×

জাতীয়

জনবল-সরঞ্জাম সংকটে ধুঁকছে ফায়ার সার্ভিস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২০, ০৯:২৩ এএম

জনবল-সরঞ্জাম সংকটে ধুঁকছে ফায়ার সার্ভিস
জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম সংকটে ধুঁকছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। ছোট অগ্নিকাণ্ডগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাপণ করতে পারলেও সংস্থাটির দুর্বলতা ফুটে ওঠে বড় অগ্নিকাণ্ডর বেলায়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতার দুর্বলতা আরো স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে গত ৫ নভেম্বর বিকেলে রাজধানীর ডেমরায় কোনাপাড়া মাদ্রাসা রোডে পাশা টাওয়ার নামে ১০তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডর পর সেটি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। ১৬ ইউনিটের ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে পুড়ে যায় ভবনটির ৬টি তলা। যদিও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সময় বিলম্ব হওয়ার পেছনে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়। কিন্তু আধুনিক সরঞ্জাম ও জনবল সংকটেই বিলম্ব হয় তাদের। শুধু এই একটি ঘটনা নয়, গত বছরের ২০ ফেব্রæয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডও একই বছরের ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে ঘটনাতেও হিমশিম খেতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসকে। অতিরিক্ত জনবল আনা হয় রাজধানীর বাইরে থেকেও। এদিকে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারাদেশেই বাড়ানো হচ্ছে ফায়ার স্টেশন। কিন্তু সেই হারে বাড়েনি জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম। ১০ বছর আগে সারাদেশে ২০৪টি ফায়ার স্টেশন থাকলেও বর্তমানে সারাদেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৪৩৬টি। অথচ বর্তমানে এ অধিদপ্তরের প্রাধিকারপ্রাপ্ত মোট জনবল ১৩ হাজার ১১০ জন। কর্মরত আছেন ১০ হাজার ৮৯৩ জন। যার মধ্যে ফায়ারম্যানের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোতে ৩৫ জন করে জনবল থাকার কথা। এরমধ্যে ফায়ারম্যান থাকার কথা ২২ জন। কিন্তু বাস্তবে ১৫-১৬ জনের বেশি ফায়ারম্যান নেই প্রথম শ্রেণির স্টেশনেও। একইভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোতে মোট জনবল থাকার কথা ২৭ জন করে। এরমধ্যে ফায়ারম্যান থাকার কথা ১৬ জন করে। কিন্তু এসব স্টেশনে ৮-১০ জনের বেশি ফায়ারম্যান নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে। অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের জনবল বাড়েনি। ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ৩০ হাজার জনবল প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ল্যাডার (মই) রয়েছে ২০টি। ঢাকায় রয়েছে মাত্র ৯টি। এরমধ্যে সম্প্রতি সর্বোচ্চ ৬৪ মিটারের দুটি ল্যাডার কেনা হয়েছে। এছাড়াও ৫৪ মিটার ও ২৭ মিটারের ল্যাডার রয়েছে। বিশেষায়িত গাড়িও বাড়ানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসে বিশেষায়িত গাড়ি এখন প্রায় ৬শ’টি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মনে করেন, ল্যাডারসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আরো প্রয়োজন। সূত্র আরো জানায়, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংকট নিরসনে সম্প্রতি জাম্বু কুশন, লাইট ডিউটি রেসকিউ বোট, ডাইভিং অ্যাপারেটাস, এয়ার কমপ্রেসর মেশিন, রিমোট কনট্রোল ফায়ার ফাইটিং ইউনিট, হেভি ডিউটি লাইট ইউনিট, টোয়িং ভিহিক্যাল, পোর্টেবল পাম্প, বিদ্রিং অ্যাপারেটাস ও স্মোক ইজেক্টরসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যুক্ত করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া) শাহজাহান শিকদার ভোরের কাগজকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর বেশিরভাগই চলমান অবস্থায় রয়েছে। যা বাস্তবায়িত হলে দেশে ফায়ার স্টেশনের মোট সংখ্যা হবে ৭০০-এর অধিক। এছাড়া অধিদপ্তরের নতুন কাঠামোতে ২৫ হাজারের অধিক জনবল কাঠামো প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে অধিদপ্তরের তেমন কোনো সংকট থাকবে না। পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জে ১০০ একর জমির ওপর ফায়ার একাডেমি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ফায়ার সপ্তাহ শুরু আজ : ‘প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রস্তুতি; দুর্যোগ মোকাবিলায় আনবে গতি’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে ফায়ার সপ্তাহ-২০২০। ২১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী এই সপ্তাহ উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মিরপুরের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে এর উদ্বোধন করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেবেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, ফায়ার সার্ভিস উপলক্ষে আমি এ অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। অগ্নিনির্বাপণ, অগ্নিপ্রতিরোধ, উদ্ধার ও অন্যান্য সেবা কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিতকরণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশব্যাপী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ পালনের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালনকালে নিহত ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। অন্য এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা ফায়ার সার্ভিস সপ্তাহের সাফল্য কামনা করে বলেন, আমি আশা করি, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নতুন উদ্যমে সাহস, সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন এবং নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সহায়তা করবেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহ পালনের মূল লক্ষ্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ত করা। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারাদেশে ৩ দিনব্যাপী নানা ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা। ২১ নভেম্বর ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে পদক বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সপ্তাহ কার্যক্রমের সমাপ্তি হবে।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App