×

লাইফ স্টাইল

শীতে পানি পান করা কমিয়ে দেবেন না

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:১৮ পিএম

শীতে পানি পান করা কমিয়ে দেবেন না

ফাইল ছবি।

শীতে কমলালেবু, নলেনগুড়ের সন্দেশ, জয়নগরের মোয়া বাজার দখল করলেও শীতের হাওয়া আটকে আছে নিম্নচাপে। কিন্তু, গরমের দাপট কমতে না কমতেই আমাদের পানির তেষ্টা কমে গেছে। আর এর ফলেই অনেকেই ১২–১৪ গ্লাসের বদলে ৫–৬ গ্লাস জল পান করে দিন কাটাচ্ছেন।

পৃথিবীর ৩ ভাগ পানি ১ ভাগ স্থলের মতোই মানুষের শরীরের কোষের প্রধান উপাদান পানি। তাই তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে শরীরের ন্যূনতম জলের চাহিদার কমে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এটাও ঠিক, গরম কালের মতো শীতকালে বাড়তি পানির চাহিদা কিছুটা স্বাভাবিক নিয়মেই কমে যায় বললেন জেরিয়াট্রিশিয়ান কৌশিক মজুমদার। বেশি বয়সে অনেককেই প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরল সহ নানান ধরনের ওষুধ খেতে হয়।

নির্দিষ্ট পরিমাণ পারি পান না করলে শরীরে নানান ক্ষতিকর পদার্থ জমা হতে শুরু করে। আবার উচ্চরক্তচাপ, কিডনির অসুখ, লিভারের অসুখ, হার্ট ফেলিওর ইত্যাদি কারণে অনেকের হাত, পা বা পেটে তরল জমে গিয়ে ফুলে যায় (ইডিমা হয়) বা অল্প পরিশ্রমে শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। তাঁদের শরীরের বাড়তি জলীয় অংশ বের করে দেওয়ার জন্য ল্যাসিক্স জাতীয় ওষুধ খেতে হতে পারে। যারা এই ওষুধ খান, তাঁদের শরীরে জলের চাহিদা তুলনামূলক ভাবে বেশি।

ঠান্ডার ভয়ে স্বাভাবিক পানি পান কমালে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানি খেতে অসুবিধা হলে শীতের সকালে চায়ের আগে ঈষদুষ্ণ জল খেয়ে দিন শুরু করুন। পানীয় জলকে অনেকে ওষুধের সঙ্গেও তুলনা করেন, কেনো না শরীরে জমে থাকা নানান টক্সিক প্রস্রাব ও ঘামের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তাই শীতের দিনেও ন্যূনতম ১.২–১.৫ লিটার জলপান করা দরকার বলে কৌশিক মজুমদারের পরামর্শ। যদিও শীতকালে এয়ারকন্ডিশনে থাকার ঘটনা কম, তবু যাঁদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকার অভ্যাস, তাঁদের শরীরে পানির চাহিদা বেশি। তাঁদের অবশ্যই দৈনিক ১.৫ লিটার পানি পান করা উচিত।

একজন মানুষের কতটা পানি পান করা দরকার- এই প্রশ্নে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত বললেন, অসুখ বিসুখ ছাড়াও একজন মানুষের জলের চাহিদা তাঁর স্বাস্থ্য, দৈহিক ওজন, কায়িক পরিশ্রমের পরিমাণ ও স্থানীয় আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করে। বিশ্বের যাবতীয় প্রাণীর মতো মানুষের শরীরের প্রধান উপাদান পানি। আমাদের ওজনের প্রায় ষাট শতাংশ জলীয় উপাদান। এটি শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করার পাশাপাশি সংবেদনশীলতা রক্ষা করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আবার মেটাবলিজিম বা বিপাকীয় প্রক্রিয়া এবং শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশন বা রেচন প্রক্রিয়াতেও জলের প্রয়োজন খুব বেশি। শ্বাস প্রশ্বাস থেকে শুরু করে ঘাম বা মলমূত্র ত্যাগ, সব কাজেই শরীর থেকে কিছু পানি বাইরে বেরিয়ে যায়। তাই দৈনিক আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করতেই হয়।

গবেষণার তথ্য অনুসারে, দেশে একজন সুস্থ স্বাভাবিক নীরোগ পুরুষের দিনে ৩–৩.৭ লিটার ও মহিলাদের ২.৫–২.৭ লিটার পানি পান করা উচিত। মাঝারি গ্লাসের হিসাবে দৈনিক ১০–১৪ গ্লাস। এর সঙ্গে প্রতি আধ ঘণ্টা কায়িক পরিশ্রমের জন্য বারো আউন্স জল পান করা দরকার। এ ছাড়া ব্যায়াম বা জিম করার আগে, মাঝে বা পরে লেবুর শরবৎ বা প্লেন পানি পান করলে ভালো হয়। সন্তানসম্ভবা মহিলা ও যে সব মায়েরা বাচ্চাকে স্তন্যপান করান, তাঁদেরও স্বাভাবিকের থেকে বেশি পানি খাওয়া উচিত। আবার উষ্ণ বা আর্দ্র আবহাওয়ায় ও অতিরিক্ত উচ্চতাতেও শরীরে পানির অভাব দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে জল মেপে খেতে হয়, বাড়তি জল বা জলীয় জিনিস কিডনি ও হার্টের উপর চাপ ফেলে।

শরীরে জলের ঘাটতি থাকলে ক্লান্তি বাড়ে, কাজে অনীহা দেখা দেয়, প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। যেসব বয়স্ক পুরুষ প্রস্টেটের অসুখে ভুগছেন, তাঁদের সন্ধের পর বেশি পানি খেলে বার বার বাথরুমে যেতে হয়। তাই প্রস্টেটের অসুখে সারা দিনে প্রয়োজনীয় পানি পান করে বিকেলের পর থেকে অল্প পরিমাণে পানি খাওয়া উচিত। অন্যদিকে, কিডনিতে স্টোন থাকলে বেশি পানি খেলে প্রস্রাবের সঙ্গে ছোট স্টোন বেরিয়ে যেতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App