×

জাতীয়

আশা-নিরাশার দোলাচলে করোনার ভ্যাকসিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৪৬ এএম

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে উৎপাদনগত ত্রুটি

করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং তা প্রাপ্তির জন্য মরিয়া পুরো বিশ্ব। এখনো পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন অনুমোদন না পেলেও ধনী দেশগুলো ইতোমধ্যেই মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়ে আগে ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য আগাম বুকিং দিয়ে রাখছে।

ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানা ও ফাইজার, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সির্টি, যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি জনসন এন্ড জনসন ও নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিন এগিয়ে থাকলেও ইতোমধ্যেই সংরক্ষণের বিষয়টি অসাধ্য হওয়ায় মর্ডানা ও ফাইজার ভ্যাকসিন নিয়ে আগ্রহে ভাটা পড়েছে। কারণ মর্ডানার ভ্যাকসিন হিমাঙ্কের ২০ ডিগ্রি নিচে (মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং ফাইজার ভ্যাকসিন হিমাঙ্কের ৭০ ডিগ্রি নিচে (মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। যা অনেক দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়। পরিস্থিতি যখন অনিশ্চিত তখন আশার আলো দেখিয়েছিল অক্সফোর্ড-আস্ট্রজেনেকা ভ্যাকসিন। কয়েকদিন আগেই বলা হয়েছিল, তাদের তৈরি করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন ‘উচ্চ মাত্রায়’ কার্যকর। কিন্তু সেই আশা এখন যেন অনেকটা মিইয়ে গেছে। কারণ ভ্যাকসিন উৎপাদনে ত্রুটির কথা জানিয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রজেনেকা। বুধবার ভ্যাকসিনটির উৎপাদক প্রতিষ্ঠান দুটি জানায়, তাদের তৈরি করোনা ভ্যাকসিনে উৎপাদনগত ত্রুটি রয়েছে। আর এমন বক্তব্যে তাদের সাফল্যে আশার আলো দেখা একাধিক দেশ এখন সংশয়ে। প্রসঙ্গত; গত ৫ নভেম্বর দেশের বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা ও ভারতের কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে অক্সফোর্ড-আস্ট্রজেনেকা করোনা ভ্যাকসিন আমদানি সংক্রান্ত একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই চুক্তির ফলে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। সরবরাহ খরচসহ প্রতি ডোজের দাম পড়বে ৫ মার্কিন ডলার। আর এজন্য অর্থ বিভাগ প্রায় ৭৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এই টিকা বিতরণ করা হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী। তবে বৃহস্পতিবার মার্কিন এক সংবাদমাধ্যমকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন বলেছেন, সংক্রামক রোগের টিকার পরীক্ষায় এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে গেলে অনেক সময়ই তার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সেই সমস্যার দ্রুত সমাধানও করে ফেলেন ভাইরোলজিস্টরা। তাই অ্যাস্ট্রজেনেকার ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হতাশ হওয়ার কিছু নেই। খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যা কাটিয়ে উঠে আবার পরীক্ষা শুরু হবে।

ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জরুরি এক বৈঠক ডাকা হয়েছে। তবে সেখানে কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়টি জানাতে চাননি ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির এক সদস্য ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্বের যত ধরনের কোভিড ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলমান আছে তাদের মধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ওপরই বেশি ভরসা পেয়েছে বিশ্ববাসী। তাই হঠাৎ করেই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বন্ধের খবর বিশ^বাসীর মনে হতাশা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তাছাড়া অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে আমাদের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির পথটি সহজ ছিল। কারণ এই ভ্যাকসিন প্রাপ্তির জন্য আমাদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সরকার এর জন্য কয়েকশ কোটি টাকা বিনিয়োগও করেছে। তবে আমি বলব, ভ্যাকসিন নিয়ে বড় রাজনীতি ও বাণিজ্যের খেলা হয়। অতীতেও তাই হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন রোগের ভ্যাকসিন যে খুব সহজে আবিষ্কার হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়। এমন অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি সামনে আসবেই। শুরুতেই যদি এগুলো সামনে আসে সেগুলোই বরং ভালো। কারণ জীবনরক্ষাকারী এই ভ্যাকসিন কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষার জন্য বানানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কোভিড-১৯ বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, ভ্যাকসিন আবিষ্কারে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বলা হচ্ছে তাদের ভ্যাকসিন ৮০ শতাংশ ৯০ শতাংশ কার্যকর। কিন্তু এই কার্যকরের ভেতরে থাকা বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আমরা জানতে পারছি না। আমি মনে করি, আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে কোনো করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ না হলে ওই ভ্যাকসিন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য আমরা পাব না।

এদিকে গতকাল ঢাকায় শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্স উদ্বোধনের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনার ভ্যাকসিন যাতে সবাইকে দেয়া যায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভ্যাকসিন যখন সহজলভ্য হবে, তখন আমরা এটা দিতে থাকব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App