×

জাতীয়

৮ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:৩৪ পিএম

৮ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল

এমসি কলেজে গৃহবধূকে ধর্ষণকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা

সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ) ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার ২ মাসের অধিক সময় পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আবুল কাশেমের আদালতে ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

বৃহস্পতিবার সকালে অভিযোগপত্র দেয়ার তথ্যটি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, সকালে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। পরে দুপুরে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে। এছাড়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ৮ জনের মধ্যে ৬ জন ধর্ষণে সরাসরি জড়িত ও বাকিরা সহযোগিতা করেছেন। এ মামলায় সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। সরাসরি জড়িতরা হলো- সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া। আর রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে গত ৩০ নভেম্বর ধর্ষণের ঘটনার ডিএনএ প্রতিবেদন আদালতের মাধ্যমে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এসে পৌঁছে।

ডিএনএ প্রতিবেদনে ধর্ষণের সঙ্গে সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি ও অর্জুন লস্করের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। ধর্ষণের ঘটনায় এই ৪ জনসহ ৮ জন জেলহাজতে রয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ৮ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ১ ও ৩ অক্টোবর ২ দিনে গ্রেপ্তারকৃত ৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের পর পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবে। ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে অভিযোগপত্র আটকে থাকার কথা জানিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী (২৫)। করোনার কারণে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর তাদের মারধর করে টাকা-পয়সাও ছিনিয়ে নেয় ধর্ষকরা। ওই রাতেই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে ধর্ষণবিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। জনমতের চাপ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ষণবিরোধী আইনও সংশোধন করে সরকার।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৫ সেপ্টেম্বর বিকালে নববিবাহিত স্ত্রীকে প্রাইভেটকারে করে শাহপরান মাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন নগরের দক্ষিণ সুরমার জৈনপুর এলাকার এক যুবক। ফেরার পথে সন্ধ্যার দিকে টিলাগড়ে এমসি কলেজের মূল ফটকের সামনে থামেন তারা। এ সময় কয়েকজন তরুণ এসে ওই যুবকের স্ত্রীকে ঘিরে ধরেন। একপর্যায়ে প্রাইভেটকারসহ ওই যুবককে সস্ত্রীক বালুচরে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যান তরুণরা। এরপর যুবককে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে প্রাইভেটকারের মধ্যেই ধর্ষণ করেন ৫/৬ জন। পরে এই দম্পতিকে মারধর করে তাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেন ধর্ষকরা। আটকে রাখে প্রাইভেটকারও। ছাত্রাবাস থেকে ছাড়া পেয়ে টিলাগড় পয়েন্টে এসে পুলিশকে ফোন করেন নির্যাতিতার স্বামী। পরে পুলিশ গিয়ে ছাত্রাবাস থেকে ওই দম্পতির প্রাইভেটকার উদ্ধার করে এবং নির্যাতিতা তরুণীকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করেন। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান অভিযুক্তরা। ওই রাতেই ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন নির্যাতিতার স্বামী। আর সোয়াশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। দায়ীদের বিচার ও নারী নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। এ ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে এসএমপির শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতিত ওই তরুণীর স্বামী এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ী গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো ৩ জনকে আসামি করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App