ভ্যাট পদ্ধতি সহজ ও বোধগম্য করুন
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১০:৪২ পিএম
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন করদাতারা। এতে করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর আদায়ে ধস নেমেছে বলে খবরে প্রকাশ। এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবে ৪৯ লাখ করদাতার মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছেন মাত্র সাড়ে ৭ লাখ করদাতা। অর্থাৎ এখনো রিটার্ন জমা দেননি সাড়ে ৪১ লাখ আয়করদাতা। এমন অবস্থা অর্থনীতি খাতের জন্য সুখকর নয়। আগামী ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় শেষ হচ্ছে। এরপর জরিমানা দিয়ে জমা দেয়া যাবে। রিটার্ন দেয়ার জন্য সাধারণ করদাতাদের একটা সুবিধা ছিল। নভেম্বরের শেষ দিকে করমেলা অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশে করমেলা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় হয়। সাধারণ করদাতারা এ মেলায় ঝুটঝামেলাহীনভাবে রিটার্ন জমা দিতে পারতেন। এছাড়া ফরম পূরণেও তারা নানা সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। এসব কারণে সারাদেশের হাজার হাজার করদাতা লাইন ধরে রিটার্ন জমা দেন। এবার করোনার কারণে সে সুযোগ ছিল না। এক পাতার রিটার্ন ফরম চালু করলেও এ নিয়েও করদাতাদের মধ্যে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এনবিআরের ওয়েবসাইটে মিলছে না এই এক পাতার রিটার্ন ফরম। নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জমা দিতে না পেরে আইনি জটিলতায় পড়েছেন করদাতারা। কর সংক্রান্ত এমন জটিলতা নতুন নয়। হয়রানি এড়াতে অনলাইন পদ্ধতি চালু হলেও জটিলতা রয়ে গেছে। সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। সরকারের ভিশন-২০২১ ও ২০৪১ এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ সামনে রেখেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে অর্থ বরাদ্দ এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর নির্ধারণ করা হবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গত জানুয়ারি থেকে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব ও বিস্তৃতির ফলে সব দেশেই অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও চাহিদা বদলেছে- আমাদের দেশের বেলায়ও তা প্রযোজ্য। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার-আয়তন, বাণিজ্যসহ অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত আমলে নিলে নির্দিষ্ট রাজস্ব আহরণ কঠিন কিছু নয়। পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে এটা সম্ভব। সরকারের লক্ষ্য ছিল ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে আয় বাড়বে। কিন্তু ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলেও লক্ষ্যমাত্রার উন্নতি নেই। এতে ভ্যাট আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা আদায় কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে এনবিআরের জন্য। এমনি পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করের আওতা বাড়ানোসহ নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা খুবই শ্লথ গতির। ২০২১ সালে আমাদের লক্ষ্য মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে পৌঁছানো। এজন্য অপরিহার্য শর্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ থেকে ৮ শতাংশ নিশ্চিত করা। বিনিয়োগ বাড়াতে পারলেই কেবল এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। রাজস্ব আয় বাড়ানো এর শর্ত। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে দরকার করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি। সেখানে রাজস্ব প্রদানে সেবা নিশ্চিত, অনুক‚ল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আইন-কানুন সময়োপযোগী করা গুরুত্ব পাবে। পরিকল্পনাজনিত সমস্যা তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নানা জটিলতা। আছে দুর্নীতির অভিযোগও। এসব বিষয়ে সরকারকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে।