×

সারাদেশ

আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২০, ০৫:৩৮ পিএম

আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ

ছবি: প্রতিনিধি

নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বাল্য বিয়ে করার ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পরও অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ না নেয়ায় সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেয়ার ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নেয়ায় এ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ প্রতিবেদক জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম এর সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, কালেক্টরেট কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণে বিলম্ব হচ্ছে।

সম্প্রতি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবু তালেব (৪৯) একই ইউনিয়নের দোলন গ্রামের হতদরিদ্র প্রতিবন্ধি ওসমান গনি সরকার বাচ্চুর ৯ম শ্রেণীতে পড়ুয়া বকসীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোছা. বর্ণিতা ওসমান বর্ণী (১৪)কে বাল্য বিয়ে করে। বিষয়টি জানাজানি হলে ভোরের কাগজ সহ বিভিন্ন পত্রিকায় গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকেও ভাইরাল হয় ঘটনাটি। "বাল্যবিয়ে বন্ধে যেখানে চেয়ারম্যানের ভূমিকা রাখার কথা সেখানে চেয়ারম্যানই যখন বাল্য বিয়ে করছেন? তখন এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় দেশব্যাপী।

এরপর বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলে, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে উলিপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি গত ৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘটনাটি তদন্ত করেন । এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের প্রায় ১১ ব্যক্তির স্বাক্ষর লিপিবদ্ধ করেন। তদন্ত কমিটি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যালোচনা শেষে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. আবু তালেবের বাল্য বিয়ে করার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৭ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অমান্য করেছেন মর্মে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মতামতসহ ১০ নভেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা-প্রশাসকের-কার্যালয়ে পৌঁছালেও প্রশাসনিক পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হওয়ায় এলাকার মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জানা গেছে তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পৌঁছালে মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

এদিকে তদন্ত কমিটি কিশোরীর প্রকৃত বয়স ও বাল্য বিয়ের রহস্য উদঘাটনে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার নুরুন্নবী খন্দকার, উলিপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ নাদিরুজ্জামান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এরশাদুল আলম হীরা, কিশোরীর চাচা চৌকিদার আবু বক্কর, কিশোরীর বাবা প্রতিবন্ধী ওসমান গনি সরকার বাচ্চু, ইউপি সচিব কাওছার আলীর বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেন।

এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন দোলন গ্রামের হতদরিদ্র প্রতিবন্ধি ওসমান গনি সরকার বাচ্চুর ৯ম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোছা. বর্ণিতা ওসমান বর্ণীর (১৪) উপর আগে থেকেই কু-নজর ছিল বুড়াবুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকারের। ছাত্রীটি ইউনিয়ন পরিষদে আসা-যাওয়া কালীন সময় প্রায় ৩ /৪ মাস আগে ওই কিশোরীকে নিয়ে চেয়ারম্যানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনা এলাকায় ফাঁস হলে চেয়ারম্যান বিপাকে পড়ে। ঐ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ধুরন্ধর চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার আজিজুল হকের সহযোগিতায় কিশোরীর চাচা চৌকিদার আবু বক্করকে ম্যানেজে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে এই বিয়ের ব্যবস্থা করে। অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায় এড়াতে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান অসহায় দরিদ্র পরিবারটিকে আর্থিক প্রলোভন দিয়ে বাল্যবিয়েতে রাজি করে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে বর সেজে বধু বেশে ঢাকঢোল পিটিয়ে চেয়ারম্যান নবম শ্রেণী পড়ুয়া ওই কিশোরীকে বাল্যবিবাহ করে। চেয়ারম্যান এর আগে আরো দুটি বিবাহ করেছেন এদের মধ্যে একজন তালাক হয়েছে, বর্তমানে তার এক স্ত্রী ও কলেজ পড়ুয়া এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App