবে। তবে এও ঠিক, তিস্তা চুক্তির সব নথিপত্র প্রস্তুত থাকলেও যে জায়গায় সেটি আটকে আছে সেটি এখনো পরিষ্কার হয়নি। এ কারণে আসন্ন বৈঠকে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে আশা করা উচিত হবে না। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ গঙ্গার পানি পাচ্ছে। কিন্তু সেই পানি ধরে রাখতে পারছে না বাংলাদেশ। গঙ্গা থেকে পানি প্রবাহিত হয়ে পদ্মা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে চলে যাচ্ছে। এতে চুক্তি হলেও পানি ধরে রাখতে না পারার জন্য বাংলাদেশের খুব একটা লাভ হচ্ছে না। এ কারণে ভারতকে সঙ্গে নিয়ে গঙ্গা-পদ্মায় একটি প্রকল্প করতে চায় বাংলাদেশ। যে প্রকল্পের মাধ্যমে গঙ্গার পানি পদ্মায় ধরে রাখা যাবে। এতে বাংলাদেশের কৃষকরা উপকৃত হবেন। এই প্রকল্পটি কিভাবে দুই দেশ করতে পারে সে বিষয়ে শীর্ষ বৈঠকে আলোচনা হবে। সিলেটের কুশিয়ারা নদীর পানি দিয়ে বাংলাদেশ একটি সেচ প্রকল্প করতে চায়। কুশিয়ারা বাংলাদেশ অংশে পড়লেও এর উৎপত্তি ভারতের আসামে বরাক থেকে এবং নদীর যে অংশে প্রকল্পটি করতে চায় বাংলাদেশ সেটি ভারতের অভ্যন্তরে পড়েছে। এ কারণে কুশিয়ারা নদীর পানির বিষয়ে ভারতের সঙ্গে একটি সমঝোতা প্রস্তাব তুলবে বাংলাদেশ। ওই কর্মকর্তা অভিন্ন ৬ নদীর পানির বিষয়টি জানিয়ে বলেন, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে তিস্তা ও ফেনীর পানি বণ্টনের জন্য অন্তর্বর্তী চুক্তির খসড়া হয়েছিল। কিন্তু তিস্তা চুক্তি না হলে বাংলাদেশ ভারতকে ফেনী নদীর পানি দিয়েছিল। এখন অন্য ৬টি নদীর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া জেআরসির ভারত-বাংলাদেশ বৈঠকেও এই ৬ নদীর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। আসন্ন শীর্ষ বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় এলেও চুক্তি সই হবে না। আরো কিছু কাজ বাকি। এ জন্য সামনে জেআরসি পর্যায়ে ভারত-বাংলাদেশের বৈঠক হবে।

যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারত ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো মনু, ধরলা, খোয়াই, গোমতী, মুহুরী ও দুধকুমার নদীর প্রবাহ একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করেছিল। তখন থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার দুই নিকট প্রতিবেশী এসব নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ১৯৯৫ সালে শেষবারের মতো দুই দেশ নদীর পানিপ্রবাহের সর্বশেষ তথ্য বিনিময় করেছিল। এরপর ২০১৮ সাল পর্যন্ত নদীর পানির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ের জন্য চ‚ড়ান্ত করেছিল বাংলাদেশ। ভারতও একই ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বাংলাদেশকে জানিয়েছে। ২০২০ সালের বৈঠকেও একই কথা জানানো হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App