ভূমি ও জলতরঙ্গ নাচ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২০, ০৯:১৫ পিএম
জলতরঙ্গ নাচ
দিলারা হাফিজ’র
ভূমি ও জলতরঙ্গ নাচ
সেদিন সন্ধ্যায় পৃথিবীও জন্মেছিলো আমারই সঙ্গে হেমন্তের শস্যোৎসবে
ক্ষীর পায়েসের মেলা বসেছিল
দোপাট্টা উড়িয়ে কালিগঙ্গা স্রোতে
ভেসে গেছে তার অববাহিকা
নবান্নের সুবাসেও কেঁদে ফিরছিল
ওপাড়ার নিরন্ন-অস্থির ক্ষুধা
নাগরদোলায় দুলছিল গন্ধরাজ
রাজ অশোক, বকফুল;
বেসুমার ছাতিম ছুটে এসেছিল বিশ্বভারতীর মাটি ছুঁয়ে
অগ্রহায়ণ মাস খুব ব্যস্ত ছিল
খৈ-মোয়ার সদ্ভাব ও সম্প্রীতি নিয়ে
জব্বারের লাঠিখেলা শেষে
পালা ও বিচার গানের বিচারে লালন এসে হাজির,
জারি সারি মুর্শিদী কেউ কম নয় কার’ চেয়ে,
পিঠেপুলির এই উৎসবে-
আফ্রিকার জরায়ুর জল কাটা সেই স্রোতে ভেসে
ভেসে এসেছিল আমার মতো অনেকেই,
সৃষ্টির অস্থির ব্যাকুলতা বুকে নিয়ে
তৃষ্ণার পরিপূরক কবি,
ততোদিনে সভ্যতার কিছু কালোমেঘ
উড়তে উড়তে দুই হাতে ভাসিয়েছে
দুর্মর আকাশ নীল,
মহাযুদ্ধের দুই বিষক্রিয়ায় হারিয়েছে দশ কোটি প্রাণ
নিখিল নাস্তির সন্দেহ ও অবিশ্বাসের বর্শা হাতে
পরস্পর মানুষ শূন্যতায় ছুড়েছে ধনুক-তীর
এইসব গাথা-স্মরণিকা পার হয়ে তবু
শীত ও উষ্ণতা মিলে জন্মবেদ এক নতুন কাহিনীস্রোত।,
আলোর-তমসা ঘিরে সভ্যতার দশক বিভাজন
ডুবে গেছে সূর্যাস্তের গোধূলিরাগে,
শিল্প ও স্বপ্নের অস্থিরতা বুকে নিয়ে আজও তবু
শব্দবন্যায় ভেসে যায় কবি ও কবিতা,
অনাদি স্রোতের প’রে এক নতুন ঠিকানা
সুর ও লাবণ্যের ঘর-দোর ছেড়ে
বাঁক বদলের নেশায় বাঁধে তার ঘর;
কার্পাস ফুলের তন্তুজাল ভাসিয়ে যমুনার জলে
পার হয়ে গেছে চর্যার ডোম্বী,
চির বিরহের বাঁশি কাঁদে জগতের প্রাণে
রাধা তবু রয়ে যায় বৃন্দাবনে,
যদিও কংসের নিষ্ঠুরতায় ভেসেছে দুক‚ল
স্রোতস্বিনী নদ ও নদীর আকাক্সক্ষা তবুও
ভাঙেনি অপর পারে দাঁড়ানো অশ্বত্থের মায়া
শস্যের অপত্র সম্ভাবনা নিয়ে অগ্রহায়ণ
শিয়রে দাঁড়িয়ে আছে আজো
চারচালা ঘরে সকালের ঢেউতোলা
রোদের রঙের মতো অনবদ্য ছিল সময়ের ঘড়ি
পানির উষ্ণতা ভেঙে প্রাণ প্রদীপ জরায়ু থেকে
পিছলে গড়িয়ে পড়েছিল চটের ছালায়,
মোরগফুলেরা ডেকে উঠেছিল আল্লাহ আকবর;
স্বরধ্বনি ব্যঞ্জনায় সুহাসিনী এক ধূপদানি হাতে
ডেকে এনেছিল সন্ধ্যামালতিকে;
বাঁশের নেইলে কাটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এক
আফ্রিকার মতো কেঁদেছিল মর্মের সুতোয়
পথের মতো বুক পেতে দিয়েছে যে বার বার
তাকেই ডেকে উঠেছিলাম মা মা বলে!!
৬ নভেম্বর, ২০২০
ট্রি লিয়াম পার্ক, টরেন্টো