দেশে মনিরদের সংখ্যা কম নয়!
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২০, ০৯:২১ পিএম
স্বর্ণ চোরাচালান দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব। একে ঘিরে গড়ে উঠছে একশ্রেণির অপরাধী, যা আইনশৃঙ্খলার প্রতি হুমকিস্বরূপ। বিপুল পরিমাণ অবৈধ স্বর্ণ আসছে আকাশপথে। দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে প্রায় প্রতিদিনই এসব স্বর্ণ ঢুকছে। মাঝেমধ্যে ছোট চালান ধরা পড়লেও বড় চালানগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে নিরাপদেই। রাজধানীতে গাড়িতে কিংবা বাড়িতে তল্লাশি করেও পাওয়া যাচ্ছে স্বর্ণের বার। সর্বশেষ গত শনিবার রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গোল্ডেন মনির নামে এক মাফিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তার বাড়ি থেকে বিদেশি অস্ত্রসহ অবৈধ ৬০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার (আট কেজি), ১০টি দেশের মুদ্রা, নগদ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা, ৫টি বিলাসবহুল গাড়ি ও মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। নব্বইয়ের দশকের দোকান কর্মচারী থেকে স্বর্ণ চোরাকারবারি ও ভ‚মিদস্যু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন মনির। তার সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার বেশি। মনিরদের নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। নিশ্চয় কারো প্রশ্রয়ে তারা বেড়ে উঠেছে। জানা গেছে, কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী থেকে স্বর্ণ চোরাকারবারি ও ভ‚মিদস্যু হয়ে ওঠে গোল্ডেন মনির গাউছিয়া মার্কেটের একটি কাপড়ের দোকানের সেলসম্যান হিসেবে কাজ করত। এরপর মৌচাকের একটি ক্রোকারিজ দোকান দেন তিনি। সে সময় লাগেজ চোরাচালানি চক্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন লাগেজ ব্যবসায়। দেশের বড় চোরাচালানি চক্রের তালিকায়ও তার নাম আসে। শুধু স্বর্ণ চোরাচালানই নয়, ভূমিদস্যুর মাধ্যমে সে অসংখ্য প্লটেরও মালিক হয়েছেন। এমন মনিরের সংখ্যা দেশে কম নয়। মনিররা একদিনে তৈরি হয়নি। বিমানবন্দরের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মনিরের একটি শক্তিশালী দুষ্ট বলয় তৈরি হয়েছে। প্রায় গণমাধ্যমের খবরে দেখা যায়, স্বর্ণ চোরাচালানের শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর। সিট, টয়লেট, লাগেজ এমনকি যাত্রীর জুতার সুকতলায়ও মিলছে স্বণের্র বার। চালান ধরা পড়ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, মাস্কাটের ওমান, সৌদি আরবের জেদ্দা, কাতার থেকে আসছে স্বর্ণের চোরাচালান। ঘটনা পরিক্রমায় দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণ চোরাচালান জব্দের সংখ্যা বেড়েছে। একটা হিসাবে পাওয়া গেছে, যে পরিমাণ স্বর্ণ চোরাইপথে ঢুকছে দেশে, আবার সেগুলো পাচারও হচ্ছে। বৈধপথে আমদানি কিংবা রপ্তানি হলে সরকারের রাজস্ব খাত আরো মজবুত হতো। দেশে অস্ত্র, মাদক, স্বর্ণ ও বিস্ফোরক চোরাচালানের বহু সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যাদের আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। এখনই যদি এদের নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে দ্রæত এই অপরাধ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে পড়বে। চোরাচালান প্রতিরোধ আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। সংশোধিত আইন অনুযায়ী চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের পর জামিন দেয়া হবে না। সংশোধিত আইনটি এখনো জারি হয়নি। প্রচলিত আইনের ফাঁকফোকরে গ্রেপ্তার হওয়ার পরও চোরাকারবারিরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। তাই আইনটি দ্রুত কার্যকর করা দরকার।