×

সাহিত্য

ভবিষ্যতে শিল্পীদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৪০ এএম

ভবিষ্যতে শিল্পীদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা

করোনার জন্য মঞ্চায়ন হচ্ছে না এমন আয়োজন -ফাইল ছবি

ষড়ঋতুর রূপ-বৈচিত্র্য আর পাহাড়-সমতলের সবুজ শ্যামলিমার মায়া ছাপিয়ে রূপের অনন্ত বিভায় নিরন্তর আনন্দে উচ্ছ¡ল করে রেখেছে ১৩ শত নদীর অমৃত জলধারা। পদ্মা ও মেঘনা এই নদীমাতৃক বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি ধারা। এর বাইরে ডাকাতিয়ায় রয়েছে ত্রিনদীর মোহনা। মনজুড়ানো এই ত্রি-ধারার মিলনস্থলে গড়ে উঠেছে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’। লোককথার প্রসিদ্ধ চাঁদ সওদাগরের নাম কিংবা পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম হয়েছে ‘চাঁদপুর’। চাঁদপুরের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেড (ত্রিনদীর মোহনা), রক্তধারা, ইলিশ চত্বর, শপথ চত্বর, হরিণা ফেরিঘাট, রাজরাজেশ^র চর, জেলা প্রশাসকের বাংলোয় দুর্লভ জাতের নাগলিঙ্গম গাছ, নুনিয়া দত্তের বাড়ি ও পূজামন্দির, ডাকাতিয়ায় বেদেপল্লী, সাধক সর্বানন্দ ঠাকুরবাড়ি, নাওড়া মঠ ও মেহের কালীবাড়ী, মতলব দক্ষিণে কাশিমপুর রাজবাড়ী বারদুয়ারি ও জগন্নাথ দেবের মন্দির। এছাড়া চাঁদপুরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ইতিহাস-নন্দিত স্থাপনা। তেমনি শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতিতেও সমৃদ্ধ চাঁদপুর। যেখানে হাজারো শিল্পীর মুখরতা প্রাণিত করে সর্বসাধারণকে। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনা স্তব্ধ করে দিয়েছে সব মুখরতা। সূত্র জানায়, চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা ষাটের অধিক। সংস্কৃতিকর্মীর সংখ্যা দেড় হাজারের মতো। তাদের অনেকে শিল্পী ও প্রশিক্ষক। যারা সরকারি-বেসরকারি নানা অনুষ্ঠান করে জীবিকানির্বাহ করত। কিন্তু বর্তমানে তারা পুরোপুরি বেকার। এদের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০০ জনকে সহায়তা দেয়া হলেও বাকি অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন অঙ্গন সীমিত আকারে খুলে দেয়া হলেও সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখনো স্থবির। অধিকাংশ শিল্পীর জীবনই কাটছে ধারদেনা করে, কেউ অটোরিকশা চালাচ্ছে কিংবা কেউ কেউ চলছেন জমানো টাকা ভেঙে। অথচ সরকারি সহায়তা নিয়েও ব্যাপক স্বজনপ্রীতি হয়েছে। এমনকি একই পরিবারের ২/৩ জনকেও সহায়তা দেয়া হয়েছে। শিল্পী কোটায়ও যাদের নাম নেই। জানতে চাইলে চাঁদপুর উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর ভোরের কাগজকে বলেন, যারা সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ঘিরে বেঁচে আছে, তারা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া উচিত। নইলে শিল্পীদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, যেখানে শিল্পীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে সেখানে যখন দেখি অস্বচ্ছ এবং স্বজনপ্রীতি করে একই পরিবারের ৩ জনকে সরকারি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। যারা শিল্পী কোটায়ই নেই। সংগীত প্রশিক্ষক মৃণাল সরকার বলেন, কেবল আমি নই, যারা এ পেশার ওপর নির্ভরশীল তাদের সবারই অবস্থা নাজুক। শিল্পীরা তো মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতেও পারে না। আমি বাংলাদেশ শিশু একাডেমির একজন প্রশিক্ষক। গত মার্চ মাস থেকেই শিশু একাডেমির বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। কষ্টে কাটছে দিনগুলো। নিশিতা সংগীত একডেমির পরিচালক ও সংগীত শিল্পী নন্দিতা দাশ বলেন, গান আমার রক্তে মিশে গেছে। অথচ কণ্ঠে কতদিন গান ওঠে না। অথচ শিল্পী হতে গিয়ে বিয়ের আগে পরিবারের বাধা, বিয়ের পরে শ^শুরবাড়ির বাধা পেরিয়ে এতটুকু এসেছি। কিন্তু করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে আর পেরে উঠছি না। কোনো সরকারি সহায়তাও পাইনি। তবলা ও সংগীত প্রশিক্ষক ইন্দ্রজিত দাসের কণ্ঠেও একই কষ্টের সুর ধ্বনিত হলো। ৩৫ বছর ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে মুখর করে রাখা এ শিল্পী বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে বেকায়দায় আছি। ঢোল বাদক সজীব দাশ বলেন, করোনায় আমার জীবন ওলট-পালট হয়ে গেছে। আমি কোনো রকমে বেঁচে আছি। হাতে এখন আর ঢোলের বাদ্য বাজে না। অটো চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। জানি না কবে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাব। অথচ একদিনও ঢোল না বাজিয়ে আমার চলত না। সংগীত প্রশিক্ষক ও শিল্পী রূপালী চম্পক বললেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি একটা স্কুল চালাই। যেখানে ২০০ শিশুকে গান, নাচ এবং চিত্রাঙ্কনের প্রশিক্ষণ দেই। করোনা এসব শিশুদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। আয়ের পথটাও সংকুচিত হয়ে গেছে।    

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App