×

স্বাস্থ্য

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়, কমিটিই হয়নি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২০, ১২:২২ পিএম

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়, কমিটিই হয়নি

ফাইল ছবি

বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণের মতো সংকটকালেও রোগীদের চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাদের সেই স্বেচ্ছাচারিতা প্রকাশ পেয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও হুঁশিয়ারির পরেও এই মনোভাবের খুব একটা হেরফের হয়নি।

স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন, মূলত ১৯৯০ সালের গোড়া থেকে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বিভিন্ন খাতে বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতা প্রতিফলিত হয়েছে স্বাস্থ্য খাতেও। এ ছাড়া দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবা ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির সুযোগে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের আধিপত্য বেড়েছে। আর এই আধিপত্য এতটাই যে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। যে কোনো অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেই শুরু হয় রোগীদের জিম্মি করা।

১৮ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের রোগীদের চিকিৎসা ও রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ইচ্ছেমতো ফি নেয়া বন্ধে লাগাম টানতে উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ক্যাটাগরিভুক্ত করে দেয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতাল মালিক, তাদের সংগঠন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়। কমিটি গঠনের পর ৩০ দিনের মধ্যে সমন্বিতভাবে এসব ফি বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটি গঠন করা হয়নি। অথচ ওই কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা ভোরের কাগজকে জানান, এখনো পর্যন্ত কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে খুব শিগগিরই কমিটি গঠন করা হবে।

ওই বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় শৃঙ্খলা আনতে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন সেবার ‘ফি’ নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জনগণ যাতে প্রতারিত না হয়, তারা যাতে সঠিকমূল্যে চিকিৎসা পায় সেজন্য এ সিদ্ধান্ত। সরকার যে চার্জ নির্ধারণ করে দেবে সেগুলো হাসপাতালে টাঙানো বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে। বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এবি হারুন জানান, সরকার তাদের সঙ্গে সমন্বয় ও আলোচনা করেই ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেবে। কমিটিতে তাদের এসোসিয়েশনের সদস্যও থাকবে।

ফি নির্ধারণের বিষয়টি দেশের মানুষের জন্য অবশ্যই ভালো সিদ্ধান্ত উল্লেখ করলেও তা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলছেন, দেশব্যাপী বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে একটা নিয়মের মধ্যে আনতে সরকারের বাস্তবমুখী কোনো উদ্যোগ নেই। সরকার এখন ফি নির্ধারণ করে দিলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছোট ছোট হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আর বড় হাসপাতালগুলো সরকার নির্ধারিত ফি মেনে কতটা চলবে আদৌ মানবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তারা।

বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতকে সরকার কখনোই ‘জবাবদিহিতার আওতার’ মধ্যে আনতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব। তিনি বলেন, সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অবহেলা এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারের যে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এই চিত্র পুনরায় আমাদের সামনে এনেছে কোভিড-১৯। এর ফল সাধারণ মানুষ ভোগ করছে। তাদের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা দীর্ঘদিনের। জনগুরুত্বপূর্ণ এই খাতকে অবশ্যই সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। সরকারের বিধিনিষেধ ও শর্ত মেনেই তাদের চলতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App