×

জাতীয়

যানবাহনে আগুন দেয়ায় আতঙ্কে মালিক-শ্রমিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২০, ১০:০৬ এএম

গণপরিবহনে গণহারে আগুনের ঘটনায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকায় চলাচলরত গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে এই আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি। গত ১২ নভেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১১টি গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর মালিকরা প্রতিটি গণপরিবহনের শ্রমিকদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলেছেন। তবে মালিক ও শ্রমিকরা বিষয়টিকে পরিবহন সেক্টরের জন্য আতঙ্ক বলেই মনে করছেন।

রজনীগন্ধা পরিবহনের চালক কামাল হোসেন বলেন, ওইদিন বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। মোহাম্মদপুর থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত অনেক লম্বা এলাকায় চলাচল করতে হয়। জ্যামের মধ্যে বাস থামিয়েও বসে থাকতে হয়। এ সময় কেউ আগুন ধরিয়ে দিলে বাসের চালক ও হেলপারের কিছুই করার থাকে না। বাসে আগুন দেয়ার ঘটনার খবর পেয়ে মালিকরা ফোন করে সাবধান করে। এরপর কয়েক ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ রাখি। সন্ধ্যার একটু আগে পরিস্থিতি শান্ত দেখে আবার বাস চালানো শুরু করি। তবে এরপর যাত্রীর সংখ্যা অনেকটাই কমে যায়।

শুভযাত্রা পরিবহনের হেলপার সাইফুল জানান, সেদিন হঠাৎ করে একটার পর একটা বাসে আগুনের ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ও তার চালক আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ২০১৩-১৪ সালে সব ধরনের গণপরিবহনে পেট্রলবোমা মেরে এবং আগুন দিয়ে নাশকতার ঘটনা দেখেছেন। অনেক যাত্রীর সঙ্গে চালকরাও আগুনে দগ্ধ হয়েছে। ব্যস্ত রাস্তায় হঠাৎ করে আগুনের ঘটনা ঘটলে কোথাও যাওয়ার থাকে না। এ কারণে বেশি ভয় লাগে।

প্রভাতি-বনশ্রী পরিবহনের এক চালক বলেন, সেদিনের ঘটনার পর আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। জ্যামের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেশি লাগে। মালিকরা চোখ-কান খোলা রেখে রাস্তায় গাড়ি চালাতে বলেছে। এখন এক স্ট্যান্ডে বেশি সময় অপেক্ষা করি না। যাত্রী ওঠা-নামার সঙ্গে সঙ্গে চালাতে শুরু করি। গাড়ির ক্ষতি হলে বেকার বসে থাকতে হবে। তখন আর সংসার চলবে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ২০১৩-১৪ সালে যেভাবে গণপরিবহনে আগুন দেয়া হয়েছে সেই আদলেই গত ১২ নভেম্বর গণপরিবহনে আগুন দেয়া হয়েছে। ৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০টি যাত্রীবাসে আগুন দেয়া হয়েছে। এ কারণে মালিক-শ্রমিকরা অবশ্যই আতঙ্কিত। আমরা শুধু দূরপাল্লার পরিবহনই দেখি না, রাজধানীর গণপরিবহনের সুবিধা-অসুবিধাও দেখি। আমরা এ ঘটনায় সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি, ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি। নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছি। যারা এ ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছি। আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছি।

তিনি আরো বলেন, এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে পরিবহন সেক্টর বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। গণপরিবহন চলাচল শুরুর পর মালিক-শ্রমিকরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এখন আবার এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পরিবহন সেক্টরে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজী আবুল কালাম বলেন, এই ঘটনায় আমরা তেমন আতঙ্কিত নই, তবে ভয় কিছুটা লাগে। এটা রাজধানীর ভেতরে চলাচলরত গণপরিবহনে ঘটেছে। নির্বাচন কেন্দ্রিক ঘটনার জের ধরে ঘটেছে। ২০১৩-১৪ সালের মতো জেলায় জেলায় ঘটছে না। এখন সেই হারেও ঘটনা ঘটেনি। যদি সেইভাবে ঘটে তাহলে আমরা পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেব। সরকার আমাদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য। অবস্থা জটিল হলে আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাইব।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস) বলেন, রাজধানীতে বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। থানা পুলিশ তদন্ত করছে। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ফুটেজ দেখে সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, দ্রুত সন্ত্রাসীদের ধরে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

এদিকে বাসে আগুনের ঘটনায় বিএনপি দলীয় সাংসদ হারুনুর রশিদ সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। ১১টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা খতিয়ে দেখতে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি এই দাবি জানান।

উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদের সিরাজগঞ্জ-১ এবং ঢাকা-১৮ এই দুটি আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন দুপুরের পর রাজধানীর বংশাল, মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীরা ১১টি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App