×

মুক্তচিন্তা

মোবাইল থেকে অর্থ লুট!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২০, ০৯:০৯ পিএম

গত কয়েকদিন আগে আমার মোবাইলে একটি মেসেজ আসে ২৯৩৬৯ নম্বর থেকে। মেসেজে লেখা- Successfully subscribed to Story Teller daily. Charge: TK 2.67/day (auto-renewable). Dial 29369 to enjoy . এই মেসেজের সহজ অর্থ হলো কোনো কিছু করার আগেই আমার কোনো প্রকার সম্মতি না নিয়ে অজান্তেই ফোনে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার সার্ভিস চালু হয়ে যাওয়া। যেদিন এই অটো সার্ভিসের মেসেজ আসে সেদিন দেখা হয়নি। প্রায় একদিন পর আমার মোবাইল রিচার্জ কম হয়ে যাওয়ার কারণে মেসেজটি লক্ষ করি এবং সার্ভিস বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ (যদিও বারবার ঝঃড়ঢ় ওঝউ/অখখ লিখে পাঠালে সেখানেও টাকা কাটার ভয় রয়েছে) নিতে নিতে সপ্তাহখানেক পার হয়ে যায়! তবে এরই মধ্যে আমার অনেক টাকা কাটা হয়ে গেছে! যতদিন ফোন করে কিংবা মেসেজ করে এই অটো সার্ভিস গ্রাহক বন্ধ না করবে ততদিন গ্রাহকের অজান্তেই এ ধরনের অর্থ লুট চলতেই থাকবে। এমন গ্রাহক হয়রানির ঘটনা বোধ করি ভিন্নভাবে অন্যদের সঙ্গেও হচ্ছে।

মোবাইল ব্যবহার করেন কিন্তু কখনো সম্মতি ছাড়া অটো সার্ভিস চালু হওয়ার কারণে হয়রানির শিকার হননি এমন গ্রাহক খুঁজে পাওয়া যাবে না! একটি অটো সার্ভিস সাধারণভাবে একসঙ্গে কোটিরও বেশি গ্রাহকের নম্বরে চালু হয়ে যায় আর এভাবে লাখ লাখ সহজ-সরল মোবাইল গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাস প্রোভাইডার আর মোবাইল অপারেটরগুলো কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় বয়স্ক মানুষ, কম শিক্ষিত মানুষ মোবাইলের মেসেজ দেখেন না। আবার দেখা যায় অনেক সচেতন মানুষও অনেক সময় মোবাইলে মেসেজ এলেও বিরক্তিকর ভেবে দেখতে চান না। এভাবে টার্গেট করে লাখ লাখ মানুষের সরলতা আর অসচেতনতাকে কাজে লাগিয়ে অর্থ লুট করছে মোবাইল অপারেটরগুলো। গ্রাহকের অজান্তে একটি অপ্রয়োজনীয় সার্ভিস চালু হলে গ্রাহক টের না পেলেও টাকা কাটার কারণে প্রতিদিন মোবাইলের রিচার্জ কমতে থাকার কারণে একদিন ঠিকই টের পান গ্রাহক। তখন বিরক্তির সীমা ছাড়িয়ে হয় মোবাইল অপারেটর বা সার্ভিস চালুর জন্য ভ্যাস প্রোভাইডারকে ফোন করে চরম বিরক্তির ঝাল ঝাড়েন কিংবা রাগ করে মোবাইলে আর টাকাই রিচার্জ করেন না! মোবাইলে অটো কোনো সার্ভিস চালু হওয়ার জন্য সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হন বয়স্করা। কেননা এখনো এমন লাখ লাখ মানুষ আছেন যারা লেখাপড়া জানেন না, শুধু অভিজ্ঞতার আলোকে বা কারো সহায়তায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।

মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন পরিমাণে স্বয়ংক্রিয় কিছু ইন্টারনেট প্যাকেজ রয়েছে। ওই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রিচার্জ করলেই ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু হয়ে যায়। আবার অনেক সময় এক ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করে দেয়া হয় অন্য ইন্টারনেট প্যাকেজ। এখান থেকে পাঁচ কিংবা দশ বছর আগে গ্রাহকের অজান্তেই অটো সার্ভিস চালুর বিষয়ে ব্যাপক অভিযোগ শোনা যেত। গ্রাহকের অভিযোগ আর বিটিআরসির তৎপরতাই গ্রাহকের হয়রানি বন্ধে বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নেয়া হলেও হয়রানি পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ভুক্তভোগী গ্রাহক অনেক সময় ঝামেলা মনে করে বিটিআরসির কাছে অভিযোগ করতে চান না। মোবাইল অপারেটরগুলো কোনোভাবেই গ্রাহকের অর্থ লুটের দায় এড়াতে পারে না। একজন গ্রাহকের তার যে মোবাইল থেকে অটো সার্ভিস চালু করে অর্থ কেটে নেয়া হয় সেই অপারেটরের প্রতি ওই গ্রাহক স্বাভাবিকভাবে ক্ষুব্ধ হন। এতে করে সার্বিক বিচারে ওই অপারেটরই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রাহকের হয়রানি বন্ধে বিটিআরসির গ্রাহক শুনানি, তদন্ত ও জরিমানা অব্যাহত রাখতে হবে। বিটিআরসির কাছে গ্রাহকের অভিযোগ করার প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। গ্রাহকের হয়রানি বা অর্থ লুটের প্রমাণ পাওয়া গেলে মোবাইল অপারেটর ও ভ্যাস প্রোভাইডারের প্রতি ব্যাপক অর্থ জরিমানার পাশাপাশি কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি হয়রানি বন্ধে গ্রাহকের সচেতনতার পাশাপাশি বিটিআরসিকে গ্রাহকবান্ধব মনোভাব বজায় রেখে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে।

৫/এ নারিন্দা রোড, নারিন্দা, সূত্রাপুর, ঢাকা।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App