×

পুরনো খবর

শিল্পী না থাকলে সমাজ সুন্দর থাকবে কী করে!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:২৪ এএম

শিল্পী না থাকলে সমাজ সুন্দর থাকবে কী করে!

করোনায় বন্ধ হয়ে গেছে এমন মনোমুগ্ধকর নৃত্য -ফাইল ছবি

স্থবির জেলাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড- ৪৩

সবুজ শস্য-শ্যামল প্রান্তর, বৃক্ষরাজি আর দূর দিগন্তে দৃষ্টির সীমানায় আকাশের নীলিমার সখ্যতা নিয়ে গাজীখালি, ধলেশ^রী, কালীগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা বন্দরশহর মানিকগঞ্জ। এ জেলার নৈসর্গিক দৃশ্যে মন হারিয়ে যায় প্রকৃতির সঙ্গে। অনেক ঐতিহ্যের পাশাপাশি, দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড়ের গৌরবমণ্ডিত মানিকগঞ্জ। ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথকেও উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে এ অঞ্চলের হাজারি গুড়। এছাড়া মানিকগঞ্জ এলাকাটি ছিল বারো ভূঁইয়াদের চারণভূমি। ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন আর বুদ্ধিজীবী ও সুসাহিত্যিক মুনীর চৌধুরীর পদধূলিধন্য মানিকগঞ্জের মানিকেরাও আজ করোনার থাবায় বিপর্যস্ত।

মানিকগঞ্জে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ষাটের অধিক, সংস্কৃতি কর্মীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় দেড় হাজারের মতো। তাদের অনেকে পেশায় তবলা, সংগীত, গীটার, নৃত্যশিল্পী, বাউলশিল্পী ও প্রশিক্ষক। সরকারি-বেসরকারি নানা অনুষ্ঠান করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এদের মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৯০ জনকে সহায়তা দেয়া হলেও অনেকের জীবন অর্থকষ্টে অর্থহীন হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ শিল্পীর জীবনই কাটছে অর্থনৈতিক দুর্দশায়। অনন্যোপায় হয়ে কেউ কেউ কৃষি কাজ করছেন। কেউবা মুদি, কসমেটিকস, শিশুদের খেলনা কিংবা ইলেকট্রিকের দোকান দিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ উদীচীর সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, মানিকগঞ্জে যারা সম্মানীর বিনিময়ে গান-তবলাসহ নানা যন্ত্র বাজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ। শুধু শিল্পীরাই নয়, এ অঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে সাউন্ডের সঙ্গে যুক্তদের পরিস্থিতিও নাজুক। অথচ গত ৭ মাসে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে ৫ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছে তা দিয়ে হাত খরচও হয়নি। সেখানেও স্বজনপ্রীতি হয়েছে। যারা প্রচারবিমুখ তারা বাদ গেছে। অথচ তারাই ভালো  শিল্পী।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্ত এই সংগঠক ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, প্রকৃত শিল্পীদের তালিকা হওয়া খুব জরুরি। সেই সঙ্গে সংগঠনেরও তালিকা করা দরকার। মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়ন না হলে শিল্পীরা তো বাঁচবে না। শিল্পীরা না থাকলে সমাজটা সুন্দর থাকবে কী করে? চার দশকের বেশি সময়ের সংগীত প্রশিক্ষক ও শিল্পী নিকুঞ্জ মিত্র সরকারি ৫ হাজার টাকার সহায়তাকে এই বিপদের দিনে ৫ লাখের সমান সহায়তা মনে করেছেন।

তিনি বলেন, আমি এতদিন জমানো টাকা দিয়েই চলেছি। তাও এখন শেষের পথে। মনে হয় রাস্তায় ভিক্ষা করতে নামতে হবে। অথচ করোনার আগে প্রতিদিন আমি আয় করতাম ১ হাজার টাকা। এখন সে আয় একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। তবলাশিল্পী শ্যামল কর্মকার বলেন, ২৭ বছর ধরে এ পেশায় আছি। প্রতি মাসে ২৫-২৭ হাজার টাকা আয় হতো। কিন্তু করোনার কারণে আয়ের এই পথটি পুরোটাই বন্ধ। বাধ্য হয়ে আমি এখন খেলনার দোকান দিয়েছি। বাউল আক্কাস বলেন, ৪০ বছর ধরে বাউল গান করছি। এটাই আমার রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন। এখন সংগীত পেশা ফেলে বেঁচে থাকার জন্য কৃষি কাজ করতে হচ্ছে। নিজের কাছে বিষয়টা লজ্জাস্কর মনে হচ্ছে। কিন্তু পেট তো আর কথা শোনে না। এই দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App