×

সাহিত্য

সরকার পাশে থাকলে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পাব!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০৫ এএম

সরকার পাশে থাকলে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পাব!

ফাইল ছবি।

স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ৪৭তম পর্ব।

শতবর্ষের ঐতিহ্যে লালিত ঐতিহাসিক জনপদ গাজীপুর। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংশ্লেষে কালোত্তীর্ণ মহিমা ও অপার সম্ভাবনায় ভরপুর এই জেলা। শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অগ্রগামী এ জেলার মাটিতেই ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা পর্বে সংঘটিত হয় প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। লোকশ্রুতি রয়েছে, মহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে জনৈক মুসলিম কুস্তিগীর গাজী এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। এই পালোয়ানের নামানুসারেই জায়গাটির নাম গাজীপুর রাখা হয় বলে। আরেকটি জনশ্রুতি, সম্রাট আকবরের সময় চব্বিশ পরগনার জায়গিরদার ছিলেন ঈশা খাঁ। তার একজন অনুসারীর ছেলের নাম ছিল ফজল গাজী, যিনি ছিলেন ভাওয়াল রাজ্যের প্রথম ‘প্রধান’। তার নামের সঙ্গে যুক্ত ‘গাজী’ পদবি থেকে এই অঞ্চলের নাম রাখা হয় গাজীপুর। তবে আগে নাম ছিল জয়দেবপুর। তারও আগে এই স্থান পরিচিতি পায় ‘ভাওয়াল’ হিসেবে।

ভাওয়ালের জমিদার ছিলেন জয়দেব নারায়ণ রায় চৌধুরী। বসবাসের জন্য তিনি পীরাবাড়ি গ্রামে একটি ঘর নির্মাণ করেন। গ্রামটি ছিল চিলাই নদীর দক্ষিণ পাড়ে। তখন ওই জমিদার নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে অঞ্চলটির নাম রাখেন ‘জয়দেবপুর’। গাজীপুরের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে কালিয়াকৈরে মৌর্য শাসন আমলে সম্রাট অশোক নির্মিত সাকাশ্বর বৌদ্ধস্তম্ভ, ৫০০ বছর আগে খননকৃত বিশাল দীঘি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক, নুহাশপল্লী, ম্যাশ রয়েল পার্ক। অপূর্ব সবুজ আর শিল্প সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ প্রাচীন জনপদ গাজীপুরও করোনার থাবায় ম্লান হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, গাজীপুরে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। সংস্কৃতিকর্মীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় দেড় হাজারের অধিক। এদের মধ্যে অনেকে নগরকেন্দ্রিক সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে যুক্ত, যারা নানা অনুষ্ঠান করে সংসার চালান। এ ছাড়া গ্রামগঞ্জে হাটেবাজারে বাউলসহ বিভিন্ন গান করে বেড়ান অনেকেই। তারা এখন বেকারত্বের বোঝায় নুয়ে পড়েছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে সহায়তার জন্য ৩৫০ জনের তালিকা পাঠানো হলেও এদের মধ্য থেকে সহায়তা দেয়া হয়েছে মাত্র ১০০ জনকে!

গাজীপুর উদীচীর সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাধব আচার্য ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার ধাক্কায় সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে অনেক শিল্পী ছিটকে পড়ে কেউ চা দোকান, কেউ ওষুধের ফার্মেসি, কেউ মুদি দোকানদারি করছে এখন। আমি নিজেও ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। বাজার থেকে পলিথিনের প্যাকেটে করে চাল আনতে গিয়ে লজ্জায় মরে যাই।

৪ দশকেরও অধিক সময় ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত এই সংগঠক বলেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শিল্পীরা থাকলে মৌলবাদীরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার সাহস পেত না। মৌলবাদীদের আস্ফালন থামাতে শিল্পীদের সহায়তা এবং সংস্কৃতি খাতের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নইলে দেশ আগাবে কি করে?

সংগীত প্রশিক্ষক ও সংগঠক বিল্লাল হোসেন বলেন, গানের টিউশনি করেই আমার সংসার চলে। এখন সবই বন্ধ থাকায় নিরুপায় হয়ে বাড়ির সবজি বাগানে চাষ করছি। পাশাপাশি আমার স্ত্রী হাঁস-মুরগি লালনপালন করছে।

নৃত্য প্রশিক্ষক আশরাফি ফরিদ বলেন, অল্প কিছু সঞ্চয় ছিল, করোনার থাবায় তাও বহু আগে শেষ হয়ে গেছে। এরপর আত্মীয়দের কাছ থেকে ঋণও নিয়েছি।

নৃত্যশিল্পী এঞ্জেলিনা পিয়ানা রোজারিও বলেন, আমরা যারা সংস্কৃতিচর্চা করি তারা এটি বলতে পেরে গর্ববোধ করি। কিন্তু তা বলার পরিবেশটা সম্ভবত দিনদিন সংকুচিতই হয়ে আসছে। সরকার পাশে থাকলে এবং সহায়তা অব্যাহত রাখলে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পাব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App