×

জাতীয়

টিকা এখন হাতের নাগালে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৩০ এএম

সব প্রতীক্ষার ইতি ঘটিয়ে করোনাবর্ষের বিদায়ী মাসেই মানবজাতির হাতের নাগালে এসে গেছে টিকা। হার না মানা কঠিন লড়াইয়ের পর বছর ফুরানোর আগেই করোনাজয়ের দরজায় টোকা দিতে শুরু করেছে বিশ্ব। আগামী সোমবার গণহারে মার্কিন কোম্পানি ফাইজারের টিকার প্রয়োগ শুরু হচ্ছে ব্রিটেনে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক ভরসা দিয়ে বলেছেন, মাসখানেকের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে দেশের পরিস্থিতি। একই ধরনের আশাবাদী চিত্র মিলছে রাশিয়াতেও। রুশনেতা ভ্লাদিমির পুতিনও বলেছেন, সে দেশে ‘স্পুটনিক-ফাইভ’ টিকার প্রয়োগ শুরু হচ্ছে এ সপ্তাহেই। পাশাপাশি এ সপ্তাহে সম্ভাব্য অনুমোদন পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রেও শুরু হতে যাচ্ছে টিকার প্রয়োগ। খুব একটা পিছিয়ে নেই অস্ট্রেলিয়াও। সে দেশের স্বাস্থ্যমস্ত্রী গ্রেগ হান্ট বলেছেন, জানুয়ারি মাসের শেষ নাগাদ ফাইজারের টিকার অনুমোদন দিতে পারেন তারা। আপাতত প্রক্রিয়া চলছে তার। আগামী মার্চ মাস নাগাদ গণহারে টিকাদান শুরুর পরিকল্পনা করছেন তারা। জানা গেছে, উন্নত দেশগুলোর ধারাবাহিকতায় পালাক্রমে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশসহ বিশে^র অন্যান্য দেশেও শুরু হবে করোনা প্রতিরোধী টিকার প্রয়োগ।

প্রায় শ দুয়েক প্রতিযোগীর মধ্যে টিকাদৌড়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে চার কোম্পানির টিকা। এগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও ফাইজার, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড এবং রাশিয়ার স্পুটনিক-ফাইভ। আপাতত এ চার টিকার ওপর ভরসা রেখেই লড়াইয়ের শেষ দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ব।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরে প্রথম মাসের প্রথম দিনেই প্রাণঘাতী রূপ নিয়ে বিশে্বর বুকে অবতীর্ণ হয় নভেল করোনা ভাইরাস। শুরুতেই সপ্তাহ দুয়েক গোটা চীনকে তছনছ করার পর মাস পেরোনোর আগেই তা ছড়িয়ে যায় বিশে^র অন্যান্য অঞ্চলে। ইউরোপে করোনার কালো থাবায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়া ইতালি, ইংল্যান্ড, স্পেন, জার্মানি আর ফ্রান্সে নিঃশব্দে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে শুরু করে হাজারে হাজারে মানুষ। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা পৌঁছে যায় লাখের কোটায়। অদৃশ্য এবং অজানা এই ঘাতকের আক্রমণে বিশ্ব যখন দিশাহারা, তখন এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি। দিন-রাত ভুলে বিশ^জুড়ে করোনার প্রতিষেধক উদ্ভাবনে মনোনিবেশ করেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী আর গবেষকরা। আশায় বুক বাঁধে মানুষ। শুরু হয় প্রতীক্ষার কাল। সে প্রতীক্ষার অবসান ঘটল অবশেষে। মাসের পর মাস দফায় দফায় পরীক্ষা আর পুনঃপরীক্ষার পর গত সপ্তাহে মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার এবং জার্মান বায়োএনটেকের উদ্ভাবিত টিকার চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেয় ব্রিটিশ সরকার।

যদিও বছরভর জারি থাকা বিপর্যয় টিকার আগমনে রাতারাতি কেটে যাবে বলে মনে করছে না জাতিসংঘ। যথারীতি আরো এক দফা ‘সতর্কবাণী’ উচ্চারণ করে সংস্থার মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতিসাধন ইতোমধ্যে করে ফেলেছে করোনা ভাইরাস, টিকার সামর্থ্য নেই সহসাই সে ক্ষতি পূরণের।

যুক্তরাষ্ট্রে টিকা নিয়ে প্রস্তুত ফাইজার ও মডার্না, এখন শুধু অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষা। আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহে মিলে যাবে সেটিও। কিন্তু প্রতিষেধক নিয়েই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে দেশটির একটি বড় অংশ। তাদের ভয় দূর করতে এগিয়ে এসেছেন দেশটির সাবেক তিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, জর্জ বুশ ও বারাক ওবামা এবং হবু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। জানিয়েছেন, প্রতিষেধক যদি নিরাপদ হয়, তাহলে গণমাধ্যমের সামনেই টিকা নেবেন তারা, যাতে তাদের দেখে টিকা নিতে উৎসাহী হন দেশের মানুষ। এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বারাক ওবামা বলেন, দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি এন্ড ইনফেকশাস ডিজিস (এনআইএআইডি) ডিরেক্টর অ্যান্থনি ফাউচির আশ্বাস পেলেই এগিয়ে যাবেন তিনি। ফাউচি যদি বলেন, টিকাটি নিরাপদ, তাহলেই টিকা নেব আমি। সিএনএনের কাছে একই মত দিয়েছেন বাইডেনও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App