×

জাতীয়

অধিকাংশ ভোটারই পাননি স্মার্ট কার্ড, মান নিয়ে প্রশ্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৩৬ এএম

অধিকাংশ ভোটারই পাননি স্মার্ট কার্ড, মান নিয়ে প্রশ্ন
বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির অর্থায়নে ২০১১ সালে করা চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের মধ্যে দেশের সব নাগরিককে অত্যাধুনিক পরিচয়পত্র স্মার্ট কার্ড তুলে দেয়ার কথা। তবে এ পর্যন্ত ৪০-৫০ শতাংশ নাগরিকের হাতেও স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সময়ক্ষেপণসহ নানা অনিয়মের কারণে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি এ প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে। ফলে নিজস্ব অর্থায়নে ইসির এনআইডি উইং স্মার্ট কার্ড বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত টেকনোলজি, অভিজ্ঞতা, দক্ষ লোকবল ও আর্থিক সমস্যা থাকায় অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ে স্মার্ট কার্ড তৈরি ও বিতরণের কাজ। এতে কবে নাগাদ সবার হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছাবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বিশ^ব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপির সহায়তায় ২০১১ সালের জুলাইয়ে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাক্সেস টু সার্ভিস’ (আইডিইএ) প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেয়ার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রকল্পটিতে সরকারের ১৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা দেয়ার কথা। ১০ কোটি স্মার্ট কার্ড তৈরির জন্য ইসির এনআইডি উয়ংয়ের সঙ্গে ফ্রান্সের অর্বাথ্রুর চুক্তি হয়। সেখানে ১৮ মাসের মধ্যে ৯ কোটি স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত করার কথা ছিল কোম্পানিটির। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও তারা ব্যর্থ হয়। ফলে ফ্রান্সের অর্বাথ্রু কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয় ইসি। মামলাও করে ইসি। এদিকে সময় নিয়ে বিশ^ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির শর্তগুলো পূরণ করতে না পারায় বিশ্বব্যাংক আর চুক্তির মেয়াদ বাড়ায়নি। পরে সরকারি অর্থায়নে নিজেরাই স্মার্ট কার্ড তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। কয়েক দফা প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়, যা শেষ হচ্ছে চলতি ডিসেম্বরে। এ পর্যন্ত পাঁচবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো শেষে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। সম্প্রতি সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আইডিইএ প্রকল্পের মূল কাজ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত ও নাগরিকদের কাছে বিতরণ করা, যা এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। কার্ড প্রস্তুতের জন্য চুক্তিবদ্ধ ফরাসি ঠিকাদার কোম্পানি অর্বাথ্রুর টেকনোলজিস চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদে কাজ সম্পাদন করতে না পারায় বিশ্বব্যাংকের সম্মতি ও নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনক্রমে তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। এরপরও তারা ৯ কোটি কার্ড সঠিক সময়ে প্রস্তুত ও বিতরণ করতে পারেনি। সময়মতো কার্য সম্পাদনে ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় তাদের সঙ্গে চুক্তি আর নবায়ন করা হয়নি। তারা মোট ৭ কোটি ৭৩ লাখ কার্ড সরবরাহ করে। অবশিষ্ট ১ কোটি ২৭ লাখ কার্ড তারা আর সরবরাহ করতে পারেনি। এদিকে ইসি সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত ৬ কোটি ১০ লাখ কার্ড পার্সোনালাইজ করা হয়েছে। এর মধ্যে জনগণের কাছে বিতরণের জন্য পাঠান হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৭ লাখ ৯০ হাজার কার্ড। কমিশন সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত বিতরণের জন্য কার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে ৫ কোটি ৭ লাখ। আর ৫ কোটি ৪০ লাখ কার্ড এখনো প্রস্তুত করা হয়নি, যা মোট ভোটারের অর্ধেকেরও বেশি। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, স্মার্ট কার্ড বিতরণে যেভাবে সময় নেয়া হচ্ছে তাতে সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের কার্ড সরবরাহ করতেই লেগে যাবে আরো ৬ বছর। অর্থাৎ ২০২৫ সালের আগে তারা কার্ড পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। তবে সব মিলিয়ে ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কবে নাগাদ দেশের সব নাগরিক স্মার্ট কার্ড পাবে তা কেউই বলতে পারছেন না। এদিকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, জন্মের পরপরই প্রত্যেক শিশুকে দেয়া হবে ইউনিক আইডি নম্বর। এখন থেকে নিজেরাই স্মার্ট কার্ড তৈরি ও সরবরাহ করব। তিনি বলেন, নতুন ভোটার নিবন্ধন, স্থানান্তর, কর্তন, তথ্যের ভুল সংশোধন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং অধিকতর দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নাগরিকদের সেবা দেয়া হবে। অনূর্ধ্ব ১৮ ও ১০ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকদের নিবন্ধনের জন্য গাইডলাইন তৈরি করা হবে। এজন্য ১০টি অঞ্চলে পাইলট প্রজেক্ট নেয়া হবে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (এনআইডি-অপারেশন্স) আবদুল বাতেন বলেন, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের অর্বাথ্রু টেকনোলজিস্ট সময়মতো কার্ড হস্তান্তর করতে পারেনি বলেই বিলম্ব হয়েছে। তবে নিজম্ব উদ্যোগে কার্ড তৈরি ও বিতরণ চলমান রয়েছে। এদিকে গত ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) (২য় পর্যায়)’ প্রকল্প অনুমোদন হয়। এর খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। অন্যদিকে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) আইডিইএ প্রকল্পের অর্থ ব্যয় ও মান নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেছে প্রকল্পের সময় বাড়ানোয় এ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত সময় ও ১৩৬ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। সর্বশেষ নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যয় আরো বাড়বে। সরবরাহ করা অনেক কার্ডে তথ্যের ভুল ও ছবির মানও ভালো নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App