বাঁশখালীতে জলকদর খাল দখল করে ৬ তলা ভবন
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:২২ পিএম
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের পশ্চিম চাম্বল বাংলা বাজার ফিশারীঘাটে বেড়িবাঁধের উপর জলকদর খাল দখল করে ৬ তলা ভবন নির্মাণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এই প্রবাহমান জলকদর খাল দিয়ে প্রতিদিন শত শত মাছ ধরার ইঞ্জিন চালিত ফিশিং ট্রলার ও নৌ সাম্পান কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, খুলনা যাতায়াত করে থাকে। পূর্বে পশ্চিম চাম্বল বাংলাবাজার ঘাটটি লঞ্চঘাট হিসাবে পরিচিত ছিল। কালের বহমান স্রোতে নদীপথে লঞ্চ, স্টীমার যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়ে। মানুষ যানবাহনে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে জলোচ্ছাসের পর বাঁশখালী এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মৃত্যু বরণ করে। এর পর থেকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শত কোটি টাকা ব্যয়ে চাম্বল ও গন্ডামারা এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে এলাকা রক্ষা করলেও ভূমিদস্যুরা বেড়িবাঁধের উপরই তৈরি করছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাবাজার গিয়ে দেখা যায়, চাম্বল বাংলাবাজার ঘাটে জলকদর খালের দুই তীরে চাম্বল ও গন্ডামারা অংশে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বেড়িবাঁধ দখলে নিয়ে গড়ে তুলেছে বিশাল বিশাল স্থাপনা। বরফ ফ্যাক্টরির মালিকগণ জলকদর খালে গাছের খুঁটি দিয়ে গড়ে তুলেছে খালের পানিতে অবস্থানরত ইঞ্জিনচালিত ফিশিং বোটে বরফ উঠানামার স্থান। পাশে চাম্বল, গন্ডামারা এলাকায় যানবাহন চলাচলের জন্য স্টীলের পাঠাতন দিয়ে নির্মিত সেতুটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
স্থানীয় আবুল কাসেম জানান, জলকদরখাল ব্যবহার করে ১৫ বছর পূর্বেও লঞ্চ, সাম্পান নিয়ে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম চাক্তাই এলাকায় মালামাল পরিবহণ সহ সাধারণ মানুষ যাতায়াত করত। বর্তমানে এই খালটি যে হারে দখল প্রতিযোগিতা করে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে অচিরেই জলকদর খাল মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়বে। এই জলকদর খালে মাছ শিকার করে হাজার হাজার পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ, চাম্বল এলাকার কালু সওদাগর ও জাকের আহমদ জলকদার খালের বেড়িবাঁধের অংশসহ পানির সীমানায় তৈরি করছেন ৬ তলা বিশিষ্ট্য বহুতল ভবন। এই ভবনটির ১ম, ২য় ও ৩য় তলার কাজ শেষ হয়েছে। খালের বুকেই এই ভবন নির্মাণ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নতুন তৈরি করা ভবনের মালিক কালু সওদাগর বলেন, ভবন নির্মাণের স্থানটি আমাদের পৈত্রিক খতিয়ানভুক্ত জায়গা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা নয়। খালের ভিতর আমাদের জায়গা রয়েছে।
চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, চাম্বল বাংলা বাজার ঘাট এলাকায় বাঁধের জায়গার উপর একটি ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। এই ভবন নির্মাণের ব্যাপারে পরিষদ থেকে কোন অনুমতি নেয় নি। কিছু ব্যক্তি এই খাল দখলের প্রতিযোগীতায় নেমেছে। এক সময় এই খালটির কিনারায় লঞ্চ ও স্টীমার যাত্রী উঠানামা করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করত।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম বাঁশখালীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন, চাম্বল বাংলাবাজার এলাকায় বেড়িবাঁধের বাহিরে নদীর সীমানায় বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ পেয়েছি। এই ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধের উপর নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত আসলেই অচিরেই এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।