বিজয়ের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৪৬ পিএম
স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছে তা অস্বীকার করার জো নেই। কিন্তু প্রত্যাশিত জীবনযাত্রার মান অর্জন করা গেছে কিনা এবং সর্বস্তরের মানুষের জীবনের মান পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রায়ই চায়ের কাপে ঝড় উঠে। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা এখন বিদেশে রপ্তানি করছি। এ কৃতিত্ব বর্তমান কৃষিবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার ও দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের। তবে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা আজো সম্ভব হয়নি। ভেজাল খাবার খেয়ে প্রতি বছর তিন লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ক্যানসারসহ বিভিন্ন মরণব্যাধি রোগে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ, আইন প্রণয়ন হলেও এর বাস্তবায়ন বড়ই হতাশাজনক। দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ২০১৩ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ নামে আলাদা সেল গঠন করা হলেও আক্ষরিক অর্থে এই কর্তৃপক্ষ প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠির অন্যতম পরিমাপক হলো দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন, রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর ওপর নির্ভরশীল। স্বাধীনতার আগে রাজনীতি যেমন আমাদের রাষ্ট্রীয় ভীত গড়ে দিয়েছে, তেমনই স্বাধীনতা-পরবর্তী রাজনীতি আমাদের দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে তা এক বাক্যে স্বীকার করতেই হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদার্পণ করলেও বাংলাদেশে ক্রমাগত বিভাজনের রাজনীতি চর্চার ফলে জাতিগত ঐক্যের সৃষ্টি হয়নি। আদৌ কখনো হবে কিনা তা নিয়েও শতভাগ সংশয় রয়েছে। ক্ষমতার গদি দখলের রাজনীতি চর্চার ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে প্রায় সারাটি বছর। স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের শক্তি, মৌলবাদী গোষ্ঠী, ভারতের দালাল, চীন-পাকিস্তানের দোসর, নাস্তিক-ধর্ম বিদ্বেষীসহ বিভিন্ন ভাগে নিজেরা নিজেদের বিভক্ত করে ফেলেছি।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বেহালদশা উন্মোচিত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির ফলে এ খাতের এমন ভঙ্গুর দশা সৃষ্টি হয়েছে। মানসম্মত সেবা না পাওয়ার ফলে একান্ত বাধ্য না হলে নাগরিকরা এখন সরকারি হাসপাতাল যায় না। স্বাস্থ্য খাতের এই অনিয়মের মহোৎসব তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে; যা কঠোর হস্তে দমন না করলে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ সুযোগে চিকিৎসার নামে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে বেসরকারি ক্লিনিকসমূহ। শুধু চিকিৎসা খাত নয়। বাংলাদেশের প্রত্যেক খাতেই যেন দুর্নীতির কালো থাবা চেপে আছে।
পররাষ্ট্রনীতিতে আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে পেরেছি পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রের সঙ্গে। প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে এ সম্পর্ক আরো মজবুত। আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সমুদ্র বিজয়, ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় পররাষ্ট্রনীতির সফলতার উদাহরণ। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্তে নির্বিচারে নির্ভীক হত্যাকাণ্ড, বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণ, সংস্কৃতি বিনিময়ে সমতা আনয়ন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের আরো শক্ত পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে সার্বিক খাতে উন্নয়ন হয়েছে। তবে সর্বত্র সমতাভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। শহরকেন্দ্রিক উন্নয়নে ঝুঁকে পড়ার ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিস্তর ফারাক সৃষ্টি হয়েছে। দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। দুর্নীতি দমন এবং আইনের সুশাসন নিশ্চিতকরণ সম্ভব হলে দেশ বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া।
[email protected]