×

সারাদেশ

অর্ধ ডজন প্রার্থী নিয়ে বিপাকে আ.লীগ, একক প্রার্থী বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২০, ০৬:০৫ পিএম

অর্ধ ডজন প্রার্থী নিয়ে বিপাকে আ.লীগ, একক প্রার্থী বিএনপির
নির্বাচন কমিশন দু’দফায় পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌর এলাকায় নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে। যদিও এ পৌরসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো চুড়ান্ত হয়নি। তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তৃতীয় দফায় এ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে দলীয় মনোনয়ন পেতে অর্ধ-ডজন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বেশী প্রার্থী হওয়ায় দলটির ভেতরে কোন্দল প্রকট আকার ধারন করছে। অপরদিকে, বিএনপি থেকে পরপর দু’বার নির্বাচিত বর্তমান মেয়র অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভূইয়ার (জয়) নাম চুড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে, জাতীয় পার্টি থেকে দলের প্রার্থী হিসেবে আবু বক্কর সিদ্দিকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ২০০১ সালে সিংগাইরকে পৌরসভা ঘোষণা করা হলে পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সে সময়ের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ কামরুন্নাহার। ২০০২ সালে ৩০ জুন সিংগাইর পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র ২৯ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মীর মোঃ শাহজাহান বিএনপি প্রার্থী প্রয়াত দেওয়ান মোজহারুল হক মহরকে পরাজিত করে প্রথম পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার পর ২০১১ সালে ১৭ জানুয়ারি বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভূইয়া (জয়) ৬ হাজার ১৭৩ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মীর মোঃ শাহজাহান পান ৫ হাজার ৬৩৬ ভোট। তৃতীয় হন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত এমএম আলমগীর হোসেন। এর পর সরাসরি দলীয় প্রতীকে ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভূইয়া (জয়) ৬ হাজার ৮৭৬ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মীর মোঃ শাহজাহান পান ৪ হাজার ৫১০ ভোট। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের আবু নাঈম মোঃ বাশার পান ৩ হাজার ৩৭৯ ভোট। উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এবার পৌরসভার মোট ভোটার ২২ হাজার ৬০৩ । এর মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ৭৫ ও নারী ভোটার ১১ হাজার ৫২৮। বিগত ৩ টি নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী প্রথমবার আওয়ামী লীগ পরবর্তীতে পরপর দু’বার বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেন। বিএনপি চাচ্ছেন এবারও পৌর মেয়রের চেয়ারটি তাদের দখলে রাখতে। আওয়ামী লীগ পুনরুদ্ধারে মরিয়া। কিন্তু তাদের জন্য দলীয় কোন্দল এখন গলার কাঁটা। বিগত সময়ের নিবার্চনে দলটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাদের মেয়র পদটি হাত ছাড়া হয়। গত উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল আরো চরম আকার ধারন করে। ফলে, আসন্ন পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রার্থী যার যার মতো নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দলের দায়িত্বশীলরা চাচ্ছেন যে কোনো উপায়ে কোন্দল মিটিয়ে পৌর নির্বাচনে একক প্রার্থী দিতে। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা হচ্ছেন-সাবেক মেয়র মীর মোঃ শাহজাহান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাউল সম্রাট প্রয়াত আব্দুর রশিদ সরকারের পুত্র আবু নাঈম মোঃ বাশার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুল বারেক খাঁন ওবায়েদুল হক, সিংগাইর ডিগ্রী কলেজের সাবেক ভিপি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম খান রতন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আলমগীর হোসেন খাঁন। সেই সাথে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন (বিটিএফ) থেকে আওযামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ শহিদুর রহমান (ছায়েদ) জোটের মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন। এদিকে , বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভূইয়ার (জয়) মনোনয়ন চুড়ান্ত হলেও সাবেক ছাত্রদল নেতা মোঃ জাহাবুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। বিগত নির্বাচনের ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, পৌর এলাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভোটের পাল্লা ভারী। প্রথম নির্বাচনের পর দলটিতে কোন্দলের কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় দলীয় দু’টি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর ভোটের অংকে অবস্থান দাঁড়ায় তৃতীয়তে। দলীয় কোন্দল থাকায় এবারের নির্বাচনেও একাধিক প্রার্থী যার যার মতো মাঠে নেমেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দলীয় কোন্দল মিটিয়ে একক প্রার্থী না হলে ভোটের পাল্লা ভারী হওয়া সত্ত্বেও এবারও পরাজয় ঘটবে ক্ষমতাসীন দলটির। টানা তৃতীয় বারের মতো হাতছাড়া হবে মেয়রের চেয়ারটি। এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম বলেন, বিগত নির্বাচনে দু’জন প্রার্থী থাকায় নৌকার ভোট বেশি থাকা সত্ত্বেও বিজয় সম্ভব হয়নি। এবার অনেক প্রার্থী থাকলেও যে কোনো উপায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একজনকে প্রার্থী করা হবে। যাতে জয় সুনিশ্চিত হয়। বিএনপি চাচ্ছে এবারও তাদের প্রার্থী অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভূইয়া জয়কে দিয়ে চেয়ারটি ধরে রাখতে। সেভাবেই তারা প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। গত নির্বচনে সীমানা নিয়ে একটি রিটের প্রেক্ষিতে নিবার্চন পিছিয়ে গেলে প্রশাসন ও মিডিয়ার নিরপেক্ষ ভূমিকায় ক্ষমতাসীন দলটি প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলে শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় এবং কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা বিএনপির প্রার্থীর কাছ থেকে সুবিধা নেয়ায় সহজে বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থী। পৌর এলাকার কলেজ রোডের বেহাল দশা, ড্রেনেজ ব্যবস্থায় জলাবদ্ধতা ও পৌরসভার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ বর্তমান মেয়র। এ প্রসঙ্গে মেয়র অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভুইয়া (জয়) বলেন, বিগত দিনের কাজ দেখে এবারও পৌরবাসী আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবেন। মেয়র নির্বাচিত হয়ে সি থেকে বি ক্যাটাগরিতে উন্নীত করেছি। ঢাকার সন্নিকটে এ পৌরসভাটিকে আগামীতে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করবো আশা করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App