×

সারাদেশ

অবহেলায় পড়ে আছে রাণীনগরের আতাইকুলা বধ্যভূমি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৪৭ পিএম

অবহেলায় পড়ে আছে রাণীনগরের আতাইকুলা বধ্যভূমি

উদ্যোগ নেই সংরক্ষণের

কবে বাস্তবায়ন হবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আতাইকুলা গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী একমাত্র ঐতিহাসিক ৫২ জন শহীদের বধ্যভূমিতে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও আজও উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। কবে বাস্তবায়ন হবে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা। দীর্ঘ ৫ বছর পার হলেও বাস্তবায়ন করা হয়নি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা। বধ্যভূমিটি শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের উদ্দ্যোগে কোনো রকমে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাত্র। কিন্তু এটি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে আগামীর প্রজন্মের কাছে নতুন করে তুলে ধরতে ৫২ জন শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনার দ্রুত বাস্তবায়ন চান শহীদ পরিবার ও স্থানীয়রা।

ওই দিনের নারকীয় ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়া উপজেলার আতাইকুলা গ্রামের প্রদ্যুত চন্দ্র পাল, সাধন চন্দ্র পাল ও নিখিল চন্দ্র পাল ওই দিনের করুন হত্যাযজ্ঞের কাহিনী অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্ণনা করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল সকাল ১০ টায় ছোট যমুনা নদী পার হয়ে আসে একদল হানাদার বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধারা এই গ্রামে আছে বলে তারা সন্দেহ করে প্রথমে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে প্রতিটি বাড়ি থেকে নগদ টাকা স্বর্ণালংকারসহ বাড়ির নারী-পুরুষকে ধরে নিয়ে ওই গ্রামের বলরাম চন্দ্রের বাড়ির উঠানে নিয়ে যায়। সেখানে পুরুষদের উঠানে সারিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রাখে আর উঠানের পাশেই নারীদের এক ঘরে রাখে। একের পর এক নারীদের ওপরে চালায় পাশবিক নির্যাতন। পরে সারিবদ্ধ পুরুষদের ওপরে চলে ব্রাশ ফায়ার। মুহুর্তের মধ্যেই ওই গ্রামের ৫২ জন শহীদ হন। পরে তারা বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়। শহীদদের মধ্য থেকে গুলিবিদ্ধ হয়েও কোনো রকমে বেঁচে যায় প্রদ্যুত পাল, সাধন পাল ও নিখিল পাল।

প্রদ্যুত পাল জানান, ওই দিন তার বাবা, কাকা জ্যাঠা এবং গ্রামের লোকজনের সাথে তাকেও সারিবদ্ধ করে চালায় ব্রাশ ফায়ার। মুহুর্তের মধ্যে প্রাণ হারায় ৫২ জন লোক। হানাদার বাহিনীরা চলে যাবার পর রক্তাক্ত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশের মধ্য থেকে কোন রকমে বেঁচে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় সে তার বাড়িতে যায়।

সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক গত ১৯৯৬ সালে নিজ উদ্যোগে কিছু অনুদান দিয়ে কোনো রকমে ফলকে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করার কাজ সম্পন্ন করেন। এরপর এখানে আর কোনো কাজ হয়নি। তাই বধ্যভূমিটি পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।

শহীদ গোবিন্দ চরন পালের ছেলে গৌতম পাল বলেন, অনেক চেষ্টার পর ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৫২ জন শহীদের আত্মদান স্মরণে বধ্যভূমি সংরক্ষণ, শহীদদের নাম সরকারি গেজেট অন্তর্ভুক্তি, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ ও শহীদদের অসহায় পরিবারকে মূল্যায়ন ও আর্থিক সাহায্য প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের সমস্যার কারণে এখন পর্যন্ত বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আমরা ইতোমধ্যেই ৮ শতাংশ জমি বধ্যভূমিতে দান করেছি। আশা রাখি দ্রুতই বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। আর আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ করা হবে।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগকে জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App