×

আন্তর্জাতিক

ভেস্তে গেল আলোচনা, দিল্লি ঢুকতে মরিয়া কৃষকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:২৫ এএম

ভেস্তে গেল আলোচনা, দিল্লি ঢুকতে মরিয়া কৃষকরা
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর ফের নতুন উদ্যমে ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলনে ফিরলেন কৃষকরা। গতকাল বুধবার ভোর বেলা উত্তর প্রদেশ-দিল্লি সীমানায় ব্যারিকেড সরিয়ে শহরে ঢোকার চেষ্টা চালান তারা। বস্তুত দিল্লি ঢোকার প্রতিটি প্রবেশপথেই অবস্থান নিয়ে বসে আছেন কৃষকরা। ফলে দেশটির রাজধানীতে ঢোকা ও বের হওয়ার অধিকাংশ রাস্তা একপ্রকার অবরুদ্ধ হয়ে আছে এ মুহূর্তে। খবর আনন্দবাজার। দিল্লি পুলিশ জানায়, বিক্ষোভের জন্য নয়াদিল্লি সীমানা বন্ধ রাখা হয়েছে। যাত্রীদের এই রুট এড়িয়ে ভিন্ন রুট ধরে যাতাযাতের পরামর্শ দিয়েছে তারা। অন্যদিকে উত্তর প্রদেশ পুলিশ সূত্রে খবর, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকদের জমায়েত রয়েছে এবং তারা দিল্লির দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া পাঞ্জাবে আন্দোলনের জেরে বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এদিকে সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারার পাল্টা ‘২৮৮ ধারা’ জারি করেছেন কৃষকরা। ২৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ফ্লাইওভারের ওপর গত কয়েক দিনেই গড়ে উঠেছে গ্রাম থেকে আসা ট্রাক্টরের অসুখী ও অশান্ত সংসার। অনেকে চাটাই পেতেছেন রাস্তার ওপরই। বিজনৌর থেকে আসা ধানচাষি ধরমবীর সিংহ চোখে ক্রোধের আগুন নিয়ে বলেন, আমরাই তো মোদি, অমিত শাহকে গদিতে বসিয়েছিলাম। ওরা যদি আমাদের কথা শোনে, ভালো। না হলে এখানেই ২৬ জানুয়ারি পালন করব। কালা-কানুন ফিরিয়ে না নিলে ব্যারিকেড ভেঙেই সামনে এগিয়ে যাব। সরকারের ১৪৪ ধারার পাল্টা পোস্টারের গায়ে কাঁচা হাতে ‘২৮৮ ধারা’ লিখে দিয়েছেন কৃষকরা। একজন কৃষক বলেন, এর মানে ওরা যা বারণ করবে তা আমরা দ্বিগুণ করে করব! পেটে লাথি খেয়ে প্রতিবাদ করলে এখন তারা করোনার দোহাই দিচ্ছে। করোনায় মরিনি, এখন না খেয়ে মরতে বসেছি! কৃষকদের অবরোধে দিল্লি-হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে আরেক ‘কুরুক্ষেত্র’ গড়ে তুলেছেন কৃষকরা। আগেভাগে পরিকল্পনা করে কমপক্ষে ৬ মাসের প্রস্তুতি নিয়ে খাবার, পানি, বালিশ, বিছানা, কম্বল, ত্রিপল, ওষুধ, অ্যাম্বুলেন্স, সব গুছিয়ে নিয়েই পথে নেমে পড়েছেন হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে দাবি আদায়ে আন্দোলনে নেমে আসা কৃষকরা। বিক্ষোভকারীদের জন্য লঙ্গরখানা খোলা হয়েছে। সকালে ঘুম ভাঙার পর বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে চা, ক্ষীর ইত্যাদি সরবরাহ করছে খালসা এড ফাউন্ডেশন। দেয়া হচ্ছে মিনারেল ওয়াটারের বোতলও। পাঞ্জাবের কপূরথালা থেকে একদল কৃষক দিল্লি এসেছেন অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে। সঙ্গে রয়েছেন চিকিৎসকরাও। কৃষকদের মাঝে কাপড়ের মাস্ক বিলি করা হচ্ছে। বিক্ষোভে ইতি টানার জন্য কৃষকদের কাছে আবেদন করেছে সরকার কিন্তু তাতে এখনো রণে ভঙ্গ দেননি আন্দোলনকারীরা। ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মধ্যে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার মঙ্গলবার কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছিল। দুপুর ৩টায় দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল আলোচনায় বসে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। কিন্তু আলোচনার শুরুতেই সরকারের তরফ থেকে জানিয়ে দেয়া হয় তারা কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি মানতে প্রস্তুত নয়। এই দাবি বাদে অন্য যে কোনো বিষয় নিয়ে সরকার আলোচনা করতে প্রস্তুত। শুরুতেই সরকারের তরফ থেকে শর্ত দেয়ায় গোড়াতেই ভেস্তে যায় আলোচনা। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি আন্দোলনরত কৃষকদের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা শুরু করে দেয়। তারা সন্ধ্যা ৭টায় আরেকটি কৃষক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও একই রকমভাবে সেই আলোচনাও ভেস্তে গিয়েছে। এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে মুখ রক্ষার তাগিদে জানিয়ে দেয়া হয় আগামী ৩ ডিসেম্বর (আজ) তারা আবার কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App