×

জাতীয়

টিকা নিয়ে অপবাণিজ্যের শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৫৫ এএম

টিকা নিয়ে অপবাণিজ্যের শঙ্কা

ডার্ক ওয়েবে ভুয়া টিকার বিজ্ঞাপন!

বিশ্বজুড়ে করোনা টিকার প্রবল চাহিদা অথচ জোগান নিতান্তই সীমিত। এ বাস্তবতার সুযোগে করোনা টিকা নিয়ে দেশে দেশে অসাধু বাণিজ্যিক তৎপরতা শুরুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বৈশ্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষসমূহ। তাদের আশঙ্কা, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বৈধ অনুমোদন পাওয়া এসব করোনা টিকার ‘নকল’ সংস্করণ অবৈধ ল্যাবে উৎপাদন করে চড়ামূল্যে তা বাজারে ছড়িয়ে দিতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুলিশি সংস্থা ইউরোপোল এবং আন্তর্জাতিক পুলিশ নেটওয়ার্ক ইন্টারপোল তাদের পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের ভিত্তিতে বলছে, একদিকে ডজন ডজন ভ্যাকসিন উদ্ভাবন হচ্ছে; আর অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে চলছে ‘কাড়াকাড়ি’। প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে আগেভাগেই তা কিনে নিজেরা মজুত করার প্রবণতা। ফলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ বৈশ্বিক অপরাধী চক্রগুলোও।

ইন্টারপোল বলছে, অনেক ভুয়া ওয়েবসাইট রাতারাতি গজিয়ে গেছে ‘ডার্ক ওয়েব’ বাজারে। সেখানে অনুমোদিত কোম্পানির লোগো ব্যবহার করেই ভুয়া ভ্যাকসিনের বিজ্ঞাপন দিয়ে রেখেছে তারা। আগামী কয়েক সপ্তাহের ভেতর বাজারে প্রচুর ভেজাল ভ্যাকসিনের আনাগোনা দেখা যেতে পারে। তাদের লক্ষ্য, ব্যক্তির পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি কোম্পানিগুলোকে প্রলুব্ধ করে তাদের হাতে ভেজাল টিকা গছিয়ে দেয়া। এর ফলে সমাজে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা করছেন তারা।

পাশাপাশি করোনা টিকার সংগ্রহ, মজুত, সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থায় সরকারি দুর্বলতার সুযোগে চালকের আসনে উঠে আসতে পারে বেসরকারি উদ্যোক্তারা। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত তদারকি নিশ্চিত করা না গেলে ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে, যার একাধিক নজির বাংলাদেশেও দেখা গেছে বিগত কয়েক মাসে।

উল্লেখ্য, করোনা বছরের শুরু থেকেই স্যানিটাইজার, পিপিই ও মাস্ক নিয়ে কালোবাজারি ও অপবাণিজ্যের খবর বারবার শিরোনাম হয়েছে গণমাধ্যমে। অপবাণিজ্য হয়েছে করোনা পরীক্ষার ফল এবং করোনামুক্তির সনদ নিয়েও। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে জরুরি পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে বিভিন্ন ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে এসব দেশের সরকার। যদিও পরবর্তীতে আবার প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে তার অনেকগুলোই। চলতি বছর জুলাই মাসের দিকে ভারতে করোনা রোগীর মৃত্যু রোধে জরুরি ওষুধ হিসেবে রেমডেসিভির ও টোসিলিজুমাব নামে দুটি ওষুধের অনুমোদন দেয় সরকার। কিন্তু এ ঘোষণার পরপরই রাতারাতি বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় এসব ওষুধ। অভিযোগ ওঠে, ওষুধগুলো কারখানা থেকে নির্ধারিত হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সেগুলো মজুত করা হচ্ছে। পরে চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে কালোবাজারে। বাধ্য হয়ে রোগীকে খুচরা মূল্যে ৭ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি দাম দিয়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একপর্যায়ে দিল্লিসহ ভারতের অনেক শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমে আসতে হয় প্রশাসনকে। মুম্বাইয়ে পুলিশ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযানে নামতে হয় খোদ মন্ত্রীকেও।

করোনা টিকা নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব : করোনা টিকা এসে গেলেও তার ওপর কিন্তু ভরসা রাখতে পারছে না বিশে^র সব মানুষ। খোদ ব্রিটেনেই করোনা টিকার বিরুদ্ধে বিশাল শোভাযাত্রা বের হয়েছে, যাতে যোগ দিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। করোনা সংক্রমণের গোটা বিষয়টিকে বিবেচনা করছেন ‘করোনাজুজু’ হিসেবে। তাদের মতে, এসবই মূলত ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষ ও শাসকশ্রেণির ষড়যন্ত্র। তাদের ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টামাত্র। এদিকে কাউকে জোরপূর্বক টিকা নিতে বাধ্য করার কোনো আইন নেই ব্রিটেনে। ফলে যে কেউই অস্বীকার করতে পারেন টিকা নিতে। তাছাড়া বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাও বলে দিয়েছে, করোনা টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক হোক, এটি তাদের চাওয়া নয়। তারা মনে করে, মানুষের মধ্যে প্রচারণার মাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করে কাজটি এগিয়ে নিতে হবে, যাতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসে মানুষ। করোনা টিকা নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রবক্তারা বলছেন, অবিশ্বাস্য গতিতে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের খেল দেখাল এসব ওষুধ কোম্পানি, তা সন্দেহজনক। কেননা, এর আগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে ভাইরাস মোকাবিলায় এত অল্প সময়ের মধ্যে ভ্যাকিসন উদ্ভাবনের কোনো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। তারা আরো বলছেন, ফাইভ-ডি প্রযুক্তির কারণেই মহামারি ছড়িয়েছে বিশ্বে। নতুন শতকে নতুন একটি বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ভিত্তি রচনা করা হচ্ছে এসবের মধ্য দিয়ে। তবে এত কিছুর পরও ব্রিটেনের জরিপেই দেখা যাচ্ছে, জনসংখ্যার অন্তত দুই-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ এখনো ভরসা রাখছেন ভ্যাকসিনের ওপর, আস্থা রাখছেন বিজ্ঞানের ওপর।

কিন্তু ভ্যাকসিন কি আসলেই শতভাগ নিরাপদ ও কার্যকর, যেমনটি দাবি করছেন এর উদ্ভাবকরা? এর উত্তরে ভরসার জায়গা একটাই, মাসের পর মাস ধরে প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয় দফায় লাখ লাখ স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পরই তারা দাবি করছেন, কারো টিকা ৯৫ শতাংশ সফল, কারো টিকা ৯০ শতাংশ সফল কিংবা কারো টিকা ৭০ শতাংশ সফল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় অবশ্য কোনো একটি টিকা পঞ্চাশ শতাংশের বেশি কার্যকর দেখা গেলেই তাকে অনুমোদন দিতে কোনো আপত্তি নেই। যদিও একেক দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করেই শেষ পর্যন্ত একেক ধরনের টিকার অনুমোদন দিচ্ছে একেক দেশ। অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রথম বিশে^ও সবগুলো পরীক্ষাপর্ব পেরিয়ে ৩ মাস সময় লেগে যাবে করোনা টিকার অনুমোদন পেতে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App