×

বিশেষ সংখ্যা

ইতিহাস কখনো দুর্বৃত্তদের পক্ষে থাকেনি, থাকবে না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৪১ পিএম

ইতিহাস কখনো দুর্বৃত্তদের পক্ষে থাকেনি, থাকবে না
করোনার মধ্যে সবাই বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী, তরুণ, সুশীল বাটপাররা অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। তাদের একটু বাইরে বেরুবার, একটু বিপ্লবী হওয়ার সুযোগ করে দিলেন এক চরের পীর ও হেজাবি নেতা মামুনুল হক যার পিতা নাকি ছিলেন পাকিস্তানি দালাল। বুদ্ধিজীবী অনেক রকমের আছেন। এর মধ্যে সৃষ্টিশীল বুদ্ধিজীবী সংখ্যালঘিষ্ঠ। ছিলেন পদাধিকারবলে বুদ্ধিজীবী অর্থাৎ যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান, সুশীল এনজিও করেন। আরো ছিলেন সুশীল বাটপাররা, যারা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন এবং তা যদি হয় খানিকটা আওয়ামী লীগ বিরোধী তাহলে তো উত্তম। তাদের কিছুও ছিলেন এটি জেনে যে পুলিশ লাঠিপেটা করবে না। দেশে এখন কয়েক হাজার কী বলে যেন নিউজ পোর্টাল নাকি অনলাইন পত্রিকা আছে। বুদ্ধিজীবী কম থাকাতে আমার মতো পদাধিকারবলে বুদ্ধিজীবীকে তারা ফোন করতে লাগলেন। উত্তেজিত তারা। এরকম কয়েকজন মোল্লা জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙবে। এটি হতে পারে? আমি সবাইকে স্ট্যান্ডার্ড একটি জওয়াবই দিয়েছি। প্রশ্রয় দিলে যা হয় তা-ই হয়েছে। আমার বরিশালের স্ত্রী প্রায়ই আমাকে ধমক দিতে হলে বলেন, পাইতে পাইতে লাই, বাপ-কে বলে ভাই। তা সরকার বা সরকারি নেতারা এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, ভালোবেসেছেন, তাই তারা মাত্র কথা বলেছে, তারপর দুএকটা ভাস্কর্য ভাঙবে। এবং সরকার হাত জোড় করবে। না হলে, আ.লীগ ডানপন্থি বড় নেতা, আমলাতন্ত্রের লিডাররা শেখ হাসিনাকে বাধ্য করবেন। কারণ, তারাও লাই প্রাপ্ত গ্রুপ। সুতরাং, এটি স্বাভাবিক। উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। কিছুদিনের মধ্যেই ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে আপসের, যেমন, হেজাবিদের হুঙ্কারের পর শোনা গিয়েছিল। কিছু সৃজনশীল বুদ্ধিজীবী ট্যফো করবেন বা আমার মতো লেখার চেষ্টা করবেন। এবং সত্যিই তা হলো। যখন লিখছি তখন শুনি কুষ্টিয়ায় তারা ভাস্কর্য ভেঙেছে। এসব নিয়ে উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। যাদের বিপদ তারা যদি বিপদ মনে না করে, যাদের করা হয়েছে অপমান তারা যদি অপমান মনে না করে তাহলে আম-জনতার এত উদ্বেগ কেন আমি বুঝতে অক্ষম। আমজনতা বরং জিডিপি বৃদ্ধির চেষ্টায় মনোযোগ দিলে সরকার খুশি হবে। হেজাবিরা [হেফাজত+ জামায়াত+ বিএনপি] অনেকদিন ধরেই ভাস্কর্য ভাঙার দাবি করে আসছে। এবং তাদের দাবির মুখে সরকার বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতা আওয়ামী লীগ বারবার পিছু হটেছে। তারা বলেছে, ভাস্কর্য হটাও। হটিয়েছে, বলেছে, কারিকুলাম বদলাও, বদলেছে। তারা বলেছে, শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে ঢাকা দখলের চেষ্টা করেছি বেশ করেছি। পারলে শেখ হাসিনাকে তখনই ভারত পাঠাতাম। আমাদের নামে ৮৩টা মামলা কেন? সরকার বলেছে, না, না, মামলা চলবে না ভুল করেছি। তারা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের নাস্তিক বলেছে। নিশ্চুপ থেকেছে আওয়ামী লীগ। তারা নারীকে [যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারও আছেন] তেঁতুল বলেছে যা দেখলে লালা পড়ে। আওয়ামী নেতারা সেটাও সমর্থন করেছেন। তাদের যুক্তিতে লজিক আছে এই যে, এসব যদি করা যায় তাহলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বঙ্গোপসাগরে ফেলা যাবে না কেন? আওয়ামী লীগ নেতাদের নাগালে পান কখনও? পেলে যদি [তারা নিজেদের ও দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে ব্যস্ত। ভোটের ব্যাপারটা থাকাতে...লের জনগণের দিকে মাঝে মাঝে তাকাতে হয়। এটি না হলেই হতো উত্তম] জিজ্ঞেস করেন, লিডার কেন আপনারা হেজাবিরা কিছু বললে, লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকেন নববধূর মতো। তাদের স্ট্যান্ডার্ড উত্তর, বুঝছেন তো তারাও তো ভোটার, জনগণের অংশ, ভোট নষ্ট করি কীভাবে? আর আমরাও তো মোছলমান। এ ধরনের মূর্খোক্তি শুনে সবাই হাসেন। তাদের ধারণা মামুনুল বা পীরকে অর্থকড়ি দিলে বা ভাই দুলাভাই ডাকলে ভোটটি তারা নৌকায় দেবেন। শিক্ষিত, সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষজন কীভাবে এমন চিন্তা করতে পারে খোদাই জানেন। বলতে পারেন, আহমদ শফীর সময় হেজাবিরা তো চুপ ছিল। মোটেই ছিল না। তিনি আরো বাজে বাজে কথা বলেছেন, পরে অবশ্য কথা বলার অবস্থা তার ছিল না। কিন্তু যদি প্রাক ঢাকা অভিযান ও ঢাকা অভিযানোত্তর তাদের সম্পদের হিসাব দেখেন তাহলে বুঝবেন কী যেন হয়েছিল। হ্যাঁ, তারা রাস্তায় নামেনি কিন্তু মুখ বন্ধ করেনি। হেজাবি নেতা এখন বাবু জুনায়েদ ও মামুনুল। তাদের পূর্বসূরিরা যদি পাকি দালাল হয়ে থাকেন এবং সরকারি কিছু না পেয়ে থাকেন তাহলে তারা তো বলবেনই। এবং লক্ষ করবেন তারা বিজয়ের মাসেই এসব বলছেন ও করছেন। আগে হেজাবিরা সব সময় চিল্লাতেন শুধু মার্চ ও ডিসেম্বরে চুপ থাকতেন। এবার চুপ থাকেননি। উল্লেখ্য, দেশে মুজিববর্ষ চলছে এবং বাংলাদেশ ৫০ বছরে পড়ছে। তারা সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি এবং বাঙালিদের প্রতি। বলছেন, দ্যাখ, কী করতে পারিস দেখ। তাদের চ্যালেঞ্জের উত্তর কেউ দিতে পারেনি প্রথমে। তরুণ মন্ত্রী নওফেল প্রতিবাদ করেছিলেন মহীউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র বলে, পরে বোধহয় ধমক খেয়ে আর কথা বলেননি। মহীউদ্দিন চৌধুরীকে অবশ্য ধমক দিয়ে কেউ থামাতে পারেননি। তারপর সব চুপ। তারপর খুদ ফেলতে ভাঙা কুলো নির্মূল কমিটিকে প্রতিবাদ জানাতে হলো এবং ১ ডিসেম্বর মাঠে নামার ঘোষণা দিতে হলো। নির্মূল কমিটিসহ প্রায় ১০০টি সংগঠন মাঠে নেমেছিল। সাম্প্রতিককালে এত বড় সমাবেশ আর হয়নি। তবে, দেখিয়েছে চাঁটগাইয়ারা, প্রতিটি শহরে তাদের মতো তরুণরা থাকলে নিশ্চিত হওয়া যেত, সবাই আশাবাদী হয়ে উঠেছিল, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নামছে আওয়ামী নেতাদের ঘরে থাকা অবস্থায়, তাতে আশার কথা। কিন্তু অনেকের মনে হয়েছে আরে গত শতকের ৬০/৭০ দশক ফিরে এলো নাকি তখন তরুণরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারত। রাজনৈতিক নেতাদের মুখ চেয়ে থাকতে হতো না। কিন্তু এটাও জানি, হয়ত খুব শিগগিরই তারা স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আমার কাছে যেটা অবাক লেগেছে তাহলো, রাজনৈতিক নেতা, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তরুণদের এমনকী বুদ্ধিজীবীদের করুণ স্বর। তারা এমনকী আওয়ামী নেতারা হঠাৎ পুরনো সেই তত্ত¡ দেয়া শুরু করলেন, ইসলামী দেশসমূহে ভাস্কর্য আছে সুতরাং এখানে থাকলে ক্ষতি কি? আর মূর্তি ও ভাস্কর্য তো এক নয়। কিন্তু তাদের এটাও বোঝা দরকার, যারা মূর্তি পূজা করছেন তারা সেটি দেবতা জ্ঞানে পূজা করছেন। সুতরাং, ঐ পার্থক্য টানাও ঠিক নয়। মজার ব্যাপার হলো বাবু জুনায়েদ, হক ও পীর যেন এসব জানেন না। খুব জানেন। সৌদি যুবরাজ ও ইহুদি নেতা নেয়াহু একসঙ্গে চুপে চুপে অভিসারে গিয়েছিলেন কই হেফাজতিরা তো শুক্রবারে মসজিদ থেকে মিছিল বের করেনি। অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলো পেয়ারে মত্ত ইসরায়েলের সঙ্গে কই বাবুনাগরীদের তো সে ব্যাপারে কোনো বক্তব্য নেই। কিন্তু এরদোয়ান কেন বঙ্গবন্ধু ও আতাতুর্কের ভাস্কর্য বানাবেন এ ব্যাপারে তারা ক্ষুব্ধ। জামায়াতের আমির বলছেন, এরদোয়ান এখন মুসলমানদের নেতা, তিনি কেন এসব অনৈতিক কাজ করছেন। কারণ, একটা আর্থিক ব্যাপার এর সঙ্গে জড়িত। তারা এখন হয়ত বলবেন, মুসলমানদের কেতাব আছে, ইহুদিদেরও আছে, ইহুদিদের নবী মুসলমানদেরও নবী তাহলে মোহাব্বত হবে না কেন? কিন্তু, ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হবে কারণ তারা ‘সেক্যুলার’ শব্দটি উচ্চারণ করছে। এবং তখন কিন্তু বলা হবে না খ্রিস্টানদের নবীও আমাদের নবী বা তাদেরও কেতাব আছে। তথাকথিত ইসলামী দেশগুলো যেমন ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে তাদের ফ্রন্ট হিসেবে হেজাবিরাও তা করছে। এসব ভণ্ডামি সহ্য করা ক্রমেই অসহ্য হয়ে উঠছে। আপনারা কী জানেন মামুনুল কীভাবে নবী (সা.) কে নিয়ে ঠাট্টা করছে। ইন্টারনেট দেখুন। কিন্তু, বাংলাদেশের কোনো আলেম এর প্রতিবাদ করেননি। ধর্মের নামে সমাজে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা, নবীজীকে নিয়ে ক্যারিকেচার করা যে ধর্ম বিরোধী কাজ এ কথা কোনো আলেম বা রাজনীতিবিদ বলেননি। এত ধর্মদ্রোহিতা ও ধর্ম নিয়ে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ব্যবসা ও ভণ্ডামি সহ্য করে আবার নিজেদের ধর্মপ্রাণ বলি কী করে? প্রয়াত মঈনুদ্দীন খান বাদলের একটি বক্তৃতা শুনলাম। মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, হেজাবিরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙবে। একটা বিষয় অনালোচিত থেকে যাচ্ছে সব সময়। বিশ্বব্যাপী মৌলবাদের উত্থান এবং হেজাবিদের সঙ্গে সরকারের আপসের কারণে বাংলাদেশের সমাজে একটা বিরাট পরিবর্তন হয়ে গেছে। শুধু সরকার নয়, এস্টাবলিশমেন্ট বলতে যা বোঝায় সবাই এখন মোল্লাদের পক্ষে। মধ্যবিত্তদের কতজন নিয়মিত গ্রামে যান জানি না। পূর্বাঞ্চলের গ্রামগুলো এখন সমৃদ্ধ। মাটি বা টিনের বাড়ি প্রায় নেই। আধ মাইলের মধ্যে দু’তিনটি মসজিদ। মাগরেব থেকে রাত ১০টা এবং সকাল সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ পর্যন্ত মাইকে জিকির, ওয়াজ হতে থাকে। এ অবস্থা কয়েক বছর আগেও ছিল না। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের পোলারা রাত জেগে ইউটিউবে ওয়াজ শোনে। মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে যান আমলাদের কাছে বুঝবেন কত ধানে কত অন্ন। একটি উদাহরণ দিই। খুলনায় গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর করেছি আমরা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম গণহত্যা জাদুঘর। কমিশনারের কাছে আবেদন করলাম পরিত্যক্ত একটি বাড়ির জন্য। তিনি বেছে বেছে এমন একটি বাড়ি চিহ্নিত করলেন এক বছর ঘুরিয়ে, যে তাতে কিছু করা কষ্টকর। যেটাতে জাদুঘর হতে পারে সেটি আমলাদের কনভেনশন হল হিসেবে দিলেন। কিন্তু তিনি সই করলেন না কারণ তখন নির্বাচনের একটা আওয়াজ উঠছে। পুরস্কার হিসেবে সরকার তাকে সচিব এবং অবসর গ্রহণের পর গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার চেয়ারম্যান করেছে। পরবর্তী সচিবও একই কাজ করলেন। যা হোক ‘মুক্তিযুদ্ধপন্থি’ জনবিরোধী লোকদের হাওলা থেকে ফাইল উদ্ধার করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছলে ২৪ ঘণ্টায় বরাদ্দ দেন। এসব কারণে মানুষজন শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আর তাকে পাথরের দেয়ালের মতো যারা ঘিরে রেখেছে তাদের পারলে থুতু দেয়। বিটিআরসি বলে মৌলবাদীদের একটি সংস্থা করেছে সরকার, যাদের মূল কাজ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যত কিছু ফেসবুক বা ইউটিউবে আসে সেগুলো অব্যাহত রাখা এবং সরকার/শেখ হাসিনা/ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কেউ কোনো মন্তব্য করলে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের বন্দোবস্ত করা। বিশ্বাস না হয় দেখুন আমাদের বিরুদ্ধে যত মন্তব্য সেগুলো রয়ে গেছে। এবং মামুনুল সাঈদীদের সব বয়ান উজ্জ্বলভাবে রাখা হয়েছে। আসলে আন্দোলনটি এই সংস্থার বিরুদ্ধেও হওয়া দরকার। ১ ডিসেম্বর ভাস্কর্য বিরোধী এতবড় সমাবেশ হওয়ার পর গণমাধ্যমে তাকে ডাউন প্লে করা হয়েছে। মামুনুল ও তার সঙ্গীদের কিছু বয়ান ফেসবুকে আছে। সেখানে তারা তাদের বয়োজ্যেষ্ঠ শাহরিয়ার কবির, জাফর ইকবাল ও বিচারপতি মানিককে যে ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দিয়েছে তা মাদ্রাসার শিক্ষা, আদব লেহাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন মাদ্রাসার শিক্ষকরা এখন বলাৎকারের কারণে অভিযুক্ত তা বোঝা যাচ্ছে। ইতর শ্রেণির লোক ছাড়া এ ধরনের প্রকাশ্য বয়ান কারো পক্ষে সম্ভব না। রসুল (সা.) কে নিয়ে ক্যারিকেচার করা হচ্ছে। এসব বেয়াদবি বা ধর্ম বিরোধী বলে গণ্য হচ্ছে না। এগুলোর মদদ কি আমরা দিচ্ছি না সরকার দিচ্ছে? বিএনপির মিছিল ছত্রভঙ্গ করা হয় আর মামুনুলদের পুলিশ প্রটেকশন দেয়া হয়। তা তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ছুড়ে ফেলবে না তো কারটা ফেলবে? তারা জানে পুরো সরকার তাদের পক্ষে তাই আওয়ামী মিনমিনে লিডারদের ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয় তত্তে¡র বিরুদ্ধে ঘোষণা করা হয়েছে দুটিই হারাম। এবং এ সংবাদ জনকণ্ঠ ছাড়া আবার সব পত্রিকা এড়িয়ে গেছে। গত ১৮ অগ্রহায়ণ হেজাবিদের মহাসচিব জনৈক কাসেমি সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করেছেন “কোরান ও হাদিসের আলোকে এ ফতোয়া দেয়া হয়েছে। পূজার উদ্দেশ্যে না হলেও ভাস্কর্য নির্মাণ করা যাবে না।” এবং যারা এ পার্থক্য করছে তারাও ‘হারাম’ কাজ করছে। সুতরাং বুঝতে পারছেন মক্কা বা জাকার্তা থেকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ইসলামের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। তাদের কেউ জিজ্ঞেস করার সাহস রাখেন না কাবার হাজরে আসওয়াদকে কেন চুম্বন করা হচ্ছে? কাসেমি মামুনুল বা নাগরীর উদ্দেশে বলা উচিত, এতই যদি বাপের বেটা হয় থাকে তারা তবে ক্যান্টনমেন্টের সামনে ও ভেতরে, পিলখানা ও পুলিশ চত্বরের সামনে ও ভেতরে, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চত্বরে যেসব ভাস্কর্য আছে সেগুলো তারা ভাঙার সাহস রাখে কিনা দেখতে চাই। এ ব্যাপারে তারা কোনো কথা বলবে না। পাগল বা বেয়াদবরাও ডাণ্ডা বোঝে। এরা ইনকাম ট্যাক্স দেয় কিনা নাকি পরান্নভোজেই দিনযাপন করে সে বিষয়েও তদন্ত হওয়া উচিত। না দিলে তারা সম্পত্তি করছে কীভাবে? এর জবাব রাজস্ব বিভাগ থেকে পাবেন না। কারণ, পুরো এস্টাবলিশমেন্টকে সরকার ‘ইসলাম ভক্ত’ করে ফেলেছে। দুর্নীতি, প্রগতিবিরোধী বলে কারো সমালোচনা করুন তাহলে দেখবেন তাকেই সরকার পদোন্নতি বা এক্সটেনশন দিচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের নাড়ি নক্ষত্র জানে, কয়েকদিন পর পর রাজনৈতিক নেতাদের ফোনালাপ পাবলিক করা হয় আর হেফাজতিদের নাড়ি নক্ষত্র তারা জানে না বা ফোনালাপ প্রকাশ করা হয় না কেন? এতবড় সাহসী বাবুনাগরী রিমান্ডে নেয়ার কথা শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েন ও স্বেচ্ছায় শাপলা চত্বরে গণ্ডগোল করার জন্য জবানবন্দি দেন, তিনি বলেন, বিএনপি বা ২০ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে হেফাজতের নেতাদের মন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিল। এটি জানার পরও সরকার তাদের প্রতি নীরব ছিল। [জনকণ্ঠ ৪.১২.১২] শুধু তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হঠাৎ স্থবির হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি বিভিন্ন লেখালেখি ও কথাবার্তা শুনে মনে হলো মানুষজন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে দুটি একক হিসেবে চিহ্নিত করেন। হাসিনার প্রতি সবার সমর্থন, আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের সবারই অপছন্দ। বিএনপি না থাকুক, আওয়ামী বিরোধিতা প্রবল হচ্ছে। এ খবর গোয়েন্দা সংস্থা দেবে না। শত জিডিপি বৃদ্ধিতেও মানুষ সন্তুষ্ট নয়। এবং এর কারণ খোঁজারও চেষ্টা করা হবে না কারণ, সরকারি নেতাদের ধারণা তারা জনগণ থেকে বেশি বোঝেন। এ বোঝার কারণে পত্রিকায় দেখি হাজী সেলিমের এত অপকর্মের পরও তাকে যুগলীগের উপদেষ্টা করা হয়। আমরা এসব বিতর্কে যাব না। শেখ হাসিনা যদি কূটনৈতিক প্রথার তোয়াক্কা না করে পাকিস্তান রাষ্ট্রদূতকে বলতে পারেন, বাঙালি পাকিস্তানিদের নৃশংসতা ভুলবে না, তাহলে বাবুনাগরী বা কাসেমিকে এক ঘণ্টার মধ্যে শায়েস্তাও করতে পারেন। এখন প্রশ্ন একটাই দুর্বৃত্তদের সঙ্গে আপস না তাদের শায়েস্তা। বেয়াদবদের ইতরামি মানা না তাদের ভদ্র করা? কে কবে শুনেছে যে, দুর্বৃত্তদের যিশুর বাণী শোনালে তারা ধর্মের পথে আসে? গুণ্ডারা ডাণ্ডা বোঝে। চোর ধর্মের কাহিনী শোনে না এটি বহুদিনের প্রবাদ। আমরা এটা বুঝি, সরকার বোঝে কিনা এটাই প্রশ্ন। হাইকোর্টের মাননীয় বিচারক প্রশ্ন করেছেন দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেল? নিজেরাই বিচার করুন। ভাস্কর্য প্রশ্নে সমঝোতা হলে, সবাই আশঙ্কা করছে হয়ত তাই হবে, তাহলে আওয়ামী লীগ ব্যাপকসংখ্যক সমর্থকদের হারাবে। এমনকী অনেক সক্রিয় আওয়ামী লীগারদেরও। সরকার যদি কওমিদের ভোটে গুরুত্ব দেয় বিরোধিতার কারণে, তাহলে সরকার বিরোধিতা [বা নিস্ক্রিয় থাকা] করাটাই ভালো। তাহলে পদ-পদবী পাওয়া যাবে। লড়াকুদের এস্টাবলিশমেন্ট কখনও পছন্দ করেনি। একটি বিষয় পরিষ্কার করতে হবে সরকারি নেতাদের, বিটিআরসি যা করে তা কি কাম্য? ভাস্কর্য বঙ্গবন্ধুর না হয়ে অন্যের হলে তা কি থাকবে না থাকবে না? আজ কিন্তু এ প্রশ্নও উঠছে। এগুলো বিবেচনা করতে পারেন, নাও পারেন। তখন সৈন্যসামন্ত দিয়ে দেশ চালানো যাবে বটে কিন্তু ইতিহাস তো বলে, বঙ্গবন্ধুর অভিজ্ঞতা তো বলে, তা স্বল্প সময়ের জন্য। বিচ্ছিন্ন করে এ বিষয়টি দেখা সমীচীন হবে না। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য না হলে, ছাত্রলীগ বা যুবলীগ কি এত সোচ্চার হতো? হতো না। কিন্তু এখন যখন তারা মাঠে নেমেছে তখন তরুণদের মতোই তাদের বলা উচিত আমরা যেটিকে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য মনে করি তা থাকবে। হেজাবিরা যা মনে করে তা থাকবে না। এবং সরকারকে আমাদের মতামতও গ্রাহ্য করতে হবে। একটি কারণে এ কথাগুলো বলছি। আমি যখন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক তখন সে বিভাগের ছাত্র ছিলেন আওয়ামী লীগের এক সময়ের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। হেজাবিদের ঢাকা অভিযানের পর বলছিলেন আমাকে, যে, আমি একমত না হলেও নেত্রীর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করব না। হেজাবিদের ঢাকা অভিযানে স্যার মাথায় রক্ত চড়ে গেল। শুনছিলাম, উচ্চপর্যায়ে বোঝানো হচ্ছে আহমদ শফী, বাবুনাগরীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হোক। মনে হলো, এটি হলে তো বঙ্গবন্ধু কেন আমাদেরও মান ইজ্জত থাকে না, তাই ঐ কথা বলেছিলাম। তিনি যা বলেছিলেন, আক্ষরিকভাবে তা মনে নেই, বোধহয় তিনি বলেছিলেন, রাজাকারের বাচ্চাদের ঢাকা ছাড়া করব। হায়! আওয়ামী লীগে, ১৪ দলে, বাম দলগুলোতে এখন আর ঐ রকম কথা বলার সাহস কারো নেই। আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার। অন্যায়ের, ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অর্থ নিজেদের অস্তিত্ব জ্ঞাপন করা। নীরবতা এক ধরনের প্রশ্রয় যা সুশীল বাটপারদের ধর্ম। এবং সে কারণে তা অন্যায়। সরকার যাই করুক, যারা মনে করেন দেশে থাকবেন, দেশটা বাবুনাগরী ও তাদের সন্তানদের জন্য করা হয়নি, করা হয়েছিল আমাদের জন্য, তরুণরা যদি মনে করেন মামুনুলের মতো বেয়াদপদের অধীনে থাকবেন না তাহলে মার খেতে হলেও রাস্তায় নামতে এবং থাকতে হবে যেমন আমরা নেমেছিলাম। ইতিহাস কখনও দুর্বৃত্ত বেয়াদব ইতরদের পক্ষে থাকে না, থাকে আমাদের পক্ষে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App