×

সারাদেশ

অন্যের জমি দখল করতে মন্দিরের জমি দান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:০৫ পিএম

অন্যের জমি দখল করতে মন্দিরের জমি দান

প্রতীকী ছবি

মাঠ রেকর্ড জাল করে অন্যের জমি মন্দিরের নামে লিখে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ভূমিদস্যূর বিরুদ্ধে। জমির কিছু অংশ দান দেখিয়ে বাকি অংশ দখল করাই এর মূল উদ্দেশ্য। ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের মিঠাপুকুরের শঠিবাড়ীতে। শঠিবাড়ীর সাহাপাড়ায় ১৯৮২ রাধেশ্যাম সাহা নামে এক ব্যক্তি এলাকার গণ্যমান্যদের সঙ্গে নিয়ে গৌরগোবিন্দ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দির এলকায় ওই জমির বাইরেও তার অনেক জমি রয়েছে। ২০০০ সালে রাধেশ্যামের মৃত্যুর পর ছেলে দিলীপ কুমার সাহা, হরেন্দ্রনাথ সাহাসহ ৬ ছেলে জমির মালিকানা লাভ করেন। কিন্তু অরুন কুমার রায় নামে এলাকার এক চিহ্নিত ‍ভূমিদস্যূর দৃষ্টি পড়ে ওই জমিতে। জাল কাগজপত্র বানিয়ে ৩ শতাংশ জমি মন্দিরের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন তিনি। আর মন্দিরের পার্শ্ববর্তীসহ একই মৌজার ৮৯ শতাংশ জমি নিজে দখলের পায়তারা শুরু করেন।

রাধেশ্যামের ছেলে জমির শঠিবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ সাহা জানান, জাল রেকর্ড দিয়ে অরুনের দানপত্র করার বিষয়টি জানতে পেরে তারা উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুজ্জামান মণ্ডলের কাছে যান। খায়রুজ্জামান ওই দলিল লেখক শামীম রেজাকে ডেকে জানতে চান, দানপত্র লেখার সময় নথিপত্র যাচাই করা হয়েছে কি না। তবে শামীম রেজা এর সদুত্তর দিতে পারেন নি।

শামীম রেজা ভোরের কাগজ প্রতিবেদকের কাছে পরে বিষয়টি স্বীকার করে জানান, মন্দিরের জমি ভেবে তিনি কাগজপত্র ঠিকমত যাচাই বাছাই করেন নি। এখানে এতবড় ঘাপলা আছে, তা তিনি জানতেন না। হরেন্দ্রনাথ বলেন, পৈতৃকসূত্রে পাওয়া আমাদের জমির যেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠিত আছে সেখানেই থাকবে। দীর্ঘদিন ধরে ধর্মপ্রাণ মানুষ যেভাবে ধর্মীয় আচার পালন করে আসছেন, সেভাবেই চিরজীবন চলবে। কিন্তু আমাদের জমি আমরা রেজিষ্ট্রি করে দেব। ওই জমির মালিক অরুন কুমার নন। তিনি অন্যের জমি দান করার নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেন না।

হরেন্দ্রনাথ জানান, মন্দিরের পাশে বাকি জমিতে গত দুই বছর ধরে তিনি দালান নির্মাণ করে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই অরুণ কুমার রায় আমাদের বাড়ি ও অন্য জমি দখলের পায়তারা শুরু করেন। ধর্মীয় অনুভূতিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজে লাগিয়ে তিনি সাধারণ মানুষকে উস্কে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

জানা গেছে, অরুন কুমার এলাকায় জালিয়াত ও ভূমিদস্যু হিসেবেই চিহ্নিত। এর আগে গ্রামের এক বিধবা চারুবালার (৮০) জমি দখল করতে চেষ্টা করে সে। এক ভুক্তভোগী শঠিবাড়ী সাহাপাড়া গ্রামের তপন মহন্ত জানান, অরুন কুমার তার জমির কাগজ জালিয়াতি করে রংপুর প্রাইম ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে নেয়। ওই ঘটনায় প্রায় নিঃস্ব হন তিনি। পার্শ্ববর্তী তুলসীপুর গ্রামের কাশিনাথ বর্মণের জমিও জালিয়াতি করে বিক্রি করে দেয় অরুণ কুমার। এ ঘটনায় জেলও খাটে অরুন। এলাকার একটি মসজিদের জমি নিয়েও জটিলতা সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া এলাকার একটি ছেলেকে মারাধরের ঘটনায়ও গ্রেপ্তার হয়েছিল অরুন।

যে রেকর্ড দেখিয়ে মন্দিরে জমি দান করেছে অরুন, মিঠাপুকুর সেটেলমেন্ট অফিসে গিয়ে সে রেকর্ডের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে। গত ২৯ অক্টোবর তোলা বর্তমান মাঠ রেকর্ডটিতে (শঠিবাড়ী হরিপুর মৌজা, খতিয়ান ৫৪৬, জেএল ২৫৪, ডি,পি ৪৫৯) ওই মন্দিরের জমির মালিক হিসবে দিলীপ সাহা ও তার ৫ ভাইয়ের নামই দেখতে পাওয়া যায়। অফিসের ভলিউম বুকেও তাদের নামই রয়েছে। অথচ একই মৌজা, খতিয়ান, জেএল, ডিপি নম্বর দেখিয়ে মন্দিরে জমি দান দেখায় অরুন। সেটেলমেন্ট অফিসের পেশকার উপেন্দ্র চন্দ্র সরকার জানান, দিলীপ কুমার সাহাদের নামে রেকর্ডটি ভলিউম বুক অনুযায়ী সঠিক। আমি নিজে মিলিয়ে দেখেছি। অরুন কুমারের মাঠ রেকর্ডটি জাল। ওই নথির লেখা ও স্বাক্ষর আমার নয়।

জালিয়াতির এ ঘটনায় আদালতে ফৌজদারী মামলা করেছেন হরেন্দ্রনাথ সাহা। মামলার আইনজীবি রইচউদ্দিন বাদশা জানান, জুডিশ্যিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্ট মিঠাপুকুর আমলী আদালতে আমরা অরুন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ৪৬৭, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় দলিল জালিয়াতি মামলা করেছি। তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য মিঠাপুকুর অফিসার ইন চার্জ (ওসি) বরাবর আদেশ হয়েছে। তবে এখনো তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়নি পুলিশ। এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার ওসি আমিরুজ্জামান জানান, মন্দিরের দলিল জালিয়াতির মামলা আদালতের নির্দেশনানুয়ায়ী একটি নোটিশ জারি করতে বলা হয়েছিল, যা ইতোমধ্যে করা হয়েছে। এছাড়াও বিষয়টি দুইপক্ষ বসে মিমাংসার জন্য বলা হয়েছে। তবে মিমাংসার আগেই অরুন ও তার অনুসারী অনুকুল চন্দ্র, ফনী, অর্জুনসহ কয়েকজন হরেন্দ্রনাথ ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App