×

জাতীয়

কোন্দল সৃষ্টিকারীদের জন্য অশনি সংকেত!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২০, ০৯:১০ এএম

কোন্দল সৃষ্টিকারীদের জন্য অশনি সংকেত!
২ জেলার সভাপতি-সম্পাদককে অব্যাহতি *একই পদক্ষেপ আসছে আরো কয়েক জেলায়

দলের তৃণমূলে স্বেচ্ছাচারী ও কোন্দল সৃষ্টিকারী নেতাদের আর কোনো ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যেখানেই সাংগঠনিক স্থবিরতা, নেতাদের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারী ও দলীয় কোন্দল সেখানেই কঠোর পদক্ষেপ নেবে দলটি। সম্প্রতি সভাপতিমণ্ডলী ও কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তৃণমূলের উদ্দেশে এমন কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় চারদিনের ব্যবধানে দুটি গুরুত্বপুর্ণ ইউনিট নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জ জেলার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দিয়েছে দলটি। মাঠের জরিপ অনুযায়ী, এ তালিকায় থাকা আরো কয়েকটি জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, যেখানেই সাংগঠনিক স্থবিরতা। সংগঠনের আদর্শবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আসবে, সেখানেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নানা অভিযোগে গতকাল রবিবার নিজ নিজ পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপিকে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার অব্যাহতি দেয়া হয় নরসিংদী জেলার সভাপতি নজরুল ইসলাম হীরু ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন  ভূঁইয়াকে। গতকালের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশক্রমে ও সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বিধি মোতাবেক আওয়ামী লীগের সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাতকে স্বীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। একইসঙ্গে পরবর্তী

কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এডভোকেট কে এম হোসেন আলী (হাসান)-কে ভারপ্রাপ্ত ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানায়, গত শনিবার সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা শহরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। ফলে রবিবার দলটির সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাংসদ হাবীবে মিল্লাতকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের বাড়ি বেলকুচি উপজেলায়। গত শনিবারের সংঘর্ষে লিপ্ত একটি পক্ষ তার মদতপুষ্ট। কিছুদিন আগে হাবীবে মিল্লাতের অনুসারীদের সঙ্গে অন্য পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কামারখন্দ উপজেলায় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজের পছন্দের একজন প্রার্থীকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেন হাবিবে মিল্লাত। নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে নিজের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনেন তিনি। এই ঘটনার পর নৌকা সমর্থিত প্রার্থীসহ অন্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হাবিবে মিল্লাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। কয়েক মাস আগে মিল্লাতের অনুসারী হিসেবে পরিচিতদের হাতে কামারখন্দ উপজেলার হাজি কোরব আলী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এনামুল হক বিজয় খুন হন। সে সময়েও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতাকে সতর্ক করা হয়। এরপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পরামর্শে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতাকে অব্যাহতি দেন।

কোন্দলের অভিযোগে এর আগে গত ১৯ নভেম্বর নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়া হয়। জেলার নেতারা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর নজরুল ইসলাম হীরুর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, তৃণমূল নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও দুর্ব্যবহার এবং দলে আত্মীয়করণ, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। এসব কারণে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্ব›দ্ব সৃষ্টি হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেন।

এছাড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদককে শহর আওয়ামী লীগের সদস্য, শহর যুবদলের সহসভাপতিকে শহর যুবলীগের সভাপতি, ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদককে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি এমনকি জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হত্যা মামলার আসামিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়সহ নানা অভিযোগ হীরুর বিরুদ্ধে। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, হীরু একক প্রভাব খাটিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করে চলেছেন। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতামতকেও পাত্তা দেননি তিনি। হীরুর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তার অনুসারীরা শহরে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অপকর্ম করেছে। এমনকি জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও মফিজুল হক চৌধুরী সুমন দম্পতি এমপি হীরুর আশ্রয়-প্রশ্রয়েই নরসিংদীতে গড়ে তোলেন কেএমসি বাহিনী। বিনিময়ে এমপির দলীয় সব কর্মসূচিতে এই দম্পতি লোকবল হাজির করতেন।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, কোনো জেলায় কেউই দলের জন্য অপরিহার্য নয়। সভাপতিমণ্ডলী ও কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোনো জেলার সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের দুজনকেই অব্যাহতি দেয়া হবে। সব সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। তিনি বলেন, যেসব জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা পড়েছে। সেসব কমিটির অনিয়ম বা অসংগতি যদি জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঐকমত্যভাবে সমাধান করতে না পারেন। নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকেন সে ক্ষেত্রে দুজনকেই অব্যাহতি দেয়া হবে। কেননা, আওয়ামী লীগ বড় দল। এ দলে যোগ্য নেতা ও কর্মীর অভাব নেই। কেউ যদি নিজেকে দলের জন্য অপরিহার্য মনে করে, তাহলে সেটা তার ভুল ধারণা।

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, যেখানেই সাংগঠনিক স্থবিরতা আসবে অথবা সংগঠনের আদর্শবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকবে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের একটা মাঠের সার্ভে জরিপ আছে। সভাপতিমণ্ডলীর সভায় নেত্রী সেই জরিপ আমাদের হাতে দিয়েছেন। যারা দলের নাম ব্যবহার করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। যারা জনহিতকর কাজের বদলে জনগণকে ক্ষিপ্ত করছে। যাদের আচার-আচরণে মানুষ সন্তুষ্ট না। যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা বদ্ধপরিকর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App