×

মুক্তচিন্তা

বাড়ছে কিশোর অপরাধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২০, ০৫:৪২ পিএম

বাড়ছে কিশোর অপরাধ

ফাইল ছবি

চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে মহামারি করোনার বিস্তাররোধকল্পে পৃথিবীর অপরাপর রাষ্ট্রগুলোর মতো বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে আশা করা হয়েছিল, মাসখানেকের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, খুলে দেয়া হবে বন্ধ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ৮ মাস গড়িয়ে গেলেও দেশ থেকে করোনা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। পৃথিবীর অনেক দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি, ইদানীং আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এহেন পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলছে না, শিশু-কিশোররাও তাদের নিজ শিক্ষা-কার্যক্রম থেকে ছিটকে পড়ছে দুঃখজনকভাবে। জড়িয়ে পড়ছে নানা অসামাজিক কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহ কাজে। এমনিতেই লেখাপড়ায় মনোনিবেশ স্থাপন করছে না, উপরন্তু অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজনে এখন তাদের হাতে এন্ড্রয়েড সেট শোভা পাচ্ছে। ক্লাসের প্রয়োজনে হাতে হাতে মোবাইল ফোন; যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেয়া হয়েছে। উঠতি বয়সের ছেলেদের ঘরে আটকে রাখা আরো বেশি কষ্টকর হচ্ছে, মিনি এ নতুন ডিভাইসের কারণে। মোবাইল হাতে পেয়ে কেউ কেউ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে অশ্লীল ভিডিও দেখছে। আবেগকে সংবরণ করতে না পেরে জড়িয়ে পড়ছে প্রেমে। এখানেই কি শেষ? কেউ বা একধাপ এগিয়ে বিয়ে-শাদি করে ফেলছে। মানছে না সরকার নির্ধারিত বয়সের পরিসীমা। কোথাও বা ছোট-বড় কিশোর গ্যাং সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনা এর জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করার ঘটনায়ও কিশোরদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আরেকটু পেছনে গেলে দেখা যাবে, বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল ১৪ জন কিশোর। সংঘটিত অপরাধমূলক ঘটনা আড়াল করতে বা অপরাধ পরবর্তী ঝামেলা থেকে বাঁচতে তারা রাজনীতি বা প্রভাবশালীদের কাঁধে ভর করছে। অসময়ে অঢেল অর্থের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত সুখ সইতে না পেরে মাদক সেবন করে বুঁদ হচ্ছে। দেশজুড়ে এমনতর ঘটনা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে প্রায়ই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দোষীদের গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হচ্ছে। সম্প্রতি ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আইনও জারি করা হয়েছে। একেকটা ঘটনা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নাড়িয়ে দিচ্ছে, দেখানো হচ্ছে জিরো টলারেন্স। অপরাধীর কোনো দল নেই বলা হচ্ছে। গ্রেপ্তার এড়াতে পারছে না এরা নানা অপকৌশল করেও। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সবার বাহবা পাচ্ছে। কিন্তু এতকিছুর পরও ভোরে ঘুম থেকে উঠে টিভি স্ক্রিনে তাকালে দেখা যায়, ধর্ষণ বা হত্যাকাণ্ডের নতুন খবর চাউর হচ্ছে। কোথাও যেন কী একটা গলদ রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের ভাবনাগুলোও আজ অসার প্রমাণিত হতে চলেছে। কোনোক্রমেই যেন থামছে না ঘৃণ্য এসব অপরাধের মাত্রা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু থাকলে দিনের সিংহভাগ লেখাপড়ার কাজে হয়তো ব্যস্ত থাকত তারা। আলালের ঘরের দুলাল যারা, তারা মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে।

পরিবারই সুশিক্ষা ও মানবিক গুণাবলি অর্জনের প্রথম সোপান। নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার দিকে কিশোরদের ধাবিত করতে হবে। দিতে হবে বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসহ সুকুমারবৃত্তি চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলেও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা যায় কিনা ভাবতে হবে। উঠতি বয়সি তরুণদের অস্বাভাবিক চুল কাটতে সরকারি ঘোষণা এবং সে আলোকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাইক অথবা কার নিয়ে অযাচিত এবং বেপরোয়া ঘোরাঘুরি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফ্যামিলি পুলিশিং ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজখবর রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও মুখ্য ভ‚মিকা রাখতে পারেন। পাঠ্যপুস্তক, নাটক, সিনেমা ইত্যাদি গণমাধ্যমে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং মনুষ্যত্ববোধ সৃষ্টি করবে, এমন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সর্বোপরি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং পারিবারিকভাবে চরিত্র হননকারী সবকিছুর বদলে মূল্যবোধ সৃষ্টিকারী শিক্ষা ও সংস্কৃতি চালু করতে হবে। তবেই শিশু-কিশোরসমাজ সমূহ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আব্দুল কালাম বলেছেন, ‘আমরা আজকের দিনটি উৎসর্গ করি যেন আমাদের শিশুরা একটি সুন্দর আগামী পেতে পারে।’ কথাটার তাৎপর্য অনুধাবন করে এর বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রধান শিক্ষক, প্রাইম স্টার একাডেমি শ্রীপুর, গাজীপুর। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App