×

জাতীয়

আদালতের রায় বাস্তবায়ন হয়নি দেড় বছরেও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২০, ০৯:০৬ এএম

আদালতের রায় বাস্তবায়ন হয়নি দেড় বছরেও

ফাইল ছবি

আবাসিক স্থাপনা, স্কুল, হাসপাতালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে মোবাইল ফোনের টাওয়ার (বিটিএস) অপসারণে উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত একটি টাওয়ারও সরানো হয়নি। বরং টাওয়ারগুলোতে রেডিয়েশনের মাত্রা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে দাবি করে বিষয়টিকে বৈধতা দিচ্ছে খোদ টেলিনিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর বিকিরণের (রেডিয়েশন) বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২০১২ সালে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। মূলত একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদের ভিত্তি ধরে ওই রিটটি করা হয়। গত বছরের ২৫ এপ্রিল ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে রিটের রায় দেন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। পরে ১৭ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। ১১টি নির্দেশনার দ্বিতীয় দফায় স্পষ্টভাবেই বলা হয়, বাসার ছাদ, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কারাগার, খেলার মাঠ, জনবসতি এলাকা, হেরিটেজ ও প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকাসহ জনগণের ব্যাপক সমাগম স্থানে মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসানো যাবে না। আর যেগুলোতে বসানো হয়েছে সেগুলো অপসারণ করতে হবে। এছাড়া টাওয়ারের রেডিয়েশনের মাত্রা ১০ ভাগের এক ভাগে নামিয়ে আনা, টাওয়ারের রেডিয়েশন মাত্রা বিটিআরসি এবং লাইসেন্সি ২ জনকেই স্বাধীনভাবে আইটিইউ এবং আইইসির মান অনুসারে পরিমাপ করা, স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসির মনিটরিং সেল গঠন প্রভৃতির নির্দেশনাও দেয়া হয় রায়ে। কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন এমটব ও বিটিআরসি শুধু রেডিয়েশন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেই দায় সারে। এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তাবায়ন নিয়ে আমরা আবারো আদালতের স্মরণাপন্ন হব। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি বিলম্বিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো অবহেলার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। অন্যদিকে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিটিআরসি মোবাইল টাওয়ার থেকে নিঃসরিত রেডিয়েশনকে নিরাপদ বলছে। কিন্তু আমরা মনে করছি তাদের এই বক্তব্য সত্য নয়। কারণ বিটিআরসি আর মোবাইল ফোন অপারেটররা এক হয়ে গেছে। তারা জনগণের স্বার্থে কথা বলছে না। রায়ে কিছু স্থান থেকে টাওয়ার অপসারণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেটা না করে দৃষ্টি ফেরানোর জন্য এর রেডিয়েশন মাত্রা নিয়ে কথা বলছে। তিনি জানান, রেডিয়েশন পরীক্ষার জন্য তারা কিছু যন্ত্রপাতি এনেছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিজেরাই বিভিন্ন টাওয়ারের রেডিয়েশন পরিমাপ করবেন। এছাড়া নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে পরীক্ষা করা হলেও আসল চিত্র পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি এক জরিপ প্রকাশ করে বিটিআরসি। এতে কমিশন জানায়, দেশের মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ নির্দিষ্ট সীমার নিচে রয়েছে। তাই মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘টাওয়ার রেডিয়েশনের মানদণ্ড ও সাম্প্রতিক জরিপ’ শীর্ষক ওই আলোচনায় বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মো. আমিনুল হাসান বলেন, টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি আছে, এটা ভিত্তিহীন। এটা নিয়ে ভয়েরও কিছু নেই। দেশের ৬টি বিভাগে ৭০টি টাওয়ার নিয়ে ওই জরিপ পরিচালনা করে বিটিআরসি। অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল এমটব। সেখানে টাওয়ার বিকিরণ বন্ধের দাবি জানানো কোনো পক্ষকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পরে ওই জরিপকে অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। সংগঠনটি জানায়, দেশে বিটিএস রয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার। সেখানে মাত্র ৭০টি পরীক্ষা করেছে বিটিআরসি। মোট বিটিএসের হিসেবে যা মাত্র শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ। ফলে সব টাওয়ারকে শতভাগ নিরাপদের দাবি করা সঠিক হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App