×

সারাদেশ

বাড়ছে পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্রের মজুদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১২:৪০ পিএম

বাড়ছে পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্রের মজুদ
পাহাড়ের আঞ্চলিক দল গুলোর হাতে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ দিন দিন বাড়ছে। অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে পাহাড়ে খুন, গুমসহ নিজেদের মাঝে প্রতিনিয়ত শক্তি প্রদর্শণের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে নার্ভিশ্বাস উঠেছে। প্রতিনিয়ত আঞ্চলিক রাজনেতিক দলের আধিপত্য বিস্তারের কারণে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের শান্তি যেমন বিনষ্ট হচ্ছে তেমনি শত শত মায়ের বুক খালি হচ্ছে। পার্বত্য তিন জেলার আঞ্চলিক ৫ টি দল অবস্থান করছে। দল গুলো হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু গ্রুপ), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (লারমা সংস্কার গ্রুপ), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ (সংস্কার গ্রুপ) ও নতুন দল গঠন করে মগ লিবারেল ফ্রন্ট নামে আত্মপ্রকাশ করছে। মগ লিবারেল ফ্রন্ট বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ও কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থান করছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। বর্তমান অবস্থানে রাঙ্গামাটি জেলায় ৫ টি আঞ্চলিক দল, বান্দরবানে ৩ টি আঞ্চলিক দল ও খাগড়াছড়িতে ৪ টি আঞ্চলিক দলের অবস্থানের কারণে প্রতিটি সময় কারোনা কারো সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়। অবৈধ অস্ত্রের কারণে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল গুলোর সংঘাতময় পরিস্থিতির ফলে সাধারণ মানুষ গুলো স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক ভাবে তাদেও কার্যক্রম চালাতে পারছে না বলেও মন্তব্য করেন অনেকেই। এদিকে পার্বত্য অঞ্চল ও ভারত এবং মিয়ানমারের অধিকাংশ বর্ডার এলাকা খোলা থাকায় অবৈধ নানা গোনা ও অস্ত্রের আনা গোনা বেশি পাওয়া যায়। রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল ও জুরাছড়ির বেশ কিছু এলাকা দিয়ে ভারতের অবস্থান এবং বিলাইছড়ি ও রাজস্থলীর বেশ কিছু এলাকা দিয়ে মিয়ানারের লোকজনের আনা গোনা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সম্প্রতি রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার কলেজ পাড়া এলাকায় আরাকান আর্মির আস্তানা পাওয়া গেছে। এসময় ডাঃ রেনিসো নামে একজনকে আটক করা হয় এবং তার বাসা থেকে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী হামলার সময় মাইন বিষ্ফোরণে আহত একজনকে পাওয়া যায়। তার দুটি হাত উড়ে যায় ডাঃ রেনিন সোর বাড়িতে রেখে আহত ব্যক্তির চিকিৎসা রত অবস্থায় পাওয়া যায়। গত কয়েকদিন ধরে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, রাজস্থলী, ও কাপ্তাই এলাকায় আঞ্চলিক দল গুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় বন্দুকযুদ্ধেও ঘটনা ঘটেছে। আঞ্চলি দল গুলোর অবৈধ অস্ত্র মজুদের ফলে তাদেও নিজেদের মধ্যে শক্তি পরীক্ষার জন্য নিজেরা নিজেরা জানান দিচ্ছে। ফলে প্রতিণিয়ত গোলাগুলিতে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই বাঘাইছড়িতে আঞ্চলিক দলের গোলাগুলিতে ২ জন নিহত হয়। এছাড়া গত ২০ নভেম্বর রাঙ্গামাটির রাজস্থলীতে আঞ্চলিক দুটি দলের বন্দুকযুদ্ধে ৫ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও প্রশাসনের কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে আহত অবস্থায় একজনকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হলে সে গত ২২ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে মৃত্যু বরণ করেন। সম্প্রতি গত ২৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সকালে পার্বত্য অঞ্চলে ঢোকার পথে বিশাল একটি অস্ত্রের চালান ভারতীয় বিএসএফ এর হাতে আটকহয়। অস্ত্রের সাথে ৩ জন বাংলাদেশি উপজাতি নাগরিককে আটক করে বিএসএসফ। এসময় তাদের কাছ থেকে ৩০ টি অত্যাধুনিক একে-৪৭ ও ৮ হাজার গোলাবারুদ  উদ্ধার করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পার্বত্য অঞ্চলের একটি আঞ্চলিক দলের সশস্ত্র সংগঠনের জন্য এই অস্ত্র আনা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিএসএফের দায়িত্বশীল সূত্র। এর আগেও বহুবার পাহাড়ের আঞ্চলিক দলের অস্ত্রের চালান আটক করে বিএসএফ। রাঙ্গামাটির নারী নেত্রী টুকু তালুকদার বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ের অবৈধ রয়ে গেছে। অবৈধ অস্ত্রের কারণে পাহাড়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অস্ত্র উদ্ধার তৎপরতা বৃদ্ধি করে পাহাড়ের শান্তি ফিরিয়ে আনতে আঞ্চলিক দল গুলোর সাথে আলাপ আলোচনা করা প্রয়োজন বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন। রাঙ্গামাটির ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীর আলম মুন্না বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হলেও পাহাড়ে এখনো অবৈধ অস্ত্র রয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ করছে। তিনি বলেন, পাহাড়ের শান্তি প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনতে হলে পাহাড়কে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো বেশি তৎপরত হতে হবে। তিনি বলেন, প্রশাসনকে আঞ্চলিক সংগঠন সব গুলোকে এক চোখে দেখতে হবে। কাউকে ভালোবাসা দিয়ে কাউকে রক্তচক্ষু দেখালে হবে না। খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সভায় বলেন, পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্রধারীদের কারণে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের চলাফেরা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। পাহাড়ের মানুষকে কষ্ট দিয়ে অস্ত্রবাজি করে চাঁদাবাজি করে তারা তাদের আখের গোছানোর চেস্টা চালাচ্ছে। অস্ত্রবাজি ও সন্ত্রাস না করে সবাইকে সৎ পথে চলার আহ্বান জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App