×

জাতীয়

তালিকা প্রস্তুতেই অর্ধ শতাব্দী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৩২ এএম

তালিকা প্রস্তুতেই অর্ধ শতাব্দী

মুক্তিযোদ্ধা সনদ আছে, ভাতা নেই মন্ত্রণালয়ে হাজারো অভিযোগের স্তূপ শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ তালিকা : মন্ত্রী

মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৫ দশকে একাধিক সনদ, স্বীকৃতি থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাননি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ। জীবদ্দশায় তো জোটেইনি, মৃত্যুর প্রায় দেড় দশক পরও রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। অথচ বাগেরহাটের মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামের দলিল হাওলাদরের ছেলে আব্দুল হামিদকে মুুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতিস্বরূপ ২ বছরের পদোন্নতি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কথা উল্লেখ রয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশবাহিনী’সহ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা একাধিক গবেষণাগ্রন্থে। একাত্তরের ২৬ মার্চ পাবনার শাহাজাদপুর থানার ওসি আব্দুল হামিদের কাছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার তারবার্তা পৌঁছানোর কথা উল্লেখ রয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার গোপন দলিলেও।

রণাঙ্গনের ২ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সেকেন্দার আলী। ভারতীয় তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা, সরকারি গেজেটে নাম রয়েছে তার। ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হন এই বীর। রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছে তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ২০১৮ সালে যাচাইবাছাইয়ে বাদ পড়েন তিনি।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার একটি নির্ভুল তালিকা তৈরি করতেই অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে গেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি। নির্ভুল ও সঠিক তথ্যভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে পারেনি কোনো সরকার। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম সংখ্যা দেয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। অন্যদিকে যাচাইবাছাইয়ের নামে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাই বাদ পড়েননি, আর্থিক লেনদেনসহ নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে অনেক জায়গায়। ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা যাচাইবাছাই প্রক্রিয়া। মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে হাজারো অভিযোগের স্তূপ। তবে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। জানতে চাইলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেছে। তবে যাচাইবাছাই কমিটির প্রতিবেদনে নানা ধরনের অসঙ্গতি ও ত্রুটি পাওয়া গেছে। এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি নিরসনে কাজ চলছে। ভোটার আইডি কার্ড ধরে কাজ করছি আমরা। এগুলো যাচাইবাছাই কার্যক্রম শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে।

সনদ আছে, ভাতা নেই : বর্তমানে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩৫ হাজার। এর মধ্যে ভাতা পাচ্ছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা। বাকি ৫০ হাজারের ভাতা বন্ধ রয়েছে। তাদের সনদ আছে, ভাতা নেই। তাদের ভাতা বন্ধের স্পষ্ট কারণ জানেন না কেউ। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, এই ৫০ হাজার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। ভুল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তারা মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সঠিকভাবে তথ্য যাচাইবাছাই না করেই মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত সরকার। এখনো অনেকে মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন, দেয়াও হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ও একেক সময় একেক পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন জারি করছে। এতে মুক্তিযোদ্ধা নন এমন অনেকে সার্টিফিকেট পেলেও বাদ পড়ছেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাও।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের স্ত্রী জীবন নেছা ভোরের কাগজকে বলেন, সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল হামিদের গেজেট নম্বর ১৩৮১। এছাড়া লাল মুক্তিবার্তা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল সনদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সনদ- সবই রয়েছে। বরাদ্দ তালিকায় নাম ওঠার পর ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাগেরহাটে সোনালী ব্যাংকের রায়েন্দাবাজার শাখায় সম্মানী ভাতার হিসাব খোলা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই ব্যাংক হিসাবে কোনো অর্থ যায়নি। এ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় পর্যায়ে যোগাযোগ করে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে আমি কখনো কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেইনি। ভাতা বড় কথা নয়, এটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। আমার ছেলেমেয়েরা সবাই ভালো চাকরি করছে। কিন্তু তারা তাদের বাবার স্বীকৃতি চায়। আমার নাতি-নাতনিরা তাদের দাদুর স্বীকৃতি চায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সেকেন্দার আলীর ছোট ছেলে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মহসীন রেজা ক্ষোভ প্রকাশ করে ভোরের কাগজকে বলেন, কেন আমার বাবার নাম বাদ পড়েছে কিছুই জানি না। তার মৃত্যুর পর তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে। এই মর্যাদা ফিরিয়ে নেয়া হোক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App